৮ টি জান্নাতের নাম অর্থসহসিজদার ক্ষমতা কতটুকু বিষয়টি জানতে এখানে এসেছেন তাই না? সিজদা মসুলিম মানব
জীবনের আল্লাহর কাছাকাছি যাওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম। সিজদা করে একজন মুসলিম নিজের
সাথে রবের সম্পর্ক তৈরী করতে পারে।
কুরআন ও হাদিসে সিজদার অনেক ফজিলত রয়েছে। নিম্নে সিজদা করার যথার্থ পদ্ধতি ও সময়
এবং গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করছি। তো চলুন দেরি না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
পেজ সূচীপত্রঃ
সিজদার ক্ষমতা কতটুকু
সিজদার ক্ষমতা কতটুকু বিষয়টি এখানে লিখছি। সিজদা শব্দটিকে সিজদাহ, সাজদা আবার
সাজদাহ ও বানানে ও বলা যায়। সিজদা শব্দটি আরবী যার শাব্দিক অর্থ নত করা বা মাথা
নত করা। সিজদা একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিবেদিত একটি ইবাদাতের শ্রেষ্ঠাংশ। যদিও
জান্নাতে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা সহ ইবলিস কে আদম আঃ কে সিজদা করতে বলেছেন। তবে
ফেরেশতারা সিজদা করলেও ইবলিস অহংকার বশতঃ সিজদা করেনি। আদম কে সিজদা করাটা ছিল
সম্মান প্রকাশের একটি মাধ্যম ছিল।
পরবর্তীতে ইবলিস অত্যাধিক ইবাদতের ফলে অনেক শ্রেষ্ঠ একজন নেক্কার ও ইবাদতগার ছিল।
কিন্তু একটি সিজদা অস্বীকার করার কারণে সে যালিম, কাফির ও অভিশপ্ত হয়ে গেল। বুঝা
গেল সিজদার ক্ষমতা কতটুকু। ফেরেশতারা আল্লাহর ফরমান মানার কারণে আরো সম্মানিত
হলেন আর ইবলিস বিতাড়িত শয়তান হয়ে গেল অর্থাৎ জান্নাত থেকে লাঞ্চনার সাথে তাকে
বহিষ্কার করা হলো।
সিজদার ক্ষমতার একটি রুপ হচ্ছে সিজদা স্রষ্টার কাছে সম্মান বা মর্যাদা পাওয়ার
অধিকারী করে। এ ক্ষেত্রে ইবলিস শয়তানকে জান্নাত কে বিতাড়িত করা হয়েছে। কারণ, সে
সে করতে অমান্য করেছিল যখন তাকে সিজদার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আল্লাহর পক্ষ
থেকে। তাই আদম সন্তান যখন সেজদা করে তখন ইবলিস ঈর্ষান্বিত হয় মানে তার ইগোতে
লাগে, এমনকি সে লজ্জা এবং অমর্যাদা অনুভব করে কাঁদতে থাকে।
এ মর্মে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন হাদিসটি হযরত আবূ হুরায়রাহ থেকে বর্ণিত, তো
হাদিস হলো যে, যখন আদম সন্তান কোরআন এর কোনো একটি সিজদার আয়াত পড়ে এবং বিধি
মোতাবেক সেজদা করে তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে সরে যেতে লাগে আর বলে, হায় আফসোস! আদম
সন্তান আদেশ পাওয়া মাত্র সিজদা করে আর আমাকে সিজদা করতে বলা হয়েছে আমি অবাধ্য
হয়েছি তাই আমার অবস্থান জাহান্নামে। তার মানে নিজের প্রতি ধিক্কার ও হতাশা জ্ঞাপন
করবে।
সিজদার ক্ষমতা কতটুকু তা ইবলিস অক্ষরে অক্ষরে জানত। যার কারণে
ইবলিশ অনেক বেশি ইবাদত করত, এবং সিজদাবনত হতো। তাই জিন হওয়া সত্বেও সে
জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথেই থাকত। কিন্তু আদম আলাইস সাল্লাম কে সৃষ্টি করার
পর ইবলিস সহ সমস্ত ফেরেস্তাকে আদম আলাই সাল্লাম কে সম্মান প্রকাশ করতঃ সিজদা
করার জন্য বলা হয় কিন্তু সবাই সিজদা করলেও ইবলিশ এক রহস্যজনক কারণে তাঁকে
সিজদা করে না।
আল কুরআনুল কারীমে রয়েছে যখন ইবলিস কে জিজ্ঞেস করা হলো তুমি আদম আলাইহিস
সাল্লামকে সিজদা করলে না কেন? তখন ইবলিশ বলল যে আমি হচ্ছি আগুনের তৈরি এবং আদম
হচ্ছে মাটির তৈরি। অর্থাৎ ইবলিস যুক্তি দাঁড় করালো যে আগুনের
বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আগুন জালালে উপরের দিকে যায় আর মাটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাটি উপরে
চালালে নিচ দিকেই আসে। তার মানে আমার মর্যাদা শ্রেষ্ঠ আর আমি শ্রেষ্ঠ হয়ে নীচু
আদমকে সিজদা করতে পারি না।
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বর্ণনা
করেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন হে উম্মাহ তুমি বেশি
বেশি সিজদা করো কারণ নিশ্চয় তুমি যে একটি সিজদা করবে এর দ্বারা তোমার একটি
মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং একটি গুনাহ ঝরে যাবে। এটিই প্রভুর শানে সিজদার ক্ষমতা।
সত্যিই মাটিতে সিজদা করা বা কপাল ঠেকানো খুব দামী এক জিনিস যার দ্বারা বান্দার
বিনয়ী ও নম্রতা প্রকাশ পায়।
আরো পড়ুনঃ ৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি সহি মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে আরো বলেন যে মাটিতে সিজদা
করা হচ্ছে বেশি বিনয় ও নম্রতা বিকাশের মাধ্যম। কারণ সিজদা করার
মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য সর্বোচ্চ বিনয় ও নম্রতা ফুটে ওঠে। আর এর
দ্বারা মানুষের শক্তিশালী ও উন্নত অঙ্গগুলো আরো মজবুত ও উন্নীত হয় যেহেতু এ
অবস্থায় মানুষের সবচেয়ে উত্তম অঙ্গ মুখমন্ডল থাকে মাটিতে আর যে মাটি হচ্ছে
ময়লা ও নীচ জিনিস থাকার জায়গা।
সিজদার ক্ষমতা কতটুকু এ ব্যাপারে একজন জ্ঞানী ব্যক্তির একটি বইয়ের দেখলাম
যে সিজদা করার সময় শরীর থেকে কার্বন-ডাই অক্সিজেন বের হয় এবং ফুসফুস
অক্সিজেন যুক্ত নতুন ও বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
করে। আর যার ফলে সমগ্র জীবনকে ফুরফুরা জীবনী শক্তি ও উদ্যোমী কার্যশক্তি
প্রদান করে। সিজদা মানুষের মুখে ঈমানের আলো বাড়িয়ে দেয় এবং তার
অন্তরে আশ্বাসের চিহ্ন ঢুকিয়ে দেয় এবং প্রশানিত দেয় পাশাপাশি তাকে
মর্যাদার চাদরে আবৃত করে।
সূরা মুহাম্মদ শেষ আয়াত এর মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা
বলেছেন মোহাম্মদ হচ্ছে আল্লাহর বার্তাবাহক আর যারা তার সাথে রয় তারা
পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত দয়াবান এবং কাফিরদের প্রতি খুব কঠোর। আর তুমি তাদের
দিকে দেখলে বুঝবে যে তারা আল্লাহর জন্য রুকু'কারী এবং সিজদা কারী হয়েই
রয়েছে। আর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ কামনা
করে। আর তাদের আলামত হচ্ছে তাদের চেহারায় বা কপালে সিজদার আসার বা চিন্থ
থাকা।
এই আলোচনাটা আসমানী গ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যেও রয়েছে। কাজেই বুঝা গেল
সিজদা করার ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি যেটি আল্লাহর নৈকট্যলাভের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাই
প্রিয় পাঠক, যে কোনো সময় যেখানেই থাকুন না কেন আল্লাহর জন্য সিজদা অবনত হতে যেন
কুন্ঠাবোধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ইনশাআল্লাহ।
পুরো জমিনটাই নবীজীর গিফট ইবাদত স্বরুপ সিজদা করার জায়গা যা অন্য নবীরকে আল্লাহ
এই গিফট দেন নি। তাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এক্ষেত্রে সময় হলেই সময় নষ্ট না
করে সালাত আদায় করতে যেহেতু সালাতের ভিতর সিজদা রয়েছে। প্রিয় উপস্থিতি, বেশি বেশি
সিজদা করুন এবং আল্লাহর প্রিয় ভাজন হয়ে যান এবং দুনয়াবী ফায়েদাগুলো লুটে নেন।
সিজদার ফজিলত
সিজদার ফজিলত এ ব্যাপারে একটি হাদিস হচ্ছে হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু
তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জিজ্ঞাসা করলেন যে, এমন কোন আমল বলুন যার মাধ্যমে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবো। তখন রাসূল (সা) বললেন যে তোমার ওপরে সিজদাকে আবশ্যক করে নাও। কারণ,
যখনই তুমি সিজদা করবে সাথে সাথেই তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং গুনাহ থেকে
মুক্তি লাভ করবে। (ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেন)।
সিজদার ক্ষমতা কতটুকু এটি সিজদার ফজিলত সংক্রান্ত বিষয় পড়লে আরো স্পষ্ট হতে
পারবেন। একজায়গায় দেখলাম যে, দীর্ঘ সিজদা স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী
করে এবং স্ট্রোক প্রতিরোধ করে আর চোখ খুলে সিজদা করলে চোখের পেশি শক্তি
বাড়িয়ে দেয়।
ইমাম হাফিয ইবনি রজব রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন সিজদা দ্বারা মানুষ
ও জিনের সর্বশক্তিমান প্রভুর জন্য বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন করা
হয়। আর এই সিজদা হচ্ছে ইবাদতের একটি শ্রেষ্ঠ অংশ যেটি আল্লাহ ছাড়া অন্য
কারো জন্য প্রদর্শন করা কোশ্চেনকালেও ঠিক নয়। যেহেতু তিনি হচ্ছেন এমন সত্তা
যার কোনো শরীক নেই এবং তিনি একক ও অদ্বিতীয় যার কোনো সমতুল্য নেই। এক্ষেত্রে
আল্লাহ বলছেন সূরা নাজমের শেষের আয়াত "তোমরা তার ইবাদত করো এবং তাকেই
সিজদা করো।"
সিজদা করার সঠিক নিয়ম
সিজদা করার সঠিক নিয়ম কি হবে বিষয়টি এখানে আলোকপাত করছি। আল্লাহর নবী (সা)
বলেন সহিহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমের হাদিস তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর যেভাবে
আমাকে দেখেছো। সহিহ বুখারী এবং মুসলিমের অপর হাদিসে রয়েছে যে, হযরতে আনাস (রা)
থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নাবী (সা) বলেছেন যে, তোমরা ঠিকঠাক সিজদা করো এবং
এক্ষেত্রে তোমরা তোমাদের দুই হাতকে মাটিতে রাখো তবে হাতদ্বয় যেন কুকুরের বিছানোর
ন্যায় না হয়ে যায়।
অর্থাৎ হাদীসটি থেকে বুঝা গেল সিজদা করার ক্ষেত্রে কুকুর যেমন সামনের
দুই পা বা হাত বিছিয়ে বসে অনুরূপভাবে সিজদা করার সময় একজন মুসল্লী বা সিজদা
আদায়কারী তার দুই হাতকে কনুইসহ না বিছিয়ে দেয় মাটির উপরে সেদিকে খেয়াল
রাখার কথায় বলা হয়েছে। আর ইবনে খুযায়মার হাদিসে রয়েছে সিজদা করার সময়
যেন দুই হাত পাঁজর থেকে কি বলে আলাদা থাকে। অন্য হাদিসে রয়েছে যে চেহারা যেমন
সিজদা করে তদ্রুপ হাত ও সিজদা করে তাই মাটিতে হাত রেখেই সিজদা করতে হবে।
সহীহ মুসলিমের অপর হাদিসে রয়েছে যে যখন তুমি সেজদা করবে তখন হাতদ্বয়কে
মাটিতে রাখবে এবং কনুইকে মাটি থেকে উঁচু করে রাখবে। আবু দাউদ এবং নাসায়ীর
হাদিসে রয়েছে যে, সিজদা করার সময় কপাল যেমন মাটিতে রাখতে হবে নাক ও মাটিতে
রাখতে হবে। আবার অন্য হাদিসে রয়েছে, যে ব্যক্তি কপালের সাথে সাথে নাক
মাটিতে না রাখবেনা তার নামাজই হয় না। (দারাকুত্বনী ও তাবারানী)।
আরেক হাদিস রয়েছে ইমাম বুখারী ও মুসলিমের সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে, জনৈক সাহাবী বলেন,
"আমি সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি। ১, কপাল ও নাক ২,৩ দুই হাত, ৪,৫
দুই পা, ৬,৭ দুই হাঁটু। অপর হাদিসে রয়েছে যে সিজদা করার সময় কোনো কাপড়-চোপড়
গোটানো যাবে না। সিজদা করার সময় হাত আগে না পা আগে সেটি নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে।
বিশুদ্ধ হাদিসে আগে হাত রাখতে হবে। তবে অসুস্থ হলে পা বা হাঁটু আগে রাখলেও সমস্যা
নেই ছাড় রয়েছে।
সিজদা সম্পর্কে হাদিস
সিজদা সম্পর্কে হাদিস বিভিন্ন হাদিস রয়েছে নিম্নে কয়েকটি হাদিস লিখছি। সিজদা
মু'মিন জীবনের জন্য অত্যন্ত মহা মূল্যবান এক জিনিস। যার জীবনে একটি সিজদা না
জুটবে তার মত হতভাগা আরেকট হতে পারেনা। কারণ, ইবলিস শয়তান একটি সেজদা অস্বীকার এর
জন্য সে মারদূদ বা বিতাড়িত শয়তান হয়েছে। আর আমরা দিবারাতি কতগুলো সিজদা দেয় না
তার হিসাব কষাটা একজন সচেতন মুসলিমের জন্য জরুরী ব্যাপার। তো চলুন জেনে নেই
হাদিসগুলো-
১। হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন যে, যে
কোনো বান্দা একটি সিজদা করে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা একটি নেকী লিখে দেন, একটি
গোনাহ মিটিয়ে দেন এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। অতএব তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর
জন্য সিজদা করো। (হাদিসটি ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন)।
২। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন একজন বান্দা আল্লাহর
সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় ওই সময় যখন সে সিজদা করে। সুতরাং তোমরা বেশি
বেশি সেজদা করো এবং এই সময় দোয়া করো কারণ তোমার রব বা প্রভু তোমার নিকটে
রয়েছে।
৩। এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল বলেছেন যে কেয়ামতের দিন আমার এমন কোন উম্মত নেই
যে আমি তাদের চিনতে পারবো না। সাহাবীরা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে এত সৃষ্টির
ভিতরে আপনি কিভাবে তাদের চিনবেন? তখন আল্লাহর রাসূল (সা) জবাবে বললেন যে
একদল ঘোড়ার ভিতরে যদি কিছু সাদা-কালো অংশযুক্ত ঘোড়া থাকে তাহলে কি তাদের চিনতে
কোন অসুবিধা হবে? অনুরূপভাবে কিয়ামতের ময়দানে আমার
উম্মাতের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকবে এবং অযু করার কারণে চেহারা চমকাতে
থাকবে। এ দেখে আমি তাদের চিনতে পারব।
সিজদা নিয়ে উক্তি
সিজদা নিয়ে উক্তি এখানে পেশ করছি। প্রিয় পাঠক, সিজদা মু'মিন এর এক অবিচ্ছেদ্য
অংশ। সুতরাং সিজদা করে আল্লাহকে খুশি করুন এবং আপনি ও আল্লাহর রাজিয়্যাম
মারজিয়্যা বা সন্তষ্ট ও প্রিয় বান্দায় রুপান্তরিত হয়ে যান। নিম্নে সিজদা নিয়ে
কিছু উক্তি বা সাজানো-গোছানো কথা লিখছি।
🧡"আল্লাহর জন্য একটি সিজদা একটি সন্তষ্টির প্রকাশ বৈ কি হতে পারে"🧡
🧡"যৌবনকালে যতপার বেশি বেশি সিজদা করো কারণ, যৌবনের সিজদা অনেক দামী"💛
🧡"সিজদা আল্লাহর তায়ালার প্রতি বিনয় ও নম্রতা বিকাশের অন্যতম হাতিয়ার"💛
🧡"সিজদা দাও, দিয়ে নেকি কুড়াও ও গোনাহ ঝরাও এবং আল্লাহর মর্যাদা লাভ করো"💛
🧡"সিজদার সময় বান্দা রবের সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি থাকে তাই এ সময় যা চাওয়ার চেয়ে
নাও"💛
যুবকের সিজদায় আরশ কাপে হাদিস
যুবকের সিজদায় আরশ কাপে হাদিস সম্পর্কে তেমন কোনো সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। তবে
শুধু সাহাবী সা'দ বিন মুয়ায (রা) এর মৃত্যতে আরশ কেপেছিল এ মর্মে হাদিস পাওয়া
যায়। তবে হাদিস যেভাবে এসেছে সেভাবে বিশ্বাস করাটাই একজন মু'মিনের জন্য কর্তব্য ও
উচিত। কিন্ত যুবকের সিজদায় আরশ কাপে এ ব্যাপারে তেমন সহীহ সনদে হাদিস পাওয়া
যায়না।
প্রিয় ব্লগার পাঠক, সা'দ (রা) এর ভালোবাসায় আল্লাহর আরশ কাপার বিষয়টি তার প্রতি
ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। যেমন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সা) এর ভালোবাসায়
উহোদ পাহাড় কেপেছিল। তবে এ সব হাদিসের ক্ষেত্রে তেমন ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ রাখার
দরকার নেই যেহেতু এগুলো গায়েবের বিষয়। তাই সতর্ক থাকাটায় বেটার।
রুকু সিজদার গুরুত্ব
রুকু সিজদার গুরুত্ব সম্পর্কে এখানে লিখছি। প্রিয় পাঠক, সূরা হজ্জের ৭৭
নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, "হে ঈমানদারগণ তোমরা রুকু' ও
সিজদা করো এবং তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত কর তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হতে
পারবে।" এ আয়াত থেকে বুঝা গেল রুকু ও সিজদার মাধ্যমে যেকোনো বৈধ ক্ষেত্রে সফলতা
লাভ করা যায়।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব
হাদিসে রাবীয়া বিন কা'ব আল আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন যে আমি
রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে রাতে থাকতাম এবং প্রয়োজনে তার জন্য পানি নিয়ে আসতাম, তো
তিনি বল্লেন রাবীয়া তুমি আমার কাছে কিছু চাও তখন সাহাবী রাবীয়া বল্লেন আমি আপনার
সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। এরপরে রাসূল (সা) বল্লেন যে এ ছাড়া অন্য কিছু চাও তখন
আবারও তিনি বল্লেন আমি সেটাই চাই। তখন তিনি বল্লেন যে আমার সাথে থাকতে চাইলে তুমি
বেশি বেশি সিজদা করো।
জিব্রাইল আঃ এর সেজদা
জিব্রাইল আঃ এর সেজদা নিয়ে যে কথাগুলো উল্লেখ পাওয়া যায় তা কোন
উল্লেখযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায় না। জিবরাঈল আলাইহিস সালামের সিজদার
বিবরণটি হচ্ছে এরকম যে যখন জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা
হলো তখন তিনি বললেন যে হে আল্লাহ আপনি কিসে বেশি সন্তুষ্ট হন? তখন
আল্লাহ বললেন সিজদার মাধ্যমে আমি বেশি খুশি হই। তখন জিব্রাইল আলাইহিস
সাল্লাম তার লম্বা সিজদা দিলেন যার পরিমাপ ছিল ৩০ হাজার বছর সমপরিমাণ।
এরপর এই জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আল্লাহকে বললেন হে আল্লাহ আপনি কি খুশি
হয়েছেন? তখন আল্লাহ বললেন যে হে জিব্রাইল তুমি আরশের উপরের দিকে
তাকাও। তখন জিব্রাইল আলাই সালাম উপরের দিকে তাকালেন। এরপরে তাকিয়ে
তিনি দেখলেন যে আরশে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ লেখা
আছে। এরপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন হে আল্লাহ মুহাম্মদ কে?
তখন আল্লাহ বললেন যে আমি পৃথিবীতে মানুষ ও জিন জাতির হেদায়েতের জন্য লক্ষাধিক
নবী ও রাসূল পাঠাবো যাদের ভিতরে শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হবেন মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার উপর ১৭ রাকাত নামাজ ফরজ করব এবং
প্রত্যেকটি রাকাতে দুটি করে সিজদা থাকবে এবং এক্ষেত্রে ১৭ দুই গুনে ৩৪ টি সেজদা
তারা প্রত্যহ আদায় করবে। আর যাদের একটি সেজদার সব হবে ৪০ হাজার বছর সিজদার
সমপরিমাণ।
তো হযরতে মূসা আলাইহিস সালামও শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের
উম্মত হওয়ার জন্য আশা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ একটি সিজদার নেকী শেষ নবীর উম্মাতের
অনেক বেশি। প্রিয় পাঠক, প্রকৃতপক্ষে যদিও উম্মাতী মুহাম্মাদীর একটি সিজদা অনেক
দামী তা সত্ত্বেও জিব্রাইল আঃ এর সিজদা সম্পর্কিত বিষয়টি সহীহ বা শুদ্ধ নয়।
সিজদার উপকারিতা
সিজদার উপকারিতা অনেক রয়েছে যা আমরা ইতিমধ্যেই লিখার চেষ্টা করেছি। এরপরও এখানে
লিস্ট আকারে সন্নিবেশ করছি।
-
সিজদা করলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেশি বেশি দূর হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক
পদার্থ।
- সিজদায় বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহনের জন্য ফুসফুস প্রস্তুতি নেয়।
- সিজদা পিঠে ব্যথা ও গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূরকরণে সহায়ক।
- সিজদা করার দ্বারা চেহারার উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।
-
সিজদা বেশি বেশি করলে কাল কিয়ামতে রাসূল সাঃ উম্মত হিসাবে এর চিনতে সুবিধা
হবে।
- গবেষণায় দেখা গিয়েছে হাজারো রোগের চিকিৎসা এই সিজদা।
লেখকের শেষ মন্তব্য
সিজদার ক্ষমতা কতটুকু এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে লিখার চেষ্টা করেছি উক্ত
ব্লগটিতে। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন
তাহলে আশা করা যায় সিজদার ক্ষমতা আছে কিনা বিষয়টি বুঝতে পারবেন। সিজদা
অনেক শ্রেষ্ঠ ও উত্তম ইবাদাতের অংশ বিশেষ যার দ্বারা গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়া যায়,
পূণ্য লাভ করা যায় এবং সম্মান ও মর্যাদা লাভ হয়।
আরো এ রকম নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ব্লগটির সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ্।
আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ FAQ
সিজদার ফজিলত কি?
সিজদার ফজিলত কি ব্যাপারটি তাবারানী কাবীর ও সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীবে রয়েছে
যে, শয়তান যখন আদম সন্তানকে সিজদারত অবস্থায় দেখে, তখন সে চিৎকার করে
বলতে থাকে যে হায়, আফসোস! শয়তান ধ্বংস হোক। যখন আদম সন্তানকে সিজদার জন্য আদেশ
করা হয় তখন সে সেজদা করে এবং আনুগত্য প্রকাশের জন্য তার জন্য জান্নাত অবধারিত
হয়। আর আমাকে যখন সেজদা করতে বলা হয় তখন আমি নাফারমানি করি এবং অবাধ্য হওয়ার
কারণে আমার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়।
সিজদা করা কী?
সিজদা করা কী মানে এখানে হুকুম বলা হচ্ছে। অর্থাৎ সিজদা হলো আল্লাহর জন্য আনুগত্য
প্রকাশের একটি শ্রেষ্ঠ উপায়। সিজদা করার মাধ্যমে মানুষ ও জিন জাতির পাপ মুক্ত হয়,
পূণ্য অর্জিত হয় এবং সম্মান লাভ হয়।
কোন ইবাদত দ্বারা বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হতে পারে?
যে ইবাদত দ্বারা বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হতে পারে তা হচ্ছে "সিজদা"।
হাদিসে আছে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় তখন যখন সে আল্লাহর জন্য
সিজদাবনত হয়। আর বলা হয়েছে এ সময় তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দুয়া' করো আশা করা
যায় ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ফিরিয়ে দেবেন না।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url