সৎ চরিত্র বা চরিত্রই সম্পদ সম্পর্কে রচনা বা প্রবন্ধ

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্বসৎ চরিত্র বা চরিত্রই সম্পদ সম্পর্কে চরিত্রে ঠিক রাখতে আগ্রহী ব্যক্তি বা ছাত্র-ছাত্রীদের জানা উচিত। কারণ, চরিত্র গঠণের প্র্যাক্টিস ছাত্র বা ছাত্রী জীবন থেকে না হলে বড় হয়ে চরিত্র গঠণ খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। চরিত্র মানুষের মানবিক গুণাবলীতে প্রতিফলন ঘটায়। 

সৎ-চরিত্র-বা-চরিত্রই-সম্পদ-রচনা

প্রিয় পাঠক, সৎ চরিত্র মানুষকে পাশবিক আচরণ থেকে আলাদা করে ফেলে। মানুষের চিন্তা, কর্ম এবং সামাজিকজীবন তার চরিত্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়। চলুন নিম্নে চরিত্র নিয়ে বাংলা রচনা বা প্রবন্ধ পড়ি এবং জীবনে বাস্তবায়ন করি।

পেজ সূচীপত্রঃ

চরিত্র কি?

চরিত্র হলো ব্যাক্তির আদর্শ ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য। এটি দুই প্রকারের হতে পারেঃ সচ্চরিত্র এবং দুশ্চরিত্র। সচ্চরিত্র ব্যক্তি ন্যায়, সততা এবং মানবিক গুণে গুণান্বিত হয়, যা সমাজের জন্য সম্পদ স্বরূপ। অন্যদিকে, দুশ্চরিত্র ব্যক্তি লুকানো পশুত্বের আধার বা পাত্র। সচ্চরিত্র ব্যক্তি মানব জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং জাতির সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। 

চরিত্র গঠনের গুরুত্ব

মানুষের জীবনের চরিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। চারিত্রিক শক্তি একজন মানুষকে বিশ্বভরেণ্য ও চিরস্মরণীয় করে তুলে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে এভাবে যে, 

আরো পড়ুনঃ অধ্যাবসায় রচনা - শ্রমের মর্যাদা রচনা সম্পর্কে পড়ুন

"হোয়েন মানি ইজ লস্ট নাথিং ইজ লস্ট

হোয়েন হেলদ ইজ লস্ট সামথিং ইজ লস্ট

হোয়েন ক্যারেক্টার ইজ লস্ট এভরিথিং ইজ লস্ট"

অর্থ হলো, যখন টাকা হারায় যেন কিছুই হারায় না, যখন স্বাস্থ্য হারায় যেন কিছু হারায় আর যখন চরিত্র হারিয়ে যায় তখন যেন সবকিছু হারিয়ে যায়। তাই বুঝা গেল চরিত্র গঠনের গুরুত্ব কেমন বা কতটুকু?

শিক্ষার মাধ্যমে চরিত্র গঠন

শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হলো চরিত্র গঠন। এজন্য প্রয়োজন সততা ন্যায় পরায়ণতা এবং ধৈর্যের মতো গুণাবলীর বিকাশ নিজের মধ্যে হওয়া। শৃঙ্খলা ও সময় অনুবর্তিতা চর্চা করা। মানব প্রেম এবং দেশপ্রেমের চেতনা বুকে লালন করা। হিংসা ও বিদ্বেষ দমনে সচেষ্ট থাকা। এবং মানবকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হওয়া।

চরিত্র গঠনের প্রচেষ্টা

চরিত্রবান হতে হলে নিজেকে চেষ্টা-প্রচেষ্টা করতে হবে এক্ষেত্রে যে নিজের ভিতরে লোভ, -লালসা এবং অসৎ রচনা যেন না আসে। সচ্চরিত্র গঠনে ধৈর্য, আত্মসংযম এবং জীবনের উচ্চ আদর্শের জন্য অনুশীলন ও নিত্যনৈমিত্তিক প্র্যাকটিস বা চর্চা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

মহৎ চরিত্রের উদাহরণ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যীশুখ্রীষ্ট বা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম, গৌতম বুদ্ধ, মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ। এই সমস্ত ব্যক্তিদের আদর্শে আদর্শিত হতে পারলে সৎ চরিত্রের গুণাবলী নিজের ভিতর এসে পড়বে। বিশেষ করে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করলে শ্রেষ্ঠ চরিত্রবান হওয়া যাবে এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। 

চরিত্র গঠনমূলক শিক্ষার ভূমিকা

শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হলো চরিত্র গঠন। শিক্ষা শুধু জ্ঞান অর্জন বা কর্মদক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যম নয়; এটি মানুষের নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়। চরিত্র গঠনে শিক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলোঃ 

  • ন্যায়-নীতি ও সততার বিকাশ
  • আচার-আচরণের উন্নয়ন
  • দেশপ্রেম ও মানব প্রেম
  • মন্দ প্রবৃত্তির দমন
  • মানবিক গুণাবলীর চর্চা ইত্যাদি।

চরিত্র গঠনে পারিবারিক ভূমিকা

চরিত্র গঠনে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের আচরণ একজন শিশুর নৈতিক ভিত্তি তৈরি করে। একটি সুশৃংখল পরিবারে শিশুকে সৎ ও আদর্শবান করে গড়ে তুলতে পারে। 

চরিত্র গঠনের সামাজিক সংগঠনের ভূমিকা

পাড়া-প্রতিবেশী, স্কুল এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও চরিত্র গঠনে ভূমিকা পালন করতে সহায়ক। বয় স্কাউট, গার্ল গাইড, রেড ক্রস ইত্যাদি সংগঠনের মাধ্যমে শিশুরা যৌথ কাজের আনন্দ এবং মানবিক মূল্যবোধ শিখতে পারে।

চরিত্র গঠনে ব্যক্তিগত সাধনা

চরিত্রবান হতে হলে ব্যক্তিকে নিজ প্রচেষ্টা ও সাধনায় অগ্রসর হতে হয়। লোভ-লালসা, রাগ বা ক্রোধ এবং অসৎ প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় চরিত্র গঠনের মূল মন্ত্র। আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য্য এবং নৈতিক মূল্যবোধ অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্র ফুটে ওঠে।

চরিত্রের অবক্ষয় এবং বর্তমান পরিস্থিতি

আজকের ভোগবাদী বিশ্বে চরিত্রের অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে খুব বেশি। লোভ-লালসা, দুর্নীতি এবং অন্যয় প্রবণতা বেড়েই চলছে। মানুষের নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, যা ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যার কারণে মানব জীবন হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে দিবানিশি। তাই সজাগ ও সতর্ক হয়ে সৎ চরিত্র গঠনের কোনো বিকল্প নেই। 

সচ্চরিত্রের মৌলিক দিকগুলি

চরিত্র মানব জীবনের অন্যতম মৌলিক বিষয়। এটি ব্যক্তির জীবনের পথপ্রদর্শক এবং তাকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। নিচে পাঁচটি সৎ চরিত্র বা চরিত্রই সম্পদের মৌলিক দিক লেখা হলো।

  1. বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি
  2. নেতৃত্বের গুণাবলী
  3. মানসিক শান্তি
  4. সামাজিক মর্যাদা
  5. সাফল্যের চাবিকাঠি

চরিত্র গঠনে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা

ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা মানুষের নৈতিকতা ও চারিত্রিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়। এটি নিম্নের কতগুলো কাজ উপহার দেয়। 
  • ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাটা চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। 
  • আত্মশুদ্ধি নিয়মিত চর্চা করা সৎ চরিত্রের অন্যতম গুণ।
  • মানবিকতা বা অপরের প্রতি সহনশীল বা সহানুভূতি প্রদর্শন চরিত্রের আদর্শ।

চরিত্র গঠনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো হলো

চরিত্রই সম্পদ এটি ব্যক্তিকে সঠিক রাস্তায় ধাবিত করে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়। তাই নিজে চরিত্র গঠনের কাজগুলো করতে হবে এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করা জরুরী ও উচিত। তাহলেই জাতি, সমাজ এবং রাষ্ট্র উন্নয়ন সহজ হবে এবং সবাই সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারব। নিম্নে বিষয়গুলো তুলে ধরছি।

আরো পড়ুনঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড সম্পর্কে ৫টি ভাবসম্প্রসারণ

  1. সততার চর্চা করা।
  2. লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করা।
  3. আত্মসমালোচনা করা।
  4. ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা।
  5. আত্মনিয়ন্ত্রণ করা।
  6. আত্মশিক্ষা।
  7. পরিকল্পিত জীবনযাপন।
  8. সামাজিক সেবা।
  9. ইতিবাচক চিন্তা।
  10. নৈতিক শিক্ষার প্রসার। 

লেখকের শেষ কথা

সৎ চরিত্র বা চরিত্রই সম্পদ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ বা রচনা উক্ত ব্লগ বা আর্টিকেলটিতে লিখতে প্রয়াস করেছি। প্রিয় পাঠক, মূলত চরিত্র হলো মানব জীবনের আলোকবর্তিকা। এটি মানুষের ব্যক্তিত্বকে মহিমান্বিত করে এবং সহজে তার অবস্থান সুসংহত করে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত চরিত্র গঠনে সচেতন হওয়া। নতুন প্রজন্মকে সৎ ও আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে যাতে একটি উন্নত ভবিষ্যৎ পাবে। আরো নিয়মিত ব্লগ পেতে সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।

"চরিত্রের শক্তি অর্জন করো তাহলেই জীবনের সাফল্য মর্যাদা তোমার সঙ্গে হবে"

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url