শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড ভাবসম্প্রসারণভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ সম্পর্কে ভাবসম্প্রসারণ প্রত্যেক সজাগ
ব্যক্তির জানা উচিত। কারণ, সচেতন মানুষ অপরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে
দিতে চায়।
প্রিয় পাঠক, ইসলামে মুসলিমদের রাসূল বা বার্তাবাহক মহানবী (সা) এর বাণীতে রয়েছে যে,
আল্লাহ প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির সাহায্যে থাকে যে অপরের সাহায্যে কাজ করে। তাই, একজন
মানুষ হিসেবে প্রকৃত সুখ পাওয়া উচিত ত্যাগ করে, ভোগ করে নয়। নিম্নে এ সম্পর্কে ৩টি
ভাবসম্প্রসারণ লিখছি।
পেজ সূচীপত্রঃ
প্রথম ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
মূলভাবঃ
ভোগবিলাসের মাধ্যমে প্রকৃত সুখ লাভ সম্ভব নয়। সুখের প্রকৃত উৎস হলো
আত্মত্যাগ ও পরার্থে নিবেদিত জীবন।
সম্প্রসারিত ভাবঃ
ভোগ এবং ত্যাগ মানুষের জীবনের দুই বিপরীত মুখে দিক। মানুষকে সীমাহীন
আকাঙ্ক্ষার দিকে ঠেলে দেয়, যা তাকে আত্মকেন্দ্রিক ও সংবেদনহীন করে
তোলে। ভোগ মানুষকে তাৎক্ষণিক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু এতে দীর্ঘস্থায়ী
তৃপ্তি মেলে না। পক্ষান্তরে, ত্যাগ মানুষকে মহৎ ও উদার
করে। আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্বের পূর্ণবিকাশ ঘটায় এবং জীবনের
প্রকৃত সার্থকতা অর্জন করে।
আরো পড়ুনঃ ভাবসম্প্রসারণ: স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন
যখন কেউ নিজের স্বার্থ পরিহার করে অন্যের কল্যাণে নিজেকে নিবেদন
করে, তখন তার অন্তরে এক অদ্ভুত সুখের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। অসহায় ও
বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের দুঃখ কষ্ট লাঘব করার মধ্যে নিহত থাকে চরম
আত্মতৃপ্তি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, " নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয়
নাই তার ক্ষয় নাই।" ত্যাগই মানুষকে জীবনের সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করে তাকে
অমরত্ব দান করে।
উদাহরণঃ
মাদার তেরেসা ও স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ত্যাগের অনুপম উদাহরণ। তারা
ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অসহায় মানুষের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ
করেছিলেন। ত্যাগের মধ্য দিয়েই তারা মানবতার সেরা আদর্শে
পৌঁছেছিলেন। অপরদিকে, ভোগ-বিলাসে নিমগ্ন মানুষের জীবনে অর্থপূর্ণ সুখ
বা শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
মন্তব্যঃ
জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহত রয়েছে ত্যাগের মহিমায়। অতিরিক্ত ভোগ
মানুষের জীবনে দুঃখ ও বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই, আমাদের উচিত ভোগ পরিহার
করে ত্যাগের আদর্শকে গ্রহণ করা। ত্যাগের মধ্য দিয়েই আমরা প্রকৃত
সুখ, তৃপ্তি এবং জীবনের গভীর অর্থ উপলব্ধি করতে পারে।
দ্বিতীয় ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
মূলভাবঃ
প্রকৃত সুখ কখনো ভোগ বিলাসে নিহিত থাকে না। ত্যাগের মাধ্যমে মানুষের
আত্মিক উন্নতি ঘটে এবং জীবনে আসে প্রকৃত আনন্দ।
সম্প্রসারিত ভাবঃ
জীবনের সুখের আসল মাপকাঠি ভোগ নয়, বরং ত্যাগ। ভোগ বিলাসিতা মানুষের
হৃদয়কে স্বার্থপর ও সংকীর্ণ করে তোলে। ভোগের পেছনে ছুটে মানুষ শুধু
নিজেকে ঘিরেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ত্যাগের মনোভাব মানুষকে উদার এবং বহন
করে তোলে। ত্যাগ মানুষকে অপরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার শক্তি
দেয়। এটি শুধু পরার্থে কাজ করেই আনন্দ দেয় না, বরং এটি মানুষের
মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ এও ঘটায়।
অপরের কল্যাণে কিছু ত্যাগ করার আনন্দ তুলনাহীন। উদাহরণস্বরূপ, মা তার
সন্তানদের জন্য নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করেন। তার এই ত্যাগে তিনি যেমন
সন্তানের সুখ নিশ্চিত করেন, তেমনি তার হৃদয়ে ও আসে এক অভাবনীয়
প্রশান্তি। তেমনি সমাজের কল্যাণে ত্যাগ করা ব্যক্তিরা চিরকাল মানুষকে আলো
দেখিয়ে যান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, " সেই তো
মহান, দুখে-সুখে যারা অন্যের দুঃখে হাসে।"
ভোগ মানে শুধু নিজেকে ঘিরে থাকা। এটি মানুষকে অবনতির পথে ঠেলে
দেয়। ক্ষমতাবান কিংবা ধনীরা যদি ভোগেই সুখ খুঁজে পেতেন, তবে তারা
সবচেয়ে সুখী হতেন। কিন্তু দেখা যায়, ধন-সম্পদে সমৃদ্ধ ব্যাক্তিরাও
অন্তরে শান্তি পান না। পক্ষান্তরে, সাধারণ মানুষ যারা ত্যাগের
মাধ্যমে জীবন কাটায়, তাদের মনে থাকে এক অসীম প্রশান্তি। ত্যাগ জীবনে
অর্থ পূর্ণতা যোগ করে। এটি শুধু ব্যক্তির নয়, গোটা সমাজেরও মঙ্গল
সাধন করে।
ত্যাগের মহিমা মানব জীবনকে মহৎ করে। মহাত্মা গান্ধী, মাদার
তেরেসা, কিংবা স্বামী বিবেকানন্দ---তারা নিজেদের সুখ
স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিবেদন করেছেন। তাদের
এই ত্যাগের জন্যই তারা মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।
মন্তব্যঃ
তাই ভোগ বিলাস নয়, ত্যাগই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। স্বার্থে
নয়, বরং পরার্থে কাজ করার মাঝেই লুকিয়ে থাকে জীবনের প্রকৃত
স্বার্থকতা। ত্যাগই মানুষের আত্মাকে পূর্ণতা দেয় এবং প্রকৃত সুখ এনে
দেয়।
তৃতীয় ভাবসম্প্রসারণঃ ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
মূলভাবঃ
জীবনের প্রকৃত সার্থকতা পাওয়া যায় ত্যাগের মাধ্যমে। ভোগবিলাস ক্ষণস্থায়ী,
কিন্তু ত্যাগ মানুষকে আনন্দের এক অনন্য স্তরে পৌঁছে দেয়।
সম্প্রসারিত ভাবঃ
পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যের
জন্যও। কিন্তু যদি কেউ কেবল ভোগের পেছনে ছুটে বেড়ায়, তাহলে তার
জীবনে কোন অর্থপূর্ণ প্রাপ্তি ঘটে না। ভোগ মানুষের আত্মাকে খালি করে বা
উজার করে দেয় এবং তাকে অসন্তুষ্ট রাখে। অপরদিকে, ত্যাগ মানুষকে
পূর্ণতা দেয় এবং সন্তুষ্ট রাখে। ত্যাগের মধ্যে যে সুখ এবং শান্তি
রয়েছে, তা কখনো ভোগ-বিলাসিতা দিতে পারেনা।
একজন কৃষকের কথা ভাবুন। তিনি নিজের আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে সারাদিন
পরিশ্রম করেন ফসল ফলানোর জন্য। সেই ফসল শুধু তার পরিবারের জন্য
নয়, পুরো সমাজের জন্য। এই ত্যাগের মধ্য দিয়েই তিনি একদিকে নিজের
জীবনযাত্রার মান উন্নত করেন, অন্যদিকে সমাজকেও সমৃদ্ধ করেন। আবার
একজন মা তার সন্তানের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দেন। এই ত্যাগই তার
মাতৃত্বের পূর্ণ।
ত্যাগ শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সামাজিক এবং মানবিক ক্ষেত্রেও
গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে অনেকেই নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করে মানুষের সেবায়
আত্মনিয়োগ করেন। যেমন একজন ডাক্তার, যিনি নিজের আরাম ত্যাগ করে রাত
জেগে রোগীর সেবা করেন। তদ্রুপ, একজন শিক্ষকের ত্যাগ তার
ছাত্রদের ভবিষ্যৎ করতে সাহায্য করে। এ কারণেই ত্যাগ মানুষকে মহৎ, মহান এবং
সম্মানিত করে তোলে।
ভোগের প্রতি আকর্ষণ মানুষকে স্বার্থপর এবং সংকীর্ণ করে তোলে। ভোগের পিছনে
ছুটে মানুষ কখনো প্রকৃত সুখ পায় না। একজন ধনী ব্যক্তি, যার কাছে
সবকিছু আছে, কিন্তু ত্যাগের মহত্ব নেই---সে কখনো তৃপ্তি পায়
না। অন্যদিকে, একজন দরিদ্র ব্যক্তি, যিনি নিজের সামান্য সম্পদও
অন্যের জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত, তিনি প্রকৃত সুখের স্বাদ পেয়ে
থাকেন।
আরো পড়ুনঃ ২টি ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এ প্রবাদটি ঘিরে
ত্যাগের উদাহরণ আমাদের ইতিহাসে অসংখ্য রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম, স্বামী বিবেকানন্দ, কিম্বা মাদার তেরেসা ইত্যাদি
ব্যাক্তিবর্গ, যারা ত্যাগের মাধ্যমে মানবতার জন্য কাজ করে
গেছেন। তাদের ত্যাগই তাদের মহান করেছে এবং আজও তারা মানুষকে অনুপ্রাণিত
করছেন।
মন্তব্যঃ
ত্যাগ জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং আমাদের সত্যিকারের মানুষ হতে সাহায্য
করে। তাই সুখের আসল রহস্য খুঁজতে চাইলে আমাদের ত্যাগের পথেই হাঁটতে
হবে। এই পথেই আমরা পাব জীবনের প্রকৃত আনন্দ এবং স্বার্থকতা।
লেখকের শেষ মন্তব্য
ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাবসম্প্রসারণটি বর্তমান সময়ে এর উপর
আমল করা খুব কার্যকরী। প্রিয় পাঠক, উক্ত আর্টিকেলে আমরা বলতে চেয়েছি যে, নিজেকে
পরম আনন্দিত ও আত্মিক শান্তি দিতে হলে ত্যাগের পথ ধরে হাঁটুন, তাহলেই আশা করি
প্রকৃত সুখ পাবেন। সম্মানিত ছাত্র-ছাত্রী ভাই ও বোনেরা,
আমরা এই ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাবসম্প্রসারণটি প্রায় একই অর্থে ৩টি
লিখেছি, যেকোনো একটি আপনার পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারেন। অথবা, তিনটি পড়ে নিজের
মননে একটি ভাব এনে নিজে বিষয়টি ধারণ করে ও অনুধাবন করে পরীক্ষার খাতায় লিখলে
স্বার্থক হতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছি। আরো এমন ব্লগ পেতে সাথেই থাকুন
ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url