৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস জানুন
১০টি কোরআন হাদিসের বাণী স্পষ্টরুপে জানুন৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সম্পর্কে এখানে আজকের আর্টিকেলটিতে লিখতে যাচ্ছি।
হাদিস হচ্ছে প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ (সা) এর মুখনিঃসৃত বাণী। হাদিস ইসলাম ধর্মের
দ্বিতীয় সাংবিধানিক মহান শাস্ত্র কথা।
এক্ষেত্রে, কুরআন মাজীদ হচ্ছে প্রথম ও
পবিত্র সাংবিধানিক গ্রন্থ। কোরআন মানব জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান মৌলিকভাবে
বর্ণনা দিয়েছে আর হাদিস বিস্তারিত বলেছে। চলুন নিম্নে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ৫০টি
হাদিস জেনে নিই।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এখানে লিখতে চলেছি। যেই সম্পর্কে হাদিসগুলো সেগুলো
হচ্ছে ঈমান, ইসলাম, সত্য, মিথ্যা, উগ্রতা, নম্রতা, প্রতিহিংসা, ক্ষমা, ইনসাফ ও
যুলুম সম্পর্কে। বর্তমান যামানায় এই বিষয়গুলোর খুব বেশি অভাব অনুভব করছি। যেদিকে
তাকাই ঈমান এর ৬টি রুকন ও ইসলাম এর ৫টি রুকন এর প্রতিফলন খুব কমই লক্ষ করা
যায়। নিম্নের ১০টি বিষয়ে ৫টি করে মোট ৫০ টি হাদিস লিখব ইনশাআল্লাহ্।
ঈমান সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর মাঝে ঈমান সম্পর্কে এখানে হাদিসগুলো লিখছি। ঈমান
মানে বিশ্বাস করা, প্রত্যয় করা, এবং আরবীতে যার প্রতি শব্দ হিসাবে ব্যবহার হয়
আক্বীদাহ্ ও ইনক্বিয়াদ ইত্যাদি শব্দগুলো। ঈমান হচ্ছে একজন মু'মিনের খুব
গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। ইসলামী শরীয়তে ঈমান হচ্ছে মৌখিক স্বীকৃতি, আন্তরিক বিশ্বাস
এবং কাজে বাস্তবায়নের নাম। তবে, নিম্নে ঈমান সম্পর্কে ১০টি হাদিস নিয়ে লিখার চেষ্টা করছি।
১ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেন যে ঈমানের ৬০ এর ও অধিক শাখা রয়েছে যার ভিতরে একটি হচ্ছে লজ্জা। (সাহীহ বুখারী)
২ নং হাদিসঃ আনাস ইবনে মালিক (রা) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করছেন যে তোমাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা তার অপর ভাইয়ের জন্য পছন্দ করছে। (সাহীহ বুখারী)
৩ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি নবী (সা) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সা) বলেছেন যে ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে যে, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবেনা যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা এবং তার নিজের সন্তানাদিদের থেকে বেশি প্রিয়তম হতে পারব। (সাহীহ বুখারী)।
৪ নং হাদিসঃ হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা আছে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা) বলেছেন যে, তোমাদের কেউ মু'মিন বা বিশ্বাসী হতে পারবেনা যতক্ষণ না সে আমাকে তার বাবা-মা, সন্তানাদি এবং সমস্ত মানুষ থেকে ভালবাসতে পারবে। (সহীহ বুখারী)।
৫ নং হাদিসঃ হযরত আনাসের বর্ণনা তিনি নবী (সা) থেকে বর্ণনা করছেন যে আনসার সাহাবীদের ভালোবাসা মু'মিনের পরিচয় এবং আনসার সাহাবীদেরকে ঘৃণা করা মুনাফিকের পরিচয়। (সহীহ বুখারী)।
৬ নং হাদিসঃ আনাস বিন মালেক (রা) এর বর্ণনা, তিনি রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যার তিনটি গুণ রয়েছে সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। যেগুলোর ১. আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে থাকে ২. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কাউকে ভালোবাসে। ৩. ঈমান গ্রহণের পর যে অপছন্দনীয় আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত ফিরে যেতে অপছন্দ করে। (সাহীহ বুখারী)
৭ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে আল্লাহর রাসূল (সা) একজন লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এমতাবস্থায় একজন লোক তার ভাইকে লজ্জা না থাকার জন্য উপদেশ দিচ্ছিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সা) বললেন যে তুমি তাকে ছাড়। কারণ, লজ্জা হচ্ছে ঈমানের অংশবিশেষ। (সাহীহ বুখারী)
৮ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি রাসুল (সা) থেকে বর্ণনা করছেন যে, ঈমানের ৭০ টিরও বেশি শাখা রয়েছে। যার ভিতরে সর্বোন্নত এবং সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এই সাক্ষ্য দেওয়া এবং সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা। (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আহমাদ ও মিশকাত)।
৯ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রাহর বর্ণনা, তিনি রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করছেন, আল্লাহ রাসূল (সা) বলেছেন ওই সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মদ (সা) এর জীবন রয়েছে যে, এই উম্মাহর যে কেউ ইয়াহুদী হোক বা খৃষ্টান হোক সে আমার নবী হওয়া ও রাসূল হওয়া বিষয়টি না মেনে নিবে এবং আমার উপর অর্পিত শরীয়তের উপর ঈমান না আনবে সে জাহান্নামী হবে। (মুসলিম, আহমাদ ও আল জামি' প্রভৃতি)।
১০ নং হাদিসঃ হযরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন রাসূল (সা) থেকে, রাসূল (সা) বল্লেন যে, তুমি বল আমি ঈমান আনায়ন করলাম এবং এর উপর দৃঢ় থেক। (মিশকাত)
ইসলাম সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর আরো একটি হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম মানে আত্মসমর্পন করা। আরবী প্রতি শব্দ হচ্ছে ই'তিক্বাদ (আক্বীদাহ) ও ইনক্বিয়াদ। ইসলামী পরিভাষায়, ইসালাম হলো মৌখিক স্বীকৃতি, আন্তরিক বিশ্বাস ও বাহ্যিকভাবে কাজে বাস্তবায়নের সমন্বিতরুপ। নিম্নে ইসলাম সম্পর্কে মোট ১০টি হাদিস লিখছি।
১ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহ রাসুল (সা) বলেন যে, ইসলাম ধর্মটি পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, একটি হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই এই সাক্ষ্য দেওয়া এবং মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল ও বান্দা এই সাক্ষ্য ও দেওয়া। দ্বিতীয় হলো সালাত প্রতিষ্ঠা করা। তৃতীয় হলো যাকাত প্রদান করা। চতুর্থ হলো সিয়াম আদায় করা। পঞ্চম হলো এবং বাইতুল্লাহ হজ্জ বা যিয়ারত করা। (বুখারী)।
২ নং হাদিসঃ আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সা) কে ইসলামের কোন বিষয়টি সর্বোত্তম এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বললেন যার মুখ এবং জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমানেরা নিরাপদে থাকে এটাই হচ্ছে ইসলামের সর্বোত্তম ব্যাপার। (সাহীহ বুখারী)।
৩ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ বিন আমর এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করা হলো যে ইসলামের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কোন বিষয়টি। তখন উত্তরে তিনি বললেন যে মানুষকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকল মুসলিমকে সালাম প্রদান করা। (সহীহ বুখারী)।
৪ নং হাদিসঃ আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন, অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন মানুষের সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হবে ছাগল, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টি পড়ার জায়গায় চলে যাবে। উদ্দেশ্য হবে তার দ্বীন বা ইসলাম কে ফিতনা থেকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী)।
৫ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণনা আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন, আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে আমি যেন মানুষের সাথে লড়াই করি যতক্ষণ না তারা এই সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আর তারা যেন সালাত প্রতিষ্ঠিত করে ও যাকাত দেয়। তাহলে তারা যেন নিরাপদ করে নিল তাদের জান ও মাল। তবে ইসলামের কোন কারণে জান নেওয়ার থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। আর তাদের হিসাবটা আল্লাহর কাছে অর্পিত ও ন্যাস্ত।
৬ নং হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ (রা) এর বর্ণনা রয়েছে যে, রাসূল (সা) কে প্রশ্ন করা হলো যে ইসলামের কোন বিষয়টি সবচেয়ে উত্তম? তখন তিনি বল্লেন যে, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস করা। এরপর কোনটি? তিনি বল্লেন যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। এরপর কোনটি? তো তিনি বল্লেন যে কবুল হজ্জ। (সহীহ মুসলিম)।
৭ নং হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণনা আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন, নিশ্চয় ইসলাম ধর্ম সহজ। আর ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তা তার উপর বিজয়ী হয়। আর তোমরা ইসলাম মানতে গিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। আর মধ্যম পন্থার কাছেই থাক। এবং ইসলামের জয় যে হবে এ নিয়ে শুভ সংবাদ গ্রহণ কর। আর তোমরা সকাল, সন্ধ্যা এবং রাতের কিছু অংশে ইবাদতের মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। (সাহীহ বুখারী)।
৮ নং হাদিসঃ আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা আছে, রাসূল (সা) বলেছেন যে, যখন কোনো বান্দা ইসলাম গ্রহণ করে এবং সে ইসলাম সুন্দররুপে পালন করে তখন আল্লাহ তার পিছনের সমস্ত পাত ক্ষমা করে দেন। আর এরপর বিনিময় হিসাবে থাকে তার একটি পূণ্য ১০ এ আর ১০টি পূণ্য ৭০০ গুণ পর্যন্ত আল্লাহ দিয়ে থাকেন। আর কোনো পাপ করলে সেটা সেই পরিমাণ হবে যতটুকু সে করেছে। তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। (সহীহ বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ)।
৯ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত আল্লাহ রাসুল (সা) ইরশাদ করেছেন যে কোন মুসলমানকে গালি দেওয়া পাপের কাজ এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরি। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
১০ নং হাদিসঃ জারির বিন আব্দুল্লাহ (রা) এর বর্ণনা তিনি আল্লাহর রাসূল (সা) এর হাতে হাত রেখে শপথ করেছেন যে তিনি সারা জীবন সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবেন এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য মঙ্গল কামনা করবে। (সহীহ বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ)।
সত্য সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর মাঝে আরো একটি বিষয় হচ্ছে সত্য। চারিদিকে সত্য ও সততার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সত্য মানুষকে জীবনে বিপুল পরিমাণে সাফল্য এনে দেয়। যদিও সত্য কথা বল্লে বিভিন্ন সময়ে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তবে সত্যের আড়ালে থাকে অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীব জীবন। এ সম্পর্কে ৫টি হাদিস লিখছি নিম্নে।
১ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর বর্ণনা, রাসূল (সা) বলেছেন, যখন কারো মাঝে ৪টি বস্তু থাকবে, তার দুনিয়ার সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও কোন অসুবিধা হবে না। এক নাম্বার, আমানত রক্ষা করে চলা। দুই নম্বর, সত্য কথা বলা। তিন নাম্বার, সুন্দর চরিত্র চর্চা করা। চার নম্বর, এবং ধৈর্য ধরে থাকা। (আহমাদ ও আত তারগীব ওয়াত তারহীব)।
২ নং হাদিসঃ হযরত হাসান বিন আলি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে আমি আল্লাহর রাসূল (সা) থেকে বিষয় মুখস্ত রেখেছি। আর তা হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (সা) একদিন বললেন তুমি সন্দেহজনক জিনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে সন্দেহ নয় এমন জিনিসের দিকে অভিমুখী হও। কেননা, সত্য হচ্ছে প্রশান্তিদায়ক বিষয় আর মিথ্যা হচ্ছে সন্দেহের উদ্রেককারী বিষয়। (হাদীসটি ইমাম তিরমিজি বর্ণনা করেছেন)।
৩ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ বিন আমরের বর্ণনা, তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা) কে জিজ্ঞাসা করা হলো মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কে? তখন তিনি বললেন যে প্রত্যেক হিংসা মুক্ত অন্তরের অধিকারী এবং যার জিহ্বা সদা সত্য কথা বলে সেই। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিকে তো আমরা চিনি কিন্তু হিংসামুক্ত অন্তর আমরা কিভাবে চিনব?
এর জবাবে আল্লাহর রাসূল (সা) বললেন সে হচ্ছে স্বচ্ছ ও পরহেজগার ব্যক্তি অর্থাৎ যার ভিতরে পাপ নেই, কোন সীমালংঘন নেই, কোন খেয়ানত নেই এবং কোন হিংসা-বিদ্বেষ নেই। (ইবনে মাজা হাদিস বর্ণনা করেছেন)।
৪ নং হাদিসঃ আবু বকর সিদ্দিক (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল সা) বলেছেন, তোমরা সত্যের সাথেই থাকো। কেননা, সত্য ও পূণ্য একসাথে থাকে এবং এই দুইটি জান্নাতে নিয়ে যায়। আর মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, মিথ্যা পাপের সাথে থাকে। আর এই দুইটি জাহান্নামে নিয়ে যায়। (হাদীসটির বর্ণনা করেছেন)।
৫ নং হাদিসঃ হযরতে আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহ রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা তোমাদের বাবা-মা এবং দেব-দেবীদের নামে কসম করো না। তোমরা কসম বা শপথ করো একমাত্র আল্লাহর নামে। আর শপথ করো সেই বিষয়ে যে বিষয়ে তোমরা জান যে তা সত্য। (আবূ দাউদ ও নাসায়ী)।
মিথ্যা সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর মাঝে আরো একটি মিথ্যা বা অসত্য। আজ আকাশে বাতাশে শুধু মিথ্যার ছড়াছড়ি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধু মিথ্যা আর মিথ্যা। মিথ্যা দিয়ে সমাজটা ছেয়ে গেছে। মিথ্যার দুর্গন্ধে আশেপাশে টিকা যায় না। নিম্নে মিথ্যা নিয়ে পাঁচটি হাদিস লিখছি।
১ নং হাদিসঃ আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর বর্ণনা আছে, তিনি বলছেন, তোমরা মিথ্যা থেকে বিরত থাকো। কারণ, এই মিথ্যা ঈমান নষ্টকারী বিষয়। (বায়হাক্বী)।
২ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রার বর্ণনা আল্লাহ রাসুল বললেন নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি কোন বাচ্চাকে বলবে এদিকে আসো। এরপর সে তাকে কিছু দিবে না। এটি এক ধরণের মিথ্যা। (আহমাদ)।
৩ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন যে, নিশ্চয়ই সত্য পূণ্যের দিকে নিয়ে যায়, আর পূণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর একজন ব্যক্তি যতক্ষণ সত্য কথা বলবে আল্লাহর কাছে সত্য হিসেবে আখ্যায়িত থাকে।
আর মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। এবং একজন মানুষ যতক্ষণ মিথ্যা কথা বলবে আল্লাহর কাছে সে মিথ্যুক হিসেবে থাকে। (হাদিসটি ইমাম বোখারি ও মুসলিম একযোগে বর্ণনা করেছেন)।
৪ নং হাদিসঃ উবাদাহ বিন সামিত (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর নবী (সা) বলেছেন, হে উম্মাহ! আর তোমরা নিজেরা আমার থেকে ছয়টি বিষয়ের দায়িত্ব নিলে আমি তোমাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে নেব। ১, কথা বললে সত্য কথা বলো। ২, ওয়াদা করলে তা পূর্ণ করো।
৩, আমানত রাখলে তা আদায় করে দাও। ৪, আর তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত কর। ৫, সদা চক্ষু অবনমিত করে চলো। এবং ৬, নিজেদের হাতগুলোকে চাওয়া থেকে বিরত রাখে। (হাকীম, মিশকাত)।
৫ নং হাদিসঃ হাকিম ইবনে হিযাম (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহ রাসুল (সা) বলেছেন যে, ক্রেতা ও বিক্রেতা যতক্ষণ সত্য কথা বলে, ততক্ষণ তারা বরকতের ভিতরেই থাকে আর যখন সত্য গোপন করে এবং মিথ্যা কথা বলে, তখন তাদের কেনা-বেচার বরকতটা নষ্ট হয়ে যায় বা তুলে নেওয়া হয়। (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)।
উগ্রতা সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর আরো একটি হচ্ছে উগ্রতা। উগ্রতা মানে উচ্ছৃঙ্খলা করা এবং মেজায ও রাগ দেখানো। রাগে গরম হয়ে অস্থিরতা ও ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্টীয় জীবনকে অস্থিতিশিল করে দেওয়া। যার কারণে অনেক জীবন বিপন্ন হয় এবং অরাজক অবস্থা তৈরী হয় এবং মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারেনা। নিম্নে এ সম্পর্কে ৫টি হাদিস থাকছে।
১ নং হাদিসঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বর্ণনা, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সা) এর কাছে উপদেশ চাইলে তিনি বলেন, তুমি রাগ করোনা বা রাগ দেখায়ো না। লোকটি কয়েকবার আরো উপদেশের কথা বললে, আল্লাহর রাসূল (সা) বারংবার উত্তর দিলেন যে তুমি রাগ করো না। (সহীহ বুখারী)। কারণ, রাগ উগ্রতা বাড়িয়ে দেয়।
২ নং হাদিসঃ আবু হুরায়রাহ (রা) এর আরো একটি বর্ণনা হচ্ছে, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন সে ব্যক্তি প্রকৃত শক্তিশালী বা বীর নয় যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে শক্তি প্রয়োগ করে পরাজিত করে। বরং সেই ব্যক্তি প্রকৃত শক্তিশালী যে তার রাগের সময় নিজেকে সংবরণ হতে পারে। (বুখারী ও মুসলিম)।
৩ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন যে, যে লোকের অন্তরে বিন্দু পরিমান ঈমান রয়েছে সে জাহান্নামে যাবে না। আর যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে যাবে না। (সহীহ মুসলিম)। আর অহংকার থাকলেই মানুষের সাথে উগ্রতা করা যায়।
৪ নং হাদিসঃ আত্বিয়্যাহ বিন উরওয়াহ আস সা'দী (রা) বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন যে, নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে, আর শয়তানকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আগুনকে শুধুমাত্র নিভাতে পারে পানি। কাজেই যখনই রাগ উঠবে কারো সে যেন সাথে সাথে অজু করে নেয়। (আবূ দাঊদ)।
৫ নং হাদিসঃ আবু যার (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, যদি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কারো রাগ উঠে তাহলে সে যেন বসে যায়। এরপরেও রাগ না গেলে সে যেন শুয়ে পড়ে। (তিরমিযী ও আহমাদ)। যার রাগ বেশি তার দ্বারা উগ্রতা বেশি সংঘটিত হয়ে থাকে। বিধায় রাগ কন্ট্রোল করতে হবে।
নম্রতা সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর মাঝে আরো একটি বিষয় হচ্ছে নম্রতা। নম্রতা অত্যন্ত ভালো একটি গুণ। যার নম্রতা যত বেশি সে জীবনে তত বেশি মানুষের কাছে প্রিয় হতে পারে। আর নম্রতার দ্বারা শুধু মানুষ এর মন নয়, রাজার রাজ্য পর্যন্ত জয় করা যায়। নিম্নে নম্রতা নিয়ে ৫টি হাদিস থাকছে।
১ নং হাদিসঃ আনাস বিন মালেক (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর নবী (সা) বলেন যে আমি সালাতে দাঁড়ালে সালাত দীর্ঘ করার ইচ্ছা ইচ্ছা পোষণ করি। কিন্তু হঠাৎ শিশুর কান্নার আওয়াজ পেলে আমি নামাজ ছোট করে ফেলি। কারণ, আমি জানি যে শিশুর কান্নায় মায়ের মন ব্যাকুল হয়ে পড়ে। (সহীহ বুখারী)।
২ নং হাদিসঃ হযরত আনাস (রা) এর আরও একটি বর্ণনা, এক গ্রাম্য ব্যক্তি একবার মসজিদে ঢুকে এক সাইডে প্রস্রাব করে দেয়। ফলে সাহাবীরা তার দিকে তরে গেলে আল্লাহর রাসূল (সা) তাদেরকে প্রসাবে বাধা দিতে নিষেধ করলেন। এরপর এক বালতি পানি দিয়ে জায়গা টা ঢেলে দিয়ে পরিষ্কার করতে বল্লেন। (সহীহ বুখারী)। আদেশে কি নম্রতা লক্ষ্য করেছেন!
৩ নং হাদিসঃ হযরত আনাস (রা) এর আরও একটি বর্ণনা, তিনি বলেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল (সা) এর ৯ বছর খেদমত করেছি। এক্ষেত্রে, আমি কোন কাজ করলে তিনি বলেননি যে তুমি এ কাজটা কেন করলে? আবার কোন কাজ না করলে তিনি বলেননি যে কাজটা কেন করলেনা? (সহীহ বুখারী)। দেখেছেন তার নম্রতার নমুনা।
৪ নং হাদিসঃ শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, যখন তোমরা ইসলামের তাগিদে হত্যা করবে তখন দয়ার সাথে হত্যা করবে। আর যখন কোন প্রাণী যবেহ করবে তখন ইহসান বা দয়ার সাথে যবেহ করবে। এক্ষেত্রে, তোমরা তোমাদের ছুরিগুলো ধার দিয়ে নিবে, যেন যবেহ করতে গিয়ে প্রাণী বা জন্তটি কষ্ট না পায়। (মুসলিম ও আবূ দাঊদ)। কতইনা তিনি নম্র ছিলেন!
৫ নং হাদিসঃ হযরত আয়েশা (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নম্র। আর তিনি নম্রতাকে পছন্দ করেন। আর নম্রতার জন্য তিনি যা দিয়ে থাকেন হিংস্রতার জন্য তাদের না। আর এই হিংস্রতায় যে জটিলতা সৃষ্টি করে থাকেন নম্রতায় তার বিপরীত। (হাদিস ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন)।
এক হাদিস আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে আমি এবং নম্র ব্যক্তি জান্নাতে পাশাপাশি থাকবো। কাজেই আমাদের নম্রতা অবলম্বন করা উচিত।
প্রতিহিংসা সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর আরো একটি বিষয় হচ্ছে প্রতিহিংসা। প্রতিহিংসা মানে একজন আরেকজনের প্রতি হিংসা করা। আজ সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি জীবন প্রতিহিংসার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে। আর হিংসার প্রতিচ্ছবি হচ্ছে প্রতিহিংসা। নিম্নে এ সম্পর্কে পাঁচটি হাদিস লিখছি।
১ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর নবী বলেন, তোমরা হিংসা থেকে বিরত থাকো। কেননা হিংসা নেকি বা পূণ্য কে খেয়ে ফেলে বা ধ্বংস করে দেয় যেমন আগুন কাঠ বা খড়কুটা পড়িয়ে শেষ করে দেয়। (হাদিসটি ইমাম আবূ দাঊদ যয়ীফ সুত্রে বর্ণনা করেছেন)। তবে, এর সমর্থনে অন্য হাদিস থাকার কারণে হাদিটি আমলযোগ্য বা সহীহ হয়ে যায়। আর হিংসা থাকলেই মানুষের প্রতি প্রতিহিংসা স্বরুপ হৃদয়ের ভিতর প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে। তাই প্রতিহিংসা বিষয়টি এড়িয়ে চলা উচিৎ।
২ নং হাদিসঃ আনাস বিন মালেক (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (রা) বলেছেন, তোমরা পরস্পরে রাগ বা বিদ্বেষ রেখো না, পরস্পরে হিংসা করো না, পরস্পরের পিছনে লেগে থেকো না বা ষড়যন্ত্র করোনা এবং পরস্পর থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করো না। আর তোমরা ভাই ভাই সূত্রে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও। (সহীহ বুখারী)।
৩ নং হাদিসঃ আবূ উমামা (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি অন্যজনকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর জন্য দান করা থেকে বিরত থাকে সে যেন ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিল। (আবূ দাউদ ও সূনানে তিরমিযী)।
৪ নং হাদিসঃ যামরাহ বিন সা'লাবাহ এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন যে, মানুষ ততক্ষণ কল্যাণের ভিতরে থাকবে যতক্ষণ তারা পরস্পরে হিংসা (প্রতিহিংসা) থেকে বিরত থাকবে। (ত্ববারানী)। হাদিস সহীহ।
৫ নং হাদিসঃ আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, মানুষের অন্তরে ঈমান ও হিংসা পরস্পর জমায়েত বা সন্নিবেশ হতে পারে না। (নাসায়ী- হাদিস সহীহ)।
ক্ষমা সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর মাঝে আরো একটি বিষয় হচ্ছে ক্ষমা। ক্ষমা অত্যন্ত মহান ও মহৎ গুণ। ক্ষমা গুন যেমন আল্লাহর অনুরুপ তার প্রিয় রাসূল (সা) এর। কাজেই ক্ষমা গুন টা অর্জন করতে পারলে জীবনে অনেক বড় হওয়া যাবে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশে শান্তি ফিরে আসবে। নিম্নে এই ক্ষমা সম্পর্কে ৫টি হাদিস থাকছে।
১ নং হাদিসঃ আবুযার (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন যে, আল্লাহ বলছেন, হে আমার বান্দারা! তোমরা দিবানিশি পাপ করে থাকো। আর আমি পাপরাশি ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেবো। (মুসলিম ও মিশকাত)।
২ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন যে, ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। যদি তোমরা পাপ না করতে তাহলে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ধ্বংস করে দিতেন। এরপর এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যারা পাপ করত, এবং পাপ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইত। আর আল্লাহ তা'আলা তাদের ক্ষমা করে দিতেন (মুসলিম ও মিশকাত)।
৩ নং হাদিসঃ হযরত আয়েশা (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, যদি কোন বান্দা নিজের পাপ স্বীকার করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন। (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)।
৪ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, যখন রাতের তিন ভাগের শেষ ভাগ বাকি থাকে। তখন আল্লাহ তাআলা আরশে আযীম থেকে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। এসে বলেন, যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই, যে আমার কাছে চায় আমি তাকে দেই আর যে আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দিই। (সহীহ বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত)।
৫ নং হাদিসঃ হযরত আনাস (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন যে, আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! নিশ্চয়ই তুমি যদি আমাকে ডাকো এবং আমার কাছে ক্ষমার প্রত্যাশা করো তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব এতে তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন আমি ক্ষমা করতে কাউকে পরোয়া করবনা।
আল্লাহ আরো বলেন যে, হে আদম সন্তান! তোমার পাপ যদি আসমান সমপরিমাণ হয় এবং তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও এরপরেও আমি তোমাকে ক্ষমা করতে কাউকে পরোয়া করব না বা করি না।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন যে, হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভর্তি পাপ নিয়ে আমার সামনে হাজির হও, তবে আমার সাথে কাউকে শরিক না করে আমার সামনে উপস্থিত হও, তাহলেও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। (মিশকাত ও সুনানে তিরমিযী)।
রাসূল (স) মক্কা বিজয়ের পর সবাই কে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যা ইতিহাসে বিরল ও স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে।
ইনসাফ সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর আরো একটি হচ্ছে ইনসাফ বা ন্যায় বিচার। ইনসাফ বা ন্যায়বিচারের অভাবে মানুষ আজ কত জায়গায় ধুকে ধুকে মরছে ও বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত ও বঞ্চিত হচ্ছে তার সীমারেখা নেই। নিম্নে এ সম্পর্কে ৫টি হাদিস লিখছি।
১ নং হাদিসঃ নু'মান ইবনে বাশীর (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন যে, তোমরা ছেলে সন্তানদের মাঝে সমতা বিধান করবে এবং ইনসাফ বা ন্যায়বিচার করবে। কথাটি তিনি ২ বার বল্লেন তাগিদ বুঝানোর জন্য। (সুনানে নাসায়ী)।
২ নং হাদিসঃ আবু হুরায়রাহ (রা) এর বর্ণনা, নবী (সা) বলেছেন যে, ইমাম বা নেতা, ঢাল স্বরুপ, যার অধীনে থেকে মানুষেরা যুদ্ধ করবে এবং তার দ্বারা নাজাত পাবে। যদি কোনো নেতা আল্লাহর ভয়ের নির্দেশ দয় এবং ইনসাফ পালন করে তাহলে তার সওয়াব রয়েছে। আর বিপরীত করলে এর পরিণতি ভয়াবহতা তার উপর পড়বে। (নাসায়ী)।
৩ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, ন্যায় বিচারক লোকগণ কাল কিয়ামতে আল্লাহর নিকটে তার ডান দিকে একটি আলোময় উঁচু স্থানে বসবে। যারা তার বিচারকার্যে ইনসাফ বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি দেশের বিচার হোক বা সমাজ বা পরিবার যেটাই হোকনা কেন। (নাসায়ী)।
৪ নং হাদিসঃ আবু হুরায়রা এর বর্ণনা, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, যখন কোন শাসক বা বিচারক কোন নির্দেশনা বা ফরমান বা পরোয়ানা প্রদান করে এবং সেটি ইনসাফ ও সুষ্ঠু হয়ে থাকে। তবে তার জন্য ডাবল সওয়াব রয়েছে...। (নাসায়ী)।
৫ নং হাদিসঃ হযরত আবু হুরায়রাহ এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ন্যায়বিচারক বা ইনসাফগার ব্যক্তিগণ কাল কিয়ামতে আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে... যা সাত শ্রেণীর এক প্রকার। (বুখারী এবং মুসলিম)।
একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, দুনিয়াতে কেউ ইনসাফ বা ন্যায়বিচার না পেলে আল্লাহর কাছে একদিন ঠিকই ন্যায় বা সঠিক বিচার পাওয়া এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের লেশ মাত্র নেই ইনশাআল্লাহ। কারণ আল্লাহ হলেন অসীম ও অশেষ ন্যায়বিচার বা ইনসাফকারী। শুধু ঈমান খাঁটি করণ ও ভালো আমল করে রেডি থাকেন!!
যুলুম সম্পর্কে হাদিস
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এর মাঝে আরো একটি বিষয় হলো যুলুম বা অত্যাচার। যুলুম অত্যন্ত গর্হিত ও বান্দার হক বিনষ্টকারী একটি কাবীরা বা বড় গোনাহ। আল্লাহ নিজের উপর যুলুম কে হারাম করে নিয়েছেন। আজ যেদিকে তাকাই শুধ যুলুম দেখতে পাই। যুলুমে গোটা পৃথিবীটা ভরে গেছে। নিম্নে এ যুলুম সম্পর্কে ৫টি হাদিস লিখছি।
১ নং হাদিসঃ আনাস ইবনে মালেক (রা) এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তুমি তোমার ভাইকে যালেম বা অত্যাচারী এবং মাযলূম বা অত্যাচারিত থেকে সহযোগিতা করবে। অত্যাচারীকে সাহায্য করবে যেন তার দ্বারা কেউ অত্যাচারের শিকার না হয় এবং অত্যাচারিত কে সহযোগিতা করবে যেন অত্যাচারীর দ্বারা সে অত্যাচারিত না হয় বা যুলুম থেকে রক্ষা পায়। (সহীহ বুখারী)।
২ নং হাদিসঃ হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন। নিষিদ্ধ সাতটি বিষয়ের একটি হচ্ছে মাজলুম তথা অত্যাচারিত কে সাহায্য করা যেন যালিম বা যুলুমবাজ থেকে যুলুমের শিকার না হয়ে রক্ষা পায়। (সহীহ বুখারী)।
৩ নং হাদিসঃ আবু মুসা (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এক মুমিন আরেক মুমিনের কমপ্লেক্স বা ভবন স্বরূপ। যার একটি অংশ আরেকটি অংশকে মজবুত বা সুদৃঢ় করে। অর্থাৎ হাদিসের ব্যাখ্যায়, এখানে তিনি মাজলুম বা অত্যাচারিত কে সাহায্য করার কথা বলেছেন। (সহীহ বুখারী)।
৪ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, কেয়ামতের দিন জুলুম বা অত্যাচার অন্ধকারে রূপ নেবে। (সহীহ বুখারী)।
৫ নং হাদিসঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর বর্ণনা, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যখন তিনি মুয়ায (রা)কে ইয়ামান পাঠান তখন এই বলে পাঠিয়েছিলেন যে, তুমি মজলুম তথা অত্যাচারিত ব্যক্তির বদ-দোয়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ, তার দোয়া এবং আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল বা পর্দা থাকেনা। (সহীহ বুখারী)।
লেখকের শেষ মন্তব্য
৫০ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস এই ব্লগ বা আর্টিকেলটিতে লেখার চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি উক্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি উক্ত আর্টিকেলে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ 50 এর অধিক হাদিসগুলো আপনার ইসলামী জীবনে ফায়দা বা উপকার দিবে। আরো এরকম নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটির সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url