অতিরিক্ত ঘুম কিসের লক্ষণদুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় জানার জন্য এখানে এসেছেন তাই না? দুশ্চিন্তা,
হতাশা, ডিপ্রেশন এগুলো বর্তমান সময়ের খুবই অহরহ ঘটমান একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেকেই দুশ্চিন্তা ও হতাশার জন্য আত্মহত্যা করছে।
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে ইসলামিক উপায়ে কিভাবে দুশ্চিন্তা, হতাশা ও ডিপ্রেশন
দূর করা যায় ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে লিখব। পাশা দুশ্চিন্তা দূর করার সূরা ও
দোয়াগুলো ও উল্লেখ করব।
পেজ সূচীপত্রঃ দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় সংশ্লিষ্ট বিষয়
জানুন
দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায়
দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় একাধিক রয়েছে যেগুলোর কতিপয় এখানে উল্লেখ
করছি। মানুষ যখন কোন বিপদ-আপদে পড়ে তখন চিন্তিত হয় এবং দুশ্চিন্তা অনুভব করে।
আবার মানুষের যখন রিজিক বা জীবিকার অভাব হয় তখনও মানুষ চিন্তা করে, দুশ্চিন্তা
করে। আবার মানুষ যখন কোন কারণে কষ্ট করে বা কষ্টে ভোগে তখনও মানুষ দুশ্চিন্তা করে
যে কিভাবে আমার এই কষ্ট দূর হবে।
মানুষের যখন আশা করে আশা পূরণ হয় না তখন সে
হতাশ হয় এবং দুশ্চিন্তা করে। তো এই দুশ্চিন্তা দূর করার যে সমস্ত উপায় রয়েছে
ইসলামে সেগুলো এখানে বর্ণনা করছি। তো চলুন দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায়
গুলো এখন আলোচনা করি।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব - শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য
সালাত বা নামাজ আদায় ঃ দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় একটি উপায়
হচ্ছে- মানুষ যখন কখনো কোন কারনে কোন বিপদ-আপদে বা মসিবতের নিমজ্জিত হয় তখনই
আল্লাহর স্মরণ অর্থে তাকে সালাতে দাঁড়িয়ে যেতে হবে এটা আল্লাহর রাসূল এর পক্ষ
থেকে আমরা শিক্ষা পাই।
আল্লাহ রাসুল যখনই কখনো কোন অস্থিরতা চিন্তা ভাবনের পতিত
হতেন তখনই সুন্দর করে অজু করে পাক পবিত্রতা অর্জন করে সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন।
এক্ষেত্রে সালাত তাকে তার বিপদ-আপদ এবং অস্থিরতা থেকে স্থির করবে এবং বিপদ আপদ
দূর করবে। আল্লাহ বলছেন যে নিশ্চয়ই সালাত বা নামাজ তোমার জন্য শান্তির মাধ্যম বা
স্থির হওয়ার উপায়।
ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা ঃ দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক
উপায় আরো একটি উপায় হচ্ছে- কোন বন্ধ যখন বেশি বেশি পাপ করে, অন্যায় করে, অশ্লীল
কাজে জড়িয়ে পড়ে, এবং আরো বিভিন্ন আল্লাহ বিরোধী কাজ করে তখন তার মাধ্যমে ছোট
বড় বিভিন্ন ধরনের পাপ হয় এমনকি ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়ার মত পাপ কাজ
হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে বান্দাকে ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ
পাপ কাজ করার মাধ্যমে অন্তরে মরিচা বা জং ধরে যায় এবং আন্তরিকভাবে খুবই অস্বস্তি
লাগে।
আর ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে অন্তর সজীব হয় এবং পাপ
কাজগুলো দূর হয়ে যায় এমনকি নেকিতে পরিণত হয় এই পাপগুলো। পাশাপাশি ইস্তেগফার
করার মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন সুখ, স্বস্তি ও শান্তির দরজা খুলে যায়।
যেমন
ইস্তেগফারের মাধ্যমে মানুষ আশা ফিরে পাই, হতাশা দূর হয়, জীবিকা নির্বাহ সহজ হয়ে
যায়, বিপদ আপদ দূর হয়ে যায়, এবং আল্লাহকে যেটাই বলে আল্লাহ তা শুনেন অর্থাৎ সে
মুস্তাযাবুদ দাওয়া হয়ে যায় মানে আল্লাহর কাছে যা চাই সেটাই আল্লাহ কবুল করে
ইত্যাদি।
কষ্টের পর সুখ আসে ঃ দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় আরো একটি
উপায় হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন দুনিয়াটাকে আবাদ করার
জন্য এবং তাকে বিভিন্নভাবে বা উপায়ে পরীক্ষা করার জন্য। এক্ষেত্রে আল্লাহ
তায়ালা মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছেন তার দাসত্ব ও এবাদত করার জন্য। হাদিসে বলা
হয়েছে পৃথিবীটা হচ্ছে আখেরাতের জন্য শস্যক্ষেত্র।
অর্থাৎ এই দুনিয়া নামক শস্যক্ষেত্রে মানুষ যেমন সে শস্য ফলাবে এবং শস্যের তদারকি
দেখাশোনা এবং সচেতনতার সাথে কাজ করবে সে তেমন ফল পাবে। অনুরূপভাবে আখেরাতের জন্য
মানুষ আল্লাহকে স্মরণ রেখে মৃত্যুকে ভুলে না গিয়ে সে আল্লাহ তায়ালার
আদেশ-নিষেধকে কতটুকু মানতে পারতেছে বিষয়টি আল্লাহতালা অবলম্বন করছেন সাত আসমানের
উপর থেকে।
এহেন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে জীবনের সুখ থাকতে পারে আবার কষ্ট আসতে পারে।
এজন্য কষ্টের সময় শুধু আল্লাহকে স্মরণে রাখলাম আর সুখের সময় আল্লাহকে ভুলে
গেলাম এটা করলে চলবে না। এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমার এখন কষ্ট ইনশাল্লাহ একসময়
সুখ আসবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা তার মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমের মধ্যে ঘোষণা
করেছেন নিশ্চয়ই কষ্টের পরে সুখ আসে এই বিশ্বাস যার থাকবে তার কষ্ট নামক
দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে।
তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস ঃ দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় আরো একটি
উপায় হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বে তাকদীর বা
মানুষকে যে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে সৃষ্টি করবেন কে কিভাবে চলবে কে কি খাবে
তাদের চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করে রেখেছেন।
এক্ষেত্রে
আল্লাহ তায়ালা সূরা লোকমানের শেষের আয়াতে বলছেন যে নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে
রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান, বৃষ্টিপাতের জ্ঞান, মায়ের পেটে সম্ভাব্য সন্তানের
জ্ঞান,
মানুষের কামাই বা রোজগারের জ্ঞান এবং মানুষের মৃত্যুর জ্ঞান। অত্র আয়াতটি থেকে
এটাই প্রতীয়মান হয়ে যায় যে যে যাহাই করি না কেন একসময় মরতে হবে, রোজগার যেটা
আল্লাহ যতটুকু নির্ধারণ করে রেখেছেন ততটুকুই হবে, আকাশে বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও
বৃষ্টি হবে কিনা এটা একমাত্র তিনি বলতে পারবেন ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি জ্ঞান
এবং বিশ্বাস থাকলে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে দুশ্চিন্তাগুলো আসে সেগুলো দূর
হয়ে যাবে।
আল্লাহর প্রতি ভরসা ঃ দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় আরো একটি
উপায় হচ্ছে- আল্লাহর প্রতি যে কোনো বিপদে-আপদে, দুশ্চিন্তায়, দুর্ভাবনায়
ও হতাশায় ভরসা রাখলে বা ভরসা করলে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে
আল্লাহতায়ালা বলছেন মুমিনদের আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা উচিত। অন্যত্রে বলেছেন যে
যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
তাহলে বুঝা গেল আয়াতগুলি দ্বারা যে বিপদ-আপদে আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখলে আল্লাহ
বিপদ আপদ দূর করে দিবে। দুশ্চিন্তাই দুর্ভাগনায় আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখলে
দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা দূর করে দেবেন বা দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা দূর হওয়ারও
আল্লাহতালা উপায় বলে দিবেন। কিংবা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাশা বা হতাশায় ভুগলে
আল্লার প্রতি ভরসা রাখলে আল্লাহতালা তার আশা ফিরায় দিবেন এবং হতাশা দূর
করবেন।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সূরা
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সূরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। সুপ্রিয় পাঠক,
বলছি শুনুন, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কুরআনুল কারীমের মধ্যে যে
বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো হচ্ছে যে কোরআন মাজিদের শুধুমাত্র একটি সূরাই নয় বা
একটি পারা নয় বা একটি আয়াত নয় কিংবা আয়াতের একটি অংশই নই বরং পুরো কোরআন
মাজীদ টাই হচ্ছে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় স্বরূপ।
সম্মানিত পাঠক, বলতে চাচ্ছি যে মহান রাব্বুল আলামিন ১৫ নম্বর পারার সূরা বানী
ইসরাইলের মধ্যে বলেছেন যে আমি কুরআনের মধ্যে যা কিছু অবতীর্ণ করেছি সবকিছুই হচ্ছে
শিফা বা রোগ থেকে মুক্তির উপায় স্বরূপ এবং পুরো কুরআন মাজীদ টাই হচ্ছে রহমত দয়া
স্বরূপ।
অত্র আয়াতটি থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে কোরআন মাজীদ যদি রহমতের আধার
হয় আর এই কোরআন মাজীদ বা কারিম বা হাকিম কে যে পাঠ করবে বা যারাই পাঠ করবে তারা
কি আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভুক্ত হবে না?
আর যারা আল্লাহর রহমতের ভিতরে থাকবে তাদেরকে কোন দুশ্চিন্তা বা দুর্ভাবনা থাকতে
পারে। কাজেই কোরআন মাজীদ পড়লে যে কোনো দুশ্চিন্তা বা দুর্ভাবনা মনের থেকে চলে
যাবে, দূর হয়ে যাবে এবং মানসিকভাবে শান্তি অনুভব হবে। কাজেই কোরআন মাজিদ পড়ুন,
শুধু একটি সূরাই নয় কিংবা একটি আয়াত নয় কিংবা একটি আয়াতের অংশই নয় বরং আল
কোরআনুল হাকিমের যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সূরা বা যেকোনো অংশ বা যেকোনো আয়াত
আপনি পড়লেই আপনার ভিতর থেকে দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা ইনশাআল্লাহ চলে যাবে এবং দূর
হয়ে যাবে।
দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদাপদ থেকে মুক্তির উপায়
দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদ আপদ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে এখানে আলোচনা পেশ
করছি। সুপ্রিয় পাঠক মহোদয়, মানুষের ভিতরে দুশ্চিন্তা কিংবা ডিপ্রেশন বা হতাশা
অথবা হালকা থেকে কঠিন বিপদ আপদ দেখা দিতে পারে বা মানুষ এগুলোর বিভিন্ন সময়
মুখোমুখি হতে পারে।
এক্ষেত্রে বিচলিত হওয়া যাবে না, অস্থির হওয়া যাবে না, যেটি
করতে হবে সেটি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার উপরে কঠিন ভরসা করতে হবে যে যেকোনো
পরিস্থিতিতে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবে, বাঁচাবে এবং উদ্ধার করবে।
দুশ্চিন্তা মানুষের একটা স্বাভাবিক ব্যাধি যেটা যেকোনো সময় আসতে পারে। এক্ষেত্রে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেটা ফায়সালা দিয়েছেন সেটা
হচ্ছে সু ধারণা করা আল্লাহকে এবং ভালো কল্পনা বা পরিকল্পনা করা।
কারণ আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে আল্লাহকে মানুষ যেমন ধারণা বা
কল্পনা করবে তাকে তেমনি পাবে। কাজেই প্রিয় পাঠক আপনি যদি আল্লাহকে ভালো ধারণা
করেন তাহলে তাকে ভালো পাবেন আর খারাপ ধারণা করলে খারাপ পাবেন।
এজন্য বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং সুখে শুকরিয়া আদায় করতে হবে তাহলে সুখে
দুখে দুইটাতেই সওয়াব পাবেন। হাদিসে বলা হয়েছে মানুষের সুখ ও দুঃখ দুইটাতেই
মঙ্গল কারণ মানুষের দুঃখ বিপদ-আপদ দেখা দিলে সে ধৈর্য ধারণ করবে।
আর ধৈর্যের মধ্যে
অনেক পুণ্য রয়েছে আর মানুষের কাছে সুখ থাকলে সেই শুকরিয়া আদায় করবে এক্ষেত্রে
শুকরিয়া আদায় করার ও অনেক পুণ্য রয়েছে। আর শুকরিয়া আদায় করার মাধ্যমে
মানুষের মন উদার হয়, মনের দুঃখ দুর্দশা দূর হয়,
এমনকি হতাশা-ডিপ্রেশন পর্যন্ত চলে যায়। দুঃখ, দুশ্চিন্ত, বিপদ-আপদ, ডিপ্রেশন বা
হতাশা দূর করার আরো একটি উপায় হচ্ছে মানুষকে সহযোগিতা করা। যেকোনো ছোট থেকে বড়
মানুষকে সহযোগিতা করলে এর মাধ্যমে নিজের দুশ্চিন্তা এবং ডিপ্রেশন বা হতাশা চলে
যায়।
তাই যতটুকু পারবেন এবং যখন করবেন মানুষকে নানান উপায়ে সাহায্য করুন।
সাহায্য করার ক্ষেত্রে মানুষকে অল্প করার টাকা দিতে পারেন, মানুষের একটা বোঝা
মাথায় উঠিয়ে দিতে পারেন, মানুষকে রাস্তা পারাপার করে দিতে পারেন,
মানুষকে কথাই বার্তায় সান্তনা দিতে পারেন, মানুষকে বুদ্ধি দিয়ে পরামর্শ দিয়ে
সহযোগিতা করতে পারেন ইত্যাদি। এক কথায় যেভাবে পারবেন যাতে মানুষের উপকার হয়
বিষয়টি খেয়াল করে সহযোগিতা করলে মনের ভিতরকার দুশ্চিন্তা সংকীর্ণতা চলে যাবে
এবং উদারতা বা মনের প্রশস্ততা বেড়ে যাবে।
এবং একটি সময়ে আপনার মনে শান্তি অনুভব
করবেন তখন দুশ্চিন্তা হতাশা এবং কঠিন বিপদ-আপদ ও কেটে যাবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে
উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করুন ইনশাআল্লাহ।
মনের ভয় দূর করার দোয়া
মনের ভয় দূর করার দোয়া সম্পর্কে আলোচনা আলোকপাত করছি। মনের ভয় দূর করার জন্য
যে সমস্ত দোয়া রয়েছে সেগুলোর বিভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আল কুরআনুল কারীমের
মধ্যে একরকম দোয়া রয়েছে এবং নবীজির হাদিস শরীফের মধ্যে আরেক রকম রয়েছে।
মনের
ভয় দূর করার জন্য বিভিন্ন ইসলামিক উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এখানে যেহেতু মনের
ভয় দূর করার দোয়া সম্পর্কে বলছি সেহেতু সেটা এখন আলোকপাত করছি। মনের ভয় দূর
করার জন্য প্রথম যে দোয়া সেটি হচ্ছে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ।
দোয়াটি হাদিসে বর্ণিত আর এর অর্থ হচ্ছে যে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন শক্তিও নেই
কোন সামর্থ্যও নেই অর্থাৎ যা কিছু রয়েছে সবকিছু আল্লাহর শক্তির অধীনে। অতএব মনের
ভিতরে কোন ভয় দেখা দিলেই মনকে সান্ত্বনা দিতে হবে যে কোন শক্তিই আমার মনকে ভয়ের
প্রভাব ফেলতে পারে না।
যেহেতু শক্তিই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর। আর আল্লাহ তায়ালা
কোরআন মাজিদে বলছেন যে নিশ্চয়ই সকল ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন আল্লাহ সুবহানাহুওয়া
তা'য়ালা নিজেই। কাজেই দুনিয়ার কোন শক্তি আল্লাহর শক্তি সামনে অচল।
এক্ষেত্রে মনের ভয় দূর করার জন্য সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়ে
নিজেকে ঝাড়ফুঁক করতে পারেন। আল্লাহর রাসুল এ বিষয়টি হাদিসে বলেছেন যে এটি
তিনটি সুরার মাধ্যমে সব রকমের বিপদ আপদ ভয়-ভীতি এবং সকল অপশক্তি দূর হয়ে যাবে।
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ এই দোয়াটি সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে
যে এটি হচ্ছে হাজারো সমস্যা সমাধান স্বরূপ দোয়া। তাই দোয়াটি যে কোন সময় পড়ুন
এবং বিভিন্ন উপকার বিষয়গুলো সাধন করুন আর ক্ষতিকর বিষয়গুলো থেকে বাঁচুন!
হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় গুলো আরো কিছু রয়েছে যেগুলো এখানে উল্লেখ
করছি। হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে চলতে হবে,
হাসিখুশি থাকতে হবে, বন্ধুদের সাথে এবং আপনজনদের সাথে সময় কাটাতে হবে।
আবার
হতাশাও দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো লিখে রাখতে হবে ডাইরীতে এক্ষেত্রে দেখা যাবে যে
কয়েকটি বাদ দিয়ে আর দুশ্চিন্তাও হতাশার কোনো কারণই পাচ্ছেন না।
হতাশাও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে আরো যে উপায় গুলো অবলম্বন করবেন সেগুলো
হচ্ছে নিয়মিত খেলাধুলা করবেন, শরীর চর্চা করবেন, মানসিক ব্যায়াম তথা মেডিটেশন
বা ধ্যান করবেন ইত্যাদি। আরো যে উপায় রয়েছে সেগুলো হচ্ছে মানুষকে সহযোগিতা
করবেন সেটা অর্থ দিয়ে হোক বুদ্ধি দিয়ে হোক বা পরামর্শ দিয়ে হোক যেভাবেই হোক
দেখবেন দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর হয়ে যাচ্ছে।
আরো যে উপায় তা হচ্ছে ঘুরতে যাবেন,
সফর করবেন নিজের এলাকা বাদ দিয়ে বিভিন্ন এলাকা তাহলে মন ফ্রেশ হবে এবং
দুশ্চিন্তাও হতাশা দূর হবে।
মাথা থেকে বাজে চিন্তা দূর করার দোয়া
মাথা থেকে বাইরের চিন্তা দূর করার দোয়া হচ্ছে নিম্নরুপ। মাথা থেকে বাজে চিন্তা
বা খারাপ চিন্তা দূর করতে হলে সর্বদা ভালো মানুষের সাথে থাকতে হবে, ভালো পরিবেশে
থাকতে হবে, ভালো কথা বা ইসলামিক কথা যারা বলে তাদের সাথে থাকতে হবে এবং সর্বদা
নামাজ রোজা ইত্যাদি ভালো আমলের সাথে থাকতে হবে।
পাশাপাশি নিজের মন ও মস্তিষ্ককে ও
জিহ্বাকে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার বিভিন্ন জিকির দিয়ে ব্যতিব্যস্ত রাখতে
হবে তাহলে দেখবেন বাজে চিন্তা গুলো আস্তে আস্তে মন থেকে চলে যাচ্ছে।
আর যে দোয়া পড়তে হবে বাজে চিন্তা বা খারাপ চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে তা হচ্ছে
'আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম' অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি এই দোয়াটা রেগুলার পড়তে থাকতে তাহলে দেখবেন বাজে চিন্তা
মাথা থেকে চলে যাচ্ছে।
অর্থাৎ আপনি এ দোয়াটা পড়ে আল্লাহকে বললেন আল্লাহ আপনি
আমাকে আশ্রয় দেন যে শয়তান যেন আমাকে কুমন্ত্রণা বা ওয়াসওয়াসা না দিতে পারে,
আমার মনের ভিতরে যেন খারাপ চিন্তা না ঢুকতে পারে।
হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
হতাশাও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া বিভিন্ন রয়েছে। হতাশা ও দুশ্চিন্তা এবং
আরো বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর রাসূল (সা) যে দোয়া করতেন বা
পড়তেন তা হচ্ছে এই 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি অল হুযনি ওয়াও
আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসলি আউযুবিকা মিনাল জুবনি অল বুখলি ওয়া আউযুবিকা
মিন গলবাতিত দায়নি ও ক্বহরির রিজাল'
দোয়ার অর্থ হচ্ছে হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে
আশ্রয় চাচ্ছি দুঃখ ও দুশ্চিন্তা থেকে,
আরো আশ্রয় চাচ্ছি অপারগতা ও অলসতা থেকে, আরো আশ্রয় চাচ্ছি কৃপণতা ও কাপুরুষতা
থেকে, আরো আশ্রয় চাচ্ছি ঋণের বোঝা এবং লোকেদের দমন-পীড়ন বা অত্যাচার থেকে। আর
বিশেষ করে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে যে দোয়া গুলো পড়তে হবে সেগুলো হচ্ছে ১.'লা
ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন'
মানে হচ্ছে (হে
আল্লাহ) তুমি ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই, তুমি পুতপবিত্র, নিশ্চয়ই আমি হচ্ছি
অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত। ২. দ্বিতীয় দোয়া হচ্ছে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল
ওয়াকিল' মানে আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট আর তিনি কতই না উত্তম তত্ত্বাবধায়ক।
৩. আর তৃতীয় দোয়া হচ্ছে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে 'হাসবিয়্যাললাহু লা ইলাহা
ইল্লা হুওয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুওয়া রাব্বুল আরশিল আযীম' মানে হচ্ছে
আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তুমি ছাড়া আর কোন সত্যিকার মাবুদ নেই, আর তার ওপরেই
আমি ভরসা করি এবং তিনি মহা আরশের প্রভু।
উপরের দুই নম্বর এবং তিন নম্বর দোয়া
হচ্ছে কোরআন মাজীদের আয়াত, তো এই দুয়াগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করে পড়লে অবশ্যই
আপনি হতাশা থেকে মুক্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।
মানসিক চিন্তা দূর করার দোয়া
মানসিক চিন্তার দূর করার দোয়া সম্পর্কে আলোকপাত করছি। মানসিক চিন্তা বা
দুশ্চিন্তা বা দুর্ভাবনা বা হতাশা বা নিরাশা বা ডিপ্রেশন বা ফ্রাস্টেশন বা
স্ট্রেস বা মেন্টাল প্রেসার বা মানসিক চাপ এগুলো সবই প্রায় একই জিনিস। তাই এই
সমস্ত বিষয় থেকে মুক্তি পেতে উপরে যে দোয়াগুলো বলা হলো সেগুলো পড়লেও হবে আর
পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াতে আপনি যুক্ত থাকবেন তাহলে আপনার এই সমস্ত বিষয়ে চলে
যাবে।
আরো পড়ুনঃ স্থায়ী জাহান্নামে যাওয়ার ১০টি কারণ - জাহান্নামীদের বৈশিষ্ট্য
নিয়মিত সালাত আদায় করবেন তাহলে সালাত আদায় করার মাধ্যমেও মানসিক চিন্তা দূর
হয়ে যাবে। আবার আল্লাহ তাআলার স্মরণ করার জন্য জিকির-আজকার রয়েছে সেগুলো পড়লে
মানসিক চিন্তা চলে যাবে যেমন আপনি পড়তে পারেন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ইত্যাদি জিকির বা
দোয়া গুলো।
আবার আপনি পড়তে পারেন হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল এই দোয়াটা আপনি পড়তে
পারেন তাহলে দেখবেন আপনার মানসিক চিন্তা বা দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি
আপনি সর্বদা ইস্তিফার পাঠ করতে পারেন যেমন আপনি বলতে পারেন আস্তাগফিরুল্লাহ,
আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াআতুবু ইলাইহি ইত্যাদি। আবার পড়তে পারেন রব্বিগ ফির লি এই
দোয়া। তাহলেআপনার দুশ্চিন্তা, হতাশা ও মানসিক চিন্তায় ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে
ইনশাআল্লাহ।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া আরবি
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির যে সমস্ত দোয়া রয়েছে তার আরবি বাক্য গুলো নিম্নে লেখার
চেষ্টা করছি। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আরবি পড়তে পারেন বা পড়তে চান যে আমি যে
দোয়া গুলো পড়লে আমার মনের অবস্থা স্থির হবে এবং শান্তিময় হবে সাথে সাথে আমার
অন্তর থেকে দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা এবং হতাশাগুলো চলে যাবে এবং আশা ফিরে পাবো
ইত্যাদি।
যদি মনে প্রানে বিশ্বাস করে পড়তে পারেন তাহলে আপনার জন্য নিম্নের এই আরবি বাক্য
বিন্যাসে দোয়া গুলো।
لا اله الا انت سبحانك اني كنت من الظالمين
حسبي الله لا اله الا هو عليه توكلت وهو رب العرش العظيم
حسبنا الله ونعم الوكيل
اعوذ بالله من الشيطان الرجيم
اعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم من همزه ونفخه ونفثه
استغفر الله واتوب اليه،
استغفر الله
رب اغفر وارحم وانت خير الراحمين
رب اغفر لي
لا حول ولا قوه الا بالله
سبحان الله، الحمد لله، لا اله الا الله، الله اكبر
লেখকের শেষ মন্তব্য
দুশ্চিন্তা দূর করার ইসলামিক উপায় সহ সংশ্লিষ্ট আরো বিভিন্ন উপায় এবং বিভিন্ন
দোয়া ইত্যাদি বলা হয়েছে এই আর্টিকেলটিতে। প্রিয় পাঠক, উক্ত আর্টিকেল বা ব্লগটি
মন দিয়ে পড়ে থাকলে আপনি দুশ্চিন্তাও হতাশা থেকে মুক্তি পেতে ইসলামিক উপায় গুলো
বুঝা সহ আয়ত্ত করেছেন বলে বিশ্বাস করছি।
পাশাপাশি আরও বিশ্বাস করছি যে আমাদের এই
আর্টিকেলটি কিঞ্চিত হলেও উপকার করেছে যেহেতু এর ভিতরে রয়েছে দুশ্চিন্তা থেকে
মুক্তি পেতে ইসলামিক বিভিন্ন উপায় ও দোয়া। যাইহোক, আরো এরকম নিত্যনতুন আর্টিকেল
পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url