কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত - কুরবানী সম্পর্কে হাদিস সুস্পষ্টরুপে জানুন
শ্রেষ্ঠ জিকিরকোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস সম্পর্কে জানতেই হবে প্রিয় পাঠক। কারণ, সামনে কয়েকদিন পর কুরবানী আসতে চলেছে। কুরবানী হচ্ছে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। আর এই কোরবানি পৃথবীর প্রথম মানুষ ও আদি পিতা নবী হযরত আদম আঃ থেকে শুরু হয়েছে।
কোরবানী সবার উপর নয় যার সামর্থ রয়েছে সে দিবে বাকীরা না দিলে কোনো পাপ হবে না। তো চলুন জেনে নিই কুরবানী সম্পর্কে আয়াত ও হাদিসগুলো সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে।
পেজ সূচীপত্রঃ কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলো স্পষ্টরুপে জানুনকোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত বিষয়টি স্পষ্ট করছি। কুরবানীর সম্পর্কে আল কুরআনুল মাজীদে কোরআনের আয়াত খুব বেশি নাই তবে যে আয়াতগুলো রয়েছে সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে, সূরা কাউসার এর দুই নম্বর আয়াতের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেছেন, আয়াতটি হচ্ছে দুই নম্বর, আর এই আয়াতটিতে মহান রাব্বুল আলামিন তার নবীকে লক্ষ্য করে বলছেন,
আরো পড়ুনঃ নফল রোজার ফজিলত এর যত আলোচনা বিস্তারিত জানুন
হে নবী আপনি সালাত বা নামাজ আদায় করুন আপনার রবের সন্তুষ্টির জন্য এবং কোরবানি বা ত্যাগ বা উৎসর্গ করুন। এই আয়াতের দ্বারা বুঝা গেল আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরবানী করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা হজ্জ এর ৩৭ নম্বর আয়াতের মধ্যে বলছেন, আল্লাহর কাছে কখনোই পৌঁছে না সেই পশু যে পশু কুরবানীর জন্য যবেহ করা হয় তার গোশত
এবং রক্ত, তবে আল্লাহর কাছে যেটা পৌঁছে সেটা হচ্ছে আল্লা ভীতি বা তাক্বওয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন কারীমের আট নম্বর পারার মধ্যে বলছেন, হে নবী আপনি আপনার জাতিকে বলে দেন যে, হে আমার উম্মত তুমি বলো বা তোমরা বলো, নিশ্চয় আমার সালাত বা নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ সবকিছু হচ্ছে একমাত্র মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার খুশির জন্য।
তাহলে এই আয়াত থেকে বুঝা গেল যে আমরা যে এবাদত টাই করবো সেটা যেন হয় আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য, আর সেই এবাদতটা হোক নামাজ, কোরবানি অথবা অন্যান্য যেকোনো এবাদত হোক না কেন? এছাড়াও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ৬ নম্বর পাড়ায় সূরা মায়েদার মধ্যে কোরবানির সম্পর্কে যে আয়াতগুলো রয়েছে সেগুলোতে হযরতে আদম আলাইহিস সালামের দুই সন্তান হাবিল ও কাবিলের কুরবানী সম্পর্কে বলেছেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এখানে সূরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতের মধ্যে বলছেন, আল্লাহর নাবিকে বলতে নির্দেশ দেয়া হলো, হে নবী আপনি আপনার উম্মতদেরকে পড়ে শুনান যে যখন তারা অর্থাৎ হাবিল ও কাবিল কুরবানী করল তখন একজনের কোরবানি কবুল করা হলো আর অপরজনের কবুল করা হলো না, এক্ষেত্রে কাবিল বড় ছিল সে বলেছিল আমি তোকে হত্যা করব, আর হাবিল সে ছোট ছিল সে বলেছিল যে হে আমার ভাই নিশ্চয়ই কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তাক্বওয়াশীলবা আল্লাহ ভীরুদের কুরবানী কবুল করে থাকেন।
এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট রূপে জানা গেল বুঝা গেল, যারা একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে কুরবানী করে তার কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয় আর যারা জুলুম বা অন্যায় করে এবং আল্লাহকে ভয় করে না তাদের কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। তার মানে কুরবানি কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা বা আল্লাহ ভীতি। আদম আলাই সালাম এর সময়ে কুরবানী কবুল হওয়ার আলামত ছিল এরকম যে, কুরবানীর প্রাণী টাকে পাহাড়ে রেখে আসা হতো যার কোরবানি কবুল হতো আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে একটা আগুন এসে তার কুরবানী টাকে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিত।
কুরবানী সম্পর্কে হাদিস
কুরবানী সম্পর্কে হাদিস এখন পর্যায়ক্রমে লিখছি। সম্মানিত পাঠক শুনুন, কুরবানী সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে হাদিসটি আপনার সামনে উল্লেখ করব সেটি হচ্ছে এটি, আর হাদীসটি ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার সহীহ বুখারীতে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একজন সাহাবী বারা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের জন্য কুরবানীর দিনের কর্তব্য বা করণীয় হচ্ছে,
আমরা সর্বপ্রথমে দুই রাকাত ঈদের সালাত আদায় করব এরপরে আমাদের করণীয় হচ্ছে কুরবানী করা। এক্ষেত্রে যে বা যারা ঈদের নামাজের আগে কুরবানী করবে তাদের কুরবানী কবুল হবে না আর যে পরে কুরবানী করবে তার কুরবানী কবুল হওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এক্ষেত্রে একজন সাহাবী নাম তার আবু বুরদা ইবনে নিয়ার তিনি কুরবানী নামাজের আগে করেছিলেন।
ফলে এ খবরটি আল্লাহ রাসূলের কাছে পৌঁছলে, আল্লাহ রাসূল (সা) তার ক্ষেত্রেই শুধু ব্যতিক্রম বলেছিলেন যে এটা শুধু তোমার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, আর তোমার পরে অন্য কারো ক্ষেত্রে এরকম করলে প্রযোজ্য হবে না। তাই আমাদের সতর্ক হয়ে যেতে হবে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা যাবে না। আরো একটি হাদিস, সহীহ বুখারীর কিতাবুল আযাহীতে রয়েছে যে, ওকবাহ ইবনে আমের আল জোহানী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বর্ণনা,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম একদা সাহাবাদের মাঝে কুরবানীর পশু বন্টন করে দিলেন, এক্ষেত্রে ওকবাহ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর ভাগে একটা বকরির বাচ্চা পড়েছিল। ফলে তিনি বলেছিলেন আল্লাহর রাসূল (স) আমার ভাগে বকরি বা ছাগলের বাচ্চা পড়েছে, রাসূল (স) বলেছিলেন যে তুমি এটি কুরবানী হিসেবে যবেহ বা জবাই করে দাও। এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেল কোরবানি বুকরীর বাচ্চা দ্বারাও করা যাবে।
তবে ফকিহগণের মতে বকরীর বাচ্চার বয়স যদি ১ বছর হয় অথবা দাঁত বের হয় তাহলে কুরবানী করা যাবে। আরো একটি হাদিস বোখারীর এক হাদিসে আছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জায়গাতেই কুরবানী করতেন। তার মানে অত্র হাদিস দ্বারা বুঝা গেল, কুরবানী করতে হবে কুরবানী সবাই যে জায়গায় করে সেখানে। আরো একটি হাদিস, যে হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি মেষ দ্বারা কুরবানী করতেন। হাদীসটি আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন। আর আনাস বলছেন আমিও দুইটি মেছ দ্বারা কুরবানী করতাম। হাদীসটি দ্বারা বুঝা গেল দুইটি মেয়ের দ্বারা কুরবানী করা ভালো।
আরো একটি হাদিস, সহি বুখারীরতে রয়েছে যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর সময় বা কুরবানীর দিনে সাদাকালো রংবিশিষ্ট দুটি ভেড়ার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং নিজ হাতে কোরবানি করলেন। হাদিসটি দ্বারা বুঝা গেল নিজের কোরবানি নিজের হাতে দেওয়া ভালো। আরো একটি হাদিস, আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলছেন যে আমার এক মামা ছিল যিনি ঈদের নামাজের আগেই কুরবানী করে ফেলেছিল বললেন যে তোমার কুরবানী কবুল হবে না,
তুমি শুধু তোমার নিজের ও পরিবারের জন্যই যবেহ বা জবাই করলা, আল্লাহর জন্য করো নাই। তো তিনি বললেন যে আমার বাড়িতে একটা ছাগলের বাচ্চা রয়েছে সেটি কি কুরবানী করতে পারবো তখন আল্লাহর রাসূল বললেন এটি শুধু তোমার জন্য প্রযোজ্য হবে, এরপরে আর কারো জন্য প্রযোজ্য হবে না। মুহাদ্দিসগন ব্যাখ্যায় বলেছেন বকরির বাচ্চাটার বয়স দুই মাস কিংবা ৫ মাস অথবা দুধের বাচ্চা ছিল।
কুরবানীর ইতিহাস ও শিক্ষা
কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এই শিরোনামটির সাথে কোরবানির ইতিহাস ও শিক্ষা বিষয়টিও সম্পৃক্ত। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি। কুরবানীর ইতিহাস এখানে সংক্ষিপ্ত রূপে বলছি। কুরবানীর বিধান আদি পিতা ও প্রথম নবী হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বিস্তৃত।
আর এই আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুরবানীর বিষয়টি কোরআনের মধ্যে সূরা মায়েদায় বর্ণিত হয়েছে। হযরতে আদম আলাইহিস সালামের কোরবানির বিষয়টা এরকম ছিল যে তার কুরবানীর গোশত খাওয়ার কোন বিধান ছিল না। আদম আলাইহিস সালাম এর সময় কুরবানীর পশু পাহাড়ে দিয়ে আসা হতো যার কুরবানী কবুল হত সেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে পুড়ে ছাই হয়ে যেত আর যার কোরবানি কবুল হতো না সেটি অক্ষত থাকতে।
এরপরই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর কোরবানির বিধানটা স্বপ্নযোগে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে জানিয়েছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে কয়েকবার স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে তুমি তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটা কে আল্লাহর জন্য কোরবানি কর। আর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ছিল শেষকালে যে বাচ্চাটি হয়েছিল হযরত ইসমাইল (আ) সেটি বা তিনি।
তাই একটা লম্বা প্রসেস পর একসময় তিনি(ইব্রাহিম আঃ) হযরত ইসমাইল আলাইহিস সাল্লামকে কুরবানী করার জন্য সৌদি আরবের মক্কার মিনায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় ফলে তিনি শয়তানকে বেশ কিছু কংকর বা পাথর মেরেছিলেন। কাজেই হজের সময় হযরত ইব্রাহিম আলাই সালামের সম্মানার্থে তার সুন্নত স্বরূপ পাথর মারার বিষয়টাকে রেখে দেওয়া হয়েছে।
এরপরে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে মিনা বাজার এ নিয়ে গেলেন এবং সেখানে তিনি কুরবানী করার চেষ্টা করলেন। এক সময় আল্লাহ তা'আলা জান্নাত থেকে একটি দুম্বা পাঠায়ে দিলেন, ফলে ইসমাইল আঃ কুরবানী না হয়ে সেই দুম্বাটি ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর মাধ্যমে জবেহ হয়ে গিয়েছিল। আর এই কুরবানীর এই সুন্নাত বা নিয়মটা আমাদের জন্য বিশেষ করে আমাদের সামর্থ্যবানদের জন্য ওয়াজিব বা আবশ্যক হয়ে গেল।
কুরবানির বিভিন্ন শিক্ষা রয়েছে যার মধ্যে একটি হচ্ছে কুরবানী আমাদেরকে তাকওয়া বা আল্লাহ-ভীতি শিখায়ে দেয়। এরপরে কুরবানী একসাথে কাজ করতে শিখায়। কুরবানী ত্যাগ শিক্ষা দেয়। কুরবানী বিসর্জন দেওয়া শিখায়। এবং কুরবানী গরীব মানুষদের দান দক্ষিণা করতে শিখায়। কুরবানীর সবাইকে একসাথে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করতে শিক্ষা দেয়। ভ্রাতৃত্ব শিক্ষা দেয়। নিজের খাওয়া এবং অপরকে খাওয়ানোর জন্য শিক্ষা দেয়। কুরবানী আমাদেরকে মানুষকে ভালবাসতে শেখায় এবং ভালোবেসে কিছু দিতে শিখায়।
কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা
কুরবানী সম্পর্কে আলোচনা করছি। সম্মানিত পাঠক, কুরবানী সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কুরআন মাজিদের আয়াত এবং আল্লাহর রাসূলের অসংখ্য হাদিস থেকে বেশ কিছু হাদিস এবং কুরবানীর ইতিহাস এবং শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছি। যে আলোচনাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে কুরবানী সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা হয়ে যাবে।
এরপরেও আরো কিছু আলোচনা আলোকপাত করার চেষ্টা করছি। প্রিয় পাঠক, আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালা সূরা হজ্জের মধ্যে কোরবানি সম্পর্কে যে আয়াতটি বলেছেন সেটি হচ্ছে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি আয়াত। যেখানে বলা হয়েছে কুরবানীর পশু বা জন্তুর বা প্রাণীর গোশত এবং রক্তগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে পৌঁছায় না বা যায় না, শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছায় আল্লাহ ভীতি বা তাকওয়া।
আর তাকওয়া টা হচ্ছে এমন এক জিনিস যেটি একজন মানুষের অন্তরের ভিতরে সঞ্চার হয় বা সৃষ্টি হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকওয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন যে এই তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি মানুষের কলব তথা হৃদয়ে থাকে বলে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেছেন। তাই যার হৃদয় যত পরিষ্কার বিভিন্ন পাপ পঙ্কিলতা থেকে এবং শিরক ও বিদআত থেকে সে তত বেশি আল্লাহ ভীরু বান্দা।
আল্লাহ্ সূরা হুজুরাতের মধ্যে বলেছেন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ঐ ব্যক্তি যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়া রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহকে যে বেশি ভয় করে সেই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী। বুকের ভিতরে তাকওয়া ধারণ করেই আমাদেরকে কুরবানী করতে হবে, তাহলেই এই কুরবানী আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল ও মঞ্জুর হবে অন্যথায় হবে না। তাই তাকওয়াটা এখানে ফ্যাক্ট এবং মূল বিষয়।
কুরবানী কি কি প্রাণী দিয়ে দেওয়া যায়?
কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এই হেডিং টির সাথে কুরবানী কি কি প্রাণী দিয়ে দেওয়া যায় এটিও সম্পৃক্ত। তাই এখন বলব যে আপনি কি জন্তু বা পশু বা প্রাণী দিয়ে কোরবানি করবেন। কুরবানী বিভিন্ন পশু বা জন্তুর মাধ্যমে দেওয়া যায়। যেমন ছাগল, খাসি, ভেড়ি বা মেষ, দুম্বা, গরু এবং উট ইত্যাদির মাধ্যমে কুরবানী করা যাবে। তবে এ প্রাণীগুলো নিরেট খাঁটি ও নিখুঁত হতে হবে।
এক্ষেত্রে হাদিসে রয়েছে যে, যে কুরবানিটা করা হবে সেটা যেন জীর্ণ শীর্ণ বা দুর্বল না হয় অর্থাৎ যেন শক্তিশালী হয়। আবার বলা হয়েছে কুরবানীর জন্তু যেন স্পষ্ট ল্যাংড়া, স্পষ্ট কানা এবং স্পষ্ট কান কাটা না হয়। বিষয়গুলোর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে কোরবানিকে পশু সুন্দরভাবে হাঁটতে পারতে হবে, সুন্দর দৃষ্টি শক্তি থাকতে হবে, এবং সুন্দর যেন তার কানগুলো হয় কোন খুঁত না থাকে ইত্যাদি। অর্থাৎ যে পশুটা আপনি জবেহ করবেন সেটি যেন একেবারে বিশুদ্ধ এবং তাজা সতেজ শক্তিশালী হৃষ্টপুষ্ট ইত্যাদি হয়ে থাকে।
আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর জন্য একটি পশু জবেহ করবেন সেটি যদি দূষণীয় হয় বা নিখুঁত না হয়, তাহলে এটি যেন কেমন হয়ে গেল না। আপনি আল্লাহকে খুশি করার জন্য একটা জিনিস বিসর্জন দিচ্ছেন এবং তার রক্ত প্রবাহ করছেন যেটির মাধ্যমে তাঁকে রাজি-খুশি করবেন আর সেটিই দোষী হয়ে যাচ্ছে। যে জিনিসটা আল্লাহকে দিবেন, আল্লাহর রাহে কুরবানী করবেন, সেটি আপনার জীবনের চেয়েও বেশি সুন্দর বেশি ভালোবাসার এবং বেশি খাঁটি হতে হবে। তাই দোষমুক্ত প্রাণী কুরবানী করুন। তাহলে আপনি আল্লাহকে খুশি করতে পারবেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনিও খুব খাঁটি এবং বিশুদ্ধ উপহার পাবেন ইনশাআল্লাহ।
কুরবানীর ইতিহাস
ইব্রাহিম আঃ এর কোরবানির ইতিহাস
কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত বিষয়টির সাথে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কুরবানীর ইতিহাস বিষয়টি জড়িত। দুনিয়াব্যাপী মুসলমানেরা জানে যে কুরবানীর ইতিহাসটা হয়তো ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর থেকে সুন্নাত স্বরুপ আমাদের কাছে এসেছে। প্রিয় পাঠক, ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর থেকে কুরবানীর ইতিহাসটা ইতিমধ্যেই আমরা আলোচনা করেছি।
এরপরেও বলতে চাচ্ছি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ছিলেন একজন নবী এবং তিনি সেই সময়ে একমাত্র মুসলমান ছিলেন এবং কঠিন সময় তার ওপর দিয়ে পার হয়েছিল। তিনি হযরতে সারা আলাইহাস সালামকে সর্ব প্রথমে বিয়ে করেছিলেন, এরপর হযরত হাজেরা আলাইহাস সালামকে বিয়ে করেছিলেন।
হযরতে হাজিরা আলাইহিস সালামের পেট থেকে ইসমাইল আলাইহিস সালাম হয়েছিলেন, আর এরপরে পরবর্তী সময়ে হযরতে সারা আলাইহিস সালামের পেট থেকে ইসহাক আলাইহি সালাম হয়েছিলেন। ইসহাক আলাইহিস সালামের ছেলে ছিলেন হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যার ছেলে ছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। হযরতে ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশধর কে বলা হয় বানু ইসরাইল।
ইসমাইল আলাহিসসালামের থেকে আমাদের নবী শেষ নবী বিশ্বনবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশ নামা এসেছে। হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম ছিলেন জাতির পিতা। হযরত আদম আলাই সালাম ছিলেন আদি পিতা। তাই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের এত কঠিন কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল যার কারণে তিনি অত্যন্ত সম্মানিত একজন নবী ছিলেন।
আর তার মাধ্যমেই কোরবানির বিষয়টা আমাদের কাছে আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য আমাদের তাকওয়ার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এসেছে। কুরবানীতে পাস করতে হলে বা কোরবানিটা আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে হলে বা কবুল করাতে হলে সেই জন্য আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নিষেধগুলোকে বর্জন করা এবং আদেশগুলোকে মেনে নেওয়া এবং তদানুযায়ী আমল করা।
কুরবানি কি ফরজ
কুরবানী কি ফরজ বিষয়টি এখন আলোকপাত করছি। প্রিয় দর্শক শ্রোতা ও পাঠক, কোরবানির হুকুম কি এটি ফরজ নাকি ওয়াজিব নাকি সুন্নতে মুয়াক্কাদা বিভিন্ন মতামত রয়েছে। একটা মত হচ্ছে কোরবানি করা হচ্ছে ওয়াজিব বা আবশ্যক। আরবি অর্থগত দিক থেকে ফরজ এবং ওয়াজিব শব্দ দুইটির অর্থ একই অর্থাৎ আবশ্যক। তাই বলা চলে বাংলা অর্থগত দিক থেকে যে কোরবানি করা হচ্ছে ওয়াজিব বা ফরজ বা আবশ্যক।
আরো পড়ুনঃ যাকাতের গুরত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে যত মর্মকথা বিস্তারিত জানুন
আরবি পরিভাষাগত দিক থেকে প্রকৃতপক্ষে কুরবানী করা হচ্ছে ওয়াজিব এটাই বলতে হবে। তবে কেউ বলছেন যে ওয়াজিব হচ্ছে ফরজের প্রায় কাছাকাছি। তাই যেটাই ওয়াজিব সেটাই ফরজ। ওয়াজিব এবং ফরজের ভিতরে কোন পার্থক্য নেই। কারণ ইসলামে দুইটি বিধান একটা হচ্ছে ফরজ আর একটা হচ্ছে নফল। তবে ফকিহ বা ইসলামী ফিকহ গবেষকগণ যারা ইসলামের বিভিন্ন বিষয় কুরআন এবং হাদিস থেকে বুঝে ফতোয়া বের করেন তারা বলছেন যে ফরজ এক জিনিস আর ওয়াজিব হচ্ছে আরেক জিনিস একটু পার্থক্য আছেই।
আবার কেউ বলছেন যে কুরবানী করা হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ এমন সুন্নাত যে সুন্নাতটা বর্জন করলে গুনাহগার হতে হবে। কুরবানী বিষয়টি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিদের জন্য ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যাদের পরিবারের খরচ ব্যতীত অবশিষ্ট কিছু টাকা পয়সা রয়েছে।
আর এই অবশিষ্ট টাকার পরিমান টা কি হবে? এক্ষেত্রে কেউ বলছেন যে স্বর্ণ-রুপার বর্তমান দর অনুযায়ী ৫০ থেকে ৪ লাখ টাকা নিজের অধীনে থাকলেই কুরবানী দিতে হবে। হাদিসে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সমর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানির দেবেনা সে যেন ঈদগাহে না যায়। অর্থাৎ সমর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও কুরবানী যারা করবে না তাদেরকে একটি ধমক দেওয়া হয়েছে। সামর্থ্য থাকলেই কুরবানী করুন এতে আল্লাহতালা অনেক সন্তুষ্ট হবেন এবং আল্লাহ ভীতি অর্জন হবে।
কুরবানি কী?
কুরবানী কি বিষয়টি এখন বলা হচ্ছে। প্রিয় পাঠক, কুরবানীর পরিচিতি বা সংজ্ঞা হচ্ছে, যে এমন বস্তু বা প্রাণী বা জন্তু বা পশু যেটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যবেহ করা হয় বা তার প্রাণ বিসর্জন দেয়া হয় সেটাই কোরবানি। এই কুরবানী প্রত্যেক মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানী বুঝদার সমর্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
অর্থাৎ ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে যে সমর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী দিতে না চাহিলে বা না দিলে ওই ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে অনেক বড় পাপী বা গুনাহগার হতে হবে। কাজেই সুধী, আপনি যদি ইসলাম প্র্যাকটিস করেন ইসলামের নিয়ম নীতি মানেন আল্লাহকে ভয় করেন এবং কুরআন ও হাদিসের কথা মেনে চলতে চান, তাহলে আপনাকেই বলতে চাচ্ছি যে আপনার সামর্থ্য হলেই আপনি কুরবানী করুন।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে সূরা কাউসার এর দ্বিতীয় আয়াতে বলছেন যে হে নবী আপনি আপনার উম্মতদেরকে বলে দিন, জানিয়ে দিন যে তারা যেন আল্লাহর ওয়াস্তে নামাজ পড়ে এবং কুরবানী করে কথাটি আদেশ দিয়ে বলা হয়েছে। যদিও আমি এখানে থার্ড পারসন করে বললাম। তাই শুধু গোস্ত খাওয়ার জন্য নয়,
যেহেতু গোশত এবং রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না শুধুমাত্র আপনার তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়টাই আল্লাহর কাছে পৌঁছবে। তাই আল্লাহর ভয় নিয়ে কুরবানীর জন্তু রেডি করুন এবং ভালোবেসে লালন পালন করুন এবং ১০ ই জিলহজ্জ থেকে ১১, ১২ অথবা ১৩ জিলহজ্জের মধ্যেই কুরবানী করুন। কারণ, জিলহজ্জ মাসের ৪ দিনের মধ্যেই কুরবানী হয়ে থাকে অর্থাৎ ১০-১১-১২ এবং ১৩ তারিখে।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url