শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড সম্পর্কে ৫টি ভাবসম্প্রসারণভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ সম্পর্কে ভাবসম্প্রসারণ জানা মানুষের উপকার করতে
পছন্দ এমন লোকদের জানা এবং বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞাত হওয়া আবশ্যক।
মূলত ভোগ বা খেয়ে পান করে সুখে পাওয়া যায় না, প্রকৃত সুখে অনুভূত হয় যেকোনো
সৃষ্টিকুলের জন্য ত্যাগ বা কষ্ট স্বীকারের মাঝেই। আজকের আর্টিকেলে নির্দিষ্ট
প্রবাদটির কয়েকটি ভাবসম্প্রসারণ লিপিবদ্ধ করছি।
পেজ সূচীপত্রঃ
ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ এর ভাবসম্প্রসারণ-১
মানুষের জীবনের আসল আনন্দ এবং শান্তি শুধু ভোগবিলাসে সীমাবদ্ধ নয্ প্রকৃত সুখ
আসে আত্মত্যাগ এবং সেবার মধ্য দিয়ে। "ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ" এই বাক্যটি
আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল নিজের স্বার্থসিদ্ধি নয়
বরং অন্যের কল্যাণের নিজেকে নিয়োজিত করা।
ভোগ বিলাস মানুষের লোভ ও স্বার্থপরতাকে বাড়িয়ে তোলে। এটা ক্ষণস্থায়ীভাবে আনন্দ
দিলেও দীর্ঘস্থায়ীভাভাবে সুখ দিতে পারে না। বিপরীত দিকে, ত্যাগ মানুষকে পরম
তৃপ্তি এনে দেয়; ত্যাগ মানে শুধু বস্তুগত সম্পদ দান নয় বরং নিজের সময়, জ্ঞান,
শ্রম এবং ভালোবাসা দিয়ে অন্যের হিত সাধন করা। উদাহরণস্বরূপ, একজন মা যখন নিজের
আরাম আয়েশ ছেড়ে দিয়ে সন্তানের যত্ন নেন তখন আনন্দ তখন সেই ত্যাগেই তার পরম আনন্দ
মিলে।
আরো পড়ুনঃ ভাবসম্প্রসারণ: স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন
ইতিহাসে, আমরা দেখি মহান ব্যক্তিরা নিজেদের সুখ বিসর্জন দিয়ে মানব কল্যাণে
নিজেদের উৎসর্গ করেছেন; যেমন মহাত্মা গান্ধী নিজের ব্যক্তিগত সুখ ত্যাগ করে
ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, তেমনি নেলসন ম্যান্ডেলা নিজের জীবনের
মূল্যবান সময়ই কারাগারে কাটিয়ে বর্ণবাদীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, মানবতার সেবা
করেছেন তাদের এই ত্যাগই পৃথিবীকে আরও সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ করে তুলেছে।
ত্যাগের মধ্য দিয়ে মানুষ আত্মার প্রশান্তি খুঁজে পায়, যা ভোগের মাধ্যমে কখনো
অর্জন করা সম্ভব নয়। এটি আমাদেরকে নিঃস্বার্থ, মানবিক ও মহান হতে শিক্ষা দেয়।
তাই, জীবনে প্রকৃত সুখ পেতে হলে ভোগ বিলাসের পেছনে না ছুটে ত্যাগের মহান আদর্শ
গ্রহণ করা উচিত।
ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ এর ভাবসম্প্রসারণ-২
মূলভাবঃ "ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ" বাক্যটি মানুষের জীবনের
প্রকৃত আনন্দ ও তৃপ্তির উৎস সম্পর্কে গভীর দার্শনিক বার্তা বহন করে। ভোগ সাময়িক
সুখ দিলেও ত্যাগ মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং মানসিক পরিতৃপ্তি এনে দেয়। এটি
মানুষের নিঃস্বার্থতা এবং মানবিকতার চূড়ান্ত বহিঃ প্রকাশ স্বরুপ।
সম্প্রসারিত ভাবঃ প্রতিটি মানুষ জীবনে সুখের অন্বেষণে ছুটে চলে, কেউ
সম্পদে, কেউ ক্ষমতায়, আবার কেউ ভোগ বিলাসে সুখ খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু এই সুখ
ক্ষণস্থায়ী এবং বহির্মুখী ভোগের আনন্দ আমাদের চিত্তকে অস্থায়ী তৃপ্তি দেয়, যা
দ্রুতই ম্লান হয়ে যায়। অন্যদিকে ত্যাগ হলো এমন এক অভ্যাস যা মানুষের হৃদয়ে
স্থায়ী প্রশান্তি ও তৃপ্তি এনে দেয়।
ত্যাগের প্রকৃতি অত্যন্ত বিস্তৃত, এটি শুধু অর্থ বা সম্পদ দানের মধ্যে সীমাবদ্ধ
নয়। ত্যাগ হতে পারে সময়ের, শ্রমের, জ্ঞানের, এমনকি নিজস্ব আরামের।
উদাহরণস্বরূপ, এক শিক্ষক নিজের স্বার্থ উপেক্ষা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে
ছাত্রছাত্রীদের জীবনে আলোর দিশা দেয়। এক চিকিৎসক ক্লান্তি ভুলে রোগীর সেবা করেন,
আর এমন ত্যাগের মধ্যেই এক অনন্য তৃপ্তি লুকিয়ে থাকে, যা ভোগের মাধ্যমে কখনো
অর্জন করা সম্ভব নয়।
ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ব্যক্তির এই স্বার্থহীন
প্রচেষ্টা সমাজে একটি শক্তিশালী বন্ধনের সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, শেরে বাংলা,
মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমান ইনারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ
করেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। তাদের এই ত্যাগের ফলেই আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন
বাংলাদেশ।
এছাড়া, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও ত্যাগের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম ধর্মে কুরবানীর
মাধ্যমে ত্যাগের ঈমান, আল্লাহ ভীতি এবং মানবিক চেতনা জাগ্রত করা হয়, হিন্দু
ধর্মে ত্যাগকে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসাবে গণ্য করা হয়। এবং ত্যাগের
মাধ্যমে মানুষ আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভ করে এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি
করে।
মন্তব্যঃ "ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ" এই ভাবনা আমাদের জীবনের
দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। এটি আমাদের ভোগবিলাসের পরিবর্তে নিঃস্বার্থ সেবার
পথে পরিচালিত করে। ত্যাগ কেবল ব্যক্তিগত উন্নতি নয় বরং সামগ্রিক মানবজাতির মঙ্গল
সাধন করে। যারা ত্যাগের আদর্শ অনুসরণ করেন তাদের জীবন আলোকিত হয় এবং তারা সমাজ,
দেশ এবং পৃথিবীতে উদাহরণ হয়ে থাকেন।
তাই আমাদের উচিত, ভোগের পিছনে অযথা দৌড়াদৌড়ি না করে ত্যাগের মহত্ব গ্রহণ করতে
হবে। এটি আমাদের জীবনের শান্তি, আনন্দ এবং মানবিকতার আসল অর্থকে উপলদ্ধি করতে
সাহায্য করবে।
ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ এর ভাবসম্প্রসারণ-৩
মূলভাবঃ সুখ হলো এমন এক মানসিক অবস্থা, যা ভোগবিলাসের মাধ্যমে নয়
বরং ত্যাগ ও নিঃস্বার্থ কর্মের মাধ্যমে অর্জিত হয়। নিজস্ব সুখের চেয়ে অন্যের
মঙ্গল সাধনের চেষ্টায় মানুষকে প্রকৃত শান্তি এবং সন্তুষ্টি প্রদান করে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ মানুষ জন্মগতভাবে সুখ-সন্ধানী। তবে অধিকাংশ মানুষ
ভুল পথে সুখের অন্বেষণ করে। সম্পদ ভোগ বিলাস বা আরাম আয়েশের মধ্যে সুখের সন্ধান
করলেও এগুলো শুধু সাময়িক আনন্দ দেয়। বাস্তব জীবনে প্রকৃত সুখ আসে যখন মানুষ
নিঃস্বার্থভাবে নিজের চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে অন্যের জন্য কিছু করে বা উপকার
করে।
আরো পড়ুনঃ ১২ টি Tense এর গঠন ও চেনার উপায় বিস্তারিত জানুন
জীবনে ভোগ মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলে। এটি একসময় মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি
এবং একাকিত্বের জন্ম দেয়। অন্যদিকে, ত্যাগের আনন্দ অসীম, একজন দরিদ্র ব্যক্তি
যখন তার এক টুকরো রুটি ক্ষুদার্থের সঙ্গে ভাগ করে নেয় তখন তার মনে যে প্রশান্ত
সৃষ্টি হয় এটা পৃথিবীর কোন সম্পদে কেনা সম্ভব নয়।
উদাহরণ হিসেবে, আমরা প্রকৃতির দিকে তাকায় একটি গাছ সারাজীবন মানুষের জন্য ছায়া,
ফল এবং অক্সিজেন দেয়, তার নিজের জন্য কিছু চায় না। গাছের এই ত্যাগেই তার মহত্ব।
তেমনি মানুষের জীবনও অর্থবহ হয়ে ওঠে যখন সে ভোগের পরিবর্তে ত্যাগের মাধ্যমে
নিজের অস্তিত্বকে অন্যের জন্য উপকারী করে তুলে।
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায়ও ত্যাগের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রাচীন যুগে ঋষিমণি এবং
বর্তমান যুগের বিভিন্ন মানব সেবকরা তাদের ভোগ বিলাস ত্যাগ করে মানব কল্যাণের
নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, বিধেয় সমাজ, দেশ এবং বিশ্ব দরবারে তাদের অবদান
চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
মন্তব্যঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ একটি অনন্য দর্শন যা মানুষকে
আত্মকেন্দ্রিকতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে। এটি আমাদের অন্যের কল্যাণে কাজ করতে
অনুপ্রাণিত করে এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করায়। ত্যাগ মানুষের মনে এমন এক
প্রশান্তি এনে দেয় যা ভোগের মাধ্যমে কখনো অর্জিত হওয়া সম্ভব হয় না। তাই, আমাদের
জীবনে সুখের আসল উৎস খুঁজতে ত্যাগের পথ অনুসরণ করা জরুরী।
ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ এর ভাবসম্প্রসারণ-৪
মূলভাবঃ তৃপ্তির আসল রূপ পাওয়া যায় যখন আমরা নিঃস্বার্থভাবে
ত্যাগের মাধ্যমে অন্যের উপকার করি। ভোগ সাময়িক আনন্দ দিলেও ত্যাগ মানুষের হৃদয়ে
স্থায়ী সুখের বীজ বপন করে।
সম্প্রসারিত ভাবঃ জীবনকে অর্থবহ করতে হলে শুধু নিজের জন্য বাঁচা নয়
অন্যের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। ভোগ মানুষের মনে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, কারণ
এটি চাহিদা পূরণ করে। তবে চাহিদা মেটার সঙ্গে সঙ্গে এই ভোগের আনন্দ হারিয়ে যায়।
অপরদিকে ত্যাগের মাধ্যমে পাওয়া যায় প্রশান্তি এবন যা হয় দীর্ঘস্থায়ী।
ত্যাগের চর্চা মানুষকে আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত করে। এটি আমাদের মনকে উদার এবং
হৃদয়কে নরম করে তোলে। একটি শহরের উদাহরণ হলো, একজন দরিদ্র কৃষক তার নিজস্ব শ্রম
দিয়ে আমাদের খাদ্য উৎপাদন করে নিজের কষ্টের বিনিময়ে সে সমাজের চাহিদা পূরণ করে
এবং এই নিঃস্বার্থ ত্যাগের মধ্যেই তার প্রকৃত সম্মান।
ত্যাগ শুধু ব্যক্তিগত পর্যায় নয়, সমষ্টিগত ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। একটি উন্নত
সমাজ গড়ে ওঠে সেই সব মানুষের মাধ্যমে যারা নিজেদের আরামের চেয়ে বৃহত্তর
স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। সেজন্য বড় বড় সামাজিক বিপ্লব হয়েছে যে সব মানুষ
নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করেছেন তাদের জন্য। মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা এবং
মার্টিন লুথার কিং এর মত ব্যক্তিত্বরা ত্যাগের আদর্শ অনুসরণ করেই ইতিহাসে নিজেদের
জায়গা করে নিয়েছেন।
ত্যাগ মানুষকে আভ্যন্তরীন শান্তি এনে দেয়। এটি তাকে আধ্যাত্মিক এবং মানবিক
দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমৃদ্ধ করে। ধর্মীয় মূল্যবোধেও ত্যাগের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
ত্যাগ মানুষকে শুধু পৃথিবীতেই নয় বরং পরকালেও পুরস্কৃত করে।
মন্তব্যঃ ত্যাগের সৌন্দর্য এমন যা শুধু গ্রহণকারীরই নয় দাতার জীবনেও
পরিবর্তন আনে। এটি জীবনে এক ধরনের পূর্ণতা এবং গভীর আনন্দ যোগ করে। একমাত্র
ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত সুখ খুঁজে পেতে পারে। তাই, আমাদের উচিত ভোগ
বিলাসের পিছনে না ছুটে ত্যাগের মহত্ত্ব উপলব্ধি করা এবং তা জীবনে ধারণ করা।
লেখকের শেষ মন্তব্য
ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ সম্পর্কে প্রায় সমার্থক ৪টি ভাবসম্প্রসারণ লিখেছে।
আমরা আশা করছি আপনি একজন ছাত্র বা ছাত্রী হলে কিংবা জীবনের দর্শন নিয়ে চিন্তাশী
হলে প্রকৃত সুখ যে ত্যাগের মধ্যে রয়েছে ভোগের মধ্যে নেই এটা বুঝতে পেরেছেন। প্রিয়
পাঠক, আরো এ রকম নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট
আব্দুন নূর আইটির সাতেই থাকুন
ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url