ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ সম্পর্কে যত কথা বিস্তারিত জানুন
জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলতইসলামের দৃষ্টিতে সুদ সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করেছেন তাই তো? সুপ্রিয় পাঠক, সুদ খুব ন্যাক্কারজনক অভিশপ্ত এক পাপের নাম। সুদের মাধ্যমে বড়লোক টাকার পাহাড় বানায়। আর ছোটলোক আরো ছোটলোক হয়ে যায়।
এমনকি একই বারে নিঃস্ব হতদরিদ্র হয়ে যায়। মানুষ সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে
জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে। তো চলুন সুদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ অত্যন্ত জঘন্যতম অপরাধ। সুদ বিষয়টি এমন একটি বিষয়
যেটির মাধ্যমে ধনীরা ধনী হয়ে যায় আর গরিবরা আরো গরিব হয় এবং বঞ্চিত হয়।
ইসলামে তথা কুরআন এবং হাদিসে সুদের ব্যাপারটি অনেক নিকৃষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
সুদ হচ্ছে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের কাছে মহা অপরাধ যার গুনাহ অসীম বা
সীমাহীন।
সুদ সম্পর্কে কুরআন এবং হাদিসে অসংখ্য জায়গায় বর্ণনা এসেছে। আল কুরআনুল
কারিমে সুদ সম্পর্কে ৭ বা ৮ জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। আর হাদিসের মধ্যে সুদের
ব্যাপারটি চল্লিশের অধিক বর্ণিত হয়েছে। আল কুরআনুল কারীমে সূরা বাকারার মধ্যে
সুদের ব্যাপারটা বেশি বর্ণিত হয়েছে। এরপরে সূরা আল ইমরানের মধ্যে বর্ণিত
হয়েছে এবং সূরা রুমের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত জানুন
আল কুরআনের মধ্যে সুদের ব্যাপারে সবচেয়ে যেটা ভয়ানক এবং মহা ভাবে বর্ণিত
হয়েছে সেটা হচ্ছে যে সুদের কারবার পরিত্যাগ না করলে বা এর সাথে জড়িত থাকলে
আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের সাথে এটি যুদ্ধ করার মত বা যুদ্ধ করার শামিল বা
যুদ্ধ করার নামান্তর হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা কোন পর্যায়ে এই কথাটা বলেছেন
একটু খেয়াল করুন।
দুনিয়াতে ধরুন আপনার কারো সাথে কোন দ্বন্দ্ব বা কাউকে অপছন্দ বা পছন্দ না হলে
আপনি হয়তো তাকে বিভিন্নভাবে এভোয়েড করবেন এড়িয়ে চলবেন এইভাবে যে হয়তো তাকে
দেখবেন না, বা তার পাশে বসবেন না, বা তার দিকে তাকাবেন না, আর এর চাইতেও বেশি
পছন্দ না হলে আপনি দূর থেকে তাকে গালি দিবেন বা পিছনে পিছনে তার বিভিন্ন
দুর্নাম বা শত্রুতা করবেন।
আর এর চাইতেও বেশি অপছন্দ হলে আর তাকে মারবেন বা মারার উপক্রম হবেন বা মারতে
যাবেন। আর এর চাইতেও বেশি অপছন্দ হলে তার সাথে দল বল নিয়ে যুদ্ধ করবেন বা
তারপরে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। তার মানে বুঝাই যাচ্ছে যে কোন পর্যায়ে আল্লাহ তা'আলা
সুদের ব্যাপারে যুদ্ধ ঘোষণা করার কথা বলেছেন।
আল্লাহ তালাল কুরআনুল কারীমের মধ্যে এই বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন যে ওহে
তোমরা যারা আমি আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা সুদ বর্জন করো এবং সুদের বকেয়া বা
অবশিষ্ট যেগুলো পাবে এখনো পাওনি সেগুলো বর্জন কর, যদি তোমরা নিজেদেরকে মোমিন বা
বিশ্বাসী দাবি করে থাকো। যদি তোমরা তা না করো অর্থাৎ সুদ না ছাড়ো তাহলে তোমরা
আমি আল্লাহ এবং আমার প্রিয় মাহবুব রাসুল এর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করো।
সুদ পরিচিতি
সুদ পরিচিতি বা সুদ সম্পর্কে আইডিয়া, কনসেপ্ট, ধারণা বা সংজ্ঞা ইত্যাদি। তো
চলুন সুদ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। আমরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছি যে সুদ
ব্যাপারটি অত্যন্ত জঘন্যতম মহা অপরাধ এবং আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের সাথে
যুদ্ধ করার শামিল। এখন বলতে চাচ্ছি সুদ শব্দটির ব্যাখ্যা। সুদ শব্দটির আরবি
শব্দ হচ্ছে রিবা। রিবা শব্দটি আল কুরআনে ৮ জায়গায় বর্ণিত হয়েছে।
সূরা বাকারায় ৫ জায়গায় রয়েছে যেগুলো পর্যায়ক্রমে ২৭৫ নম্বর আয়াতে
তিনবার। আর ২৭৬ নম্বর আয়াতে একবার। এরপর ২৭৭ নম্বর আয়াতে আরো একবার। সূরা আল
ইমরান একবার যেটি ১৩০ নম্বর আয়াতে। সূরা নিসা একবার যেটা ১৬১ নম্বর আয়াতে।
এবং সূরা রুমে আরো একবার যেটি ৩৯ নম্বর আয়াতে রয়েছে।
আর সুদের ব্যাপারটি শব্দগত নয় বরং অর্থগত প্রায় ২০ জায়গায় উল্লেখ রয়েছে
আল কোরআনুল কারীমে। সুদ হচ্ছে অর্থনৈতিক এক জঘন্য প্রথা। যে সুদের মাধ্যমে
গরীবদের অর্থ শোষণ করা হয় এবং ধনীদের অর্থ আরো অনেক গুনে বৃদ্ধি হয়। সুদের
ব্যাপারে হাদিসের মধ্যেও এক জায়গায় ৭০টি আরেক জায়গায় ৭৩টি পাপের শাখা বা
পর্যায়ে রয়েছে।
যে শাখা গুলোর সর্বনিম্ন পাপ হচ্ছে নির্মা এর সাথে যেনা করা বা নিজের মাকে
বিবাহ করা। কথাটা শুনতে যতটা খারাপ লাগছে এর প্রকৃত অর্থ আরো বেশি জঘন্য এবং
খারাপ। আর এর সর্বোচ্চ পাপ হচ্ছে যদি আল কুরআনে বলা হয়েছে। আল্লাহ এবং আল্লাহর
রাসূলের সাথে যুদ্ধে অবতরণ করা। রিবা শব্দের অর্থ সুদ বা অন্যায় ভাবে সম্পদ
বৃদ্ধি পাওয়া।
রিবা সুদের শব্দের সংজ্ঞা এমন একটা লেনদেন বা নেওয়া দেওয়া যেটা
সমজাতীয় জিনিসের বদলে সমজাতীয় জিনিস দেওয়া বা ধার দেওয়া এবং নেওয়ার সময়
যতটুকু দেওয়া হয়েছিল তার চেয়ে বেশি নেওয়া। যে বেশিটা অনেক কম থেকে কম হতে
পারে আবার বেশি থেকে অনেক বেশিও হতে পারে এগুলো সীমারেখা নেই।
সুদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
সুদ সম্পর্কে আল কোরআনুল কারিমে যা বলেছে বিষয়গুলো এখানে সারমর্ম করে আলোকপাত
করছি। চলুন শুরু করি। সুদের ব্যাপারে কোরআনুল কারীমে সূরা বাকারায় ১৭৫ নম্বর
আয়াতে বলা হয়েছে। আর বলা হয়েছে এভাবে যে সুদ যারা খায় তারা সাধারণত
ভালোভাবে দাঁড়াতে পারে না। তবে দাঁড়ায় ওই ব্যক্তির মত যাকে জিন শয়তান
স্পর্শ করলে বা তার ওপর ভর করলে যেমন ভাবে পাগলের মত কাপাকাপি করে বা হেলেদুলে
হাটে বা ঠিকমতো হাঁটতে পারে না।
আর বলা হচ্ছে এটা তাদের ব্যবসা সুদের মতো এ কথা বলার কারনে। আর যার নিকটে
স্রষ্টার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে সে এটা থেকে বিরত হয়। আর সুদ থেকে বিরত হলে
যার ব্যাপারটা আল্লাহর কাছে নেস্ত এবং সে অতীতে যা করেছে সেটা আল্লাহতালা মাফ
করবেন কিনা সেটা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
সুদ খারাপ ব্যাপারটি জানার পরেও যারা আবার ওই সুদে ফিরে যায় তারা জাহান্নামের
অধিবাসী দীর্ঘকাল ধরে জাহান্নামে থাকবে। এরপরে ২৭৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে
সুদ আল্লাহ ধ্বংস করবেন আর দান খয়রাত সদাকা এইগুলাকে আল্লাহ বৃদ্ধি করবেন। আর
আল্লাহ তাআলা যারা সুদ খায় এরা হচ্ছে পাপী এবং সত্যকে অসত্যে পরিণতকারী এদেরকে
অপছন্দ করেন, ভালোবাসেন না।
এরপরে আল্লাহ ২৭৭ নম্বর আয়াতে বলছেন যে হে ঈমানদার বা বিশ্বাসীগণ তোমরা
আল্লাহকে ভয় কর এবং বকেয়া সুদ ছেড়ে দাও যদি তোমরা ঈমানদার দাবি করো। ২৭৮
নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন যদি তোমরা সুদ না ছাড়ো তাহলে আল্লাহ এবং তার রাসুল
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত
থাকো।
আর যদি তোমরা তওবা করে ফিরে আসো তাহলে তোমরা এক কাজ করো সেটা হচ্ছে যে তোমাদের
মূলধন গুলো নিয়ে নাও সুদ নিও না এক্ষেত্রে তোমরাও জুলুম করবে না তাহলে তোমাদের
প্রতিও জুলুম করা হবে না। তিন নাম্বার সূরা আল কুরআনুল কারীমের সূরা আল ইমরানের
১৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে হে বিশ্বাসীগণ তোমরা বহুগুনে বা চক্রবৃদ্ধি হারে
সুদ খেয়ো না।
আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এক্ষেত্রে, তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
এরপরের সূরা নিসা আল কোরআন কারীমের চার নম্বর সূরা র ১৬১ নম্বর আয়াতে বলা
হয়েছে যে, ইহুদি সম্প্রদায় সুদ গ্রহণ করত অথচ তাদেরকে এটা থেকে নিষেধ করা
হয়েছিল। অন্যায় ভাবে তারা শোধ গ্রহণ করত। আর তারা হচ্ছে কাফের আর এই সমস্ত
কাফেরদের জন্য সুদ গ্রহণের কারণে মর্মান্তিক শাস্তি প্রস্তুত করে
রেখেছি।
এরপর ৩০ নম্বর সূরা সূরা রুম এর ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে তোমরা মানুষের
সম্পদকে বৃদ্ধি করার জন্য যে সুদটা লেনদেন কর এটা মূলত আল্লার কাছে বৃদ্ধি পায়
না। যে যাকাতটা তোমরা আদান প্রদান কর অর্থাৎ ধনীদের কাছ থেকে নিয়ে গরিবদের দান
করো আর এটা আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য এটাতে আল্লাহ তা'আলা খুশি হয়ে বহু গুণে
বাড়িয়ে দেন যেটা তোমরা বুঝতে পারো না টের পাওনা।
অর্থাৎ এটা বারাকাহ বা বরকত যা দেখা যায় না। আয়াতগুলো থেকে বোঝা গেল যে সুদ
অত্যন্ত জঘন্য নিকৃষ্টতম পাপ যেগুলো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে আর এর পরিণাম
হচ্ছে ভয়াবহ জাহান্নাম।
সুদ সম্পর্কে হাদিস
সুদ সম্পর্কে আল কোরআনে যেমন বর্ণনা এসেছে হাদিসেও অসংখ্য বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে
ব্যক্ত হয়েছে যা এখন বর্ণনা করছি। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনা, সহীহ
মুসলিম, সুনাম তিরমিজি, ইবনে হিব্বান এবং আহমদ সহ অন্যান্য গ্রন্থে হাদিসটি
এভাবে এসেছে যে, সুদের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটি ব্যক্তি অভিশপ্ত, সুদের
কারবারের সাথে চারজন ব্যক্তি সম্পৃক্ত, যে খায়, যে দেয়, যে লেখে এবং যারা
সাক্ষী থাকে।
এদের প্রত্যেককেই আলা রাসুল অভিসম্পাত করেছেন। সহীহুল জামে, ইবনে মাজা সহ
অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে এসেছে যে হাদীসটি সেটা হচ্ছে যে সুদের ৭৩ টি দরজা
রয়েছে অন্য বর্ণনায় দরজা কথাটি কে গুনাহ বলা হয়েছে অর্থাৎ সুদের ৭৩ টি গুনাহ
রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং নিম্ন গুনাহ হচ্ছে সুদ সম্পৃক্ত ব্যক্তি তার
নিজ মায়ের সাথে যেনা করা বা নিজ গর্ভধারিনী মাকে বিয়ে করা।
আরো একটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষনা করছেন একদিরহাম
সুদ খাওয়া এটা ৩৬ বার ব্যভিচার করার চেয়েও বেশি নোংরামি বা জঘন্য। অন্য এক
হাদীসে আছে সুদ যদিও দেখতে বেশি দেখা যায় কিন্তু আসলে সেটা খুব কম বাস্তবে
মানুষ টের পায় না ধীরে ধীরে কমের দিকেই চলে যায় বা ফিরে যাই। যে একসময় এই
সুদ ধ্বংস হয়ে যাবে এর ইঙ্গিত রয়েছে হাদিসে।
আয়াতে তো আল্লাহতালা স্পষ্ট বলেছেন যে সুদকে এবং সুদের সাথে সম্পৃক্ত
সবকিছুকে আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দেবেন। শুধু দুনিয়াতেই নয় আখেরাতেও এর
পরিণতি পরিনাম অত্যন্ত ভয়াবহবে। সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে যে হাদীসটি রয়েছে
সেটা হচ্ছে এরকম যে কিয়ামত পর্যন্ত সুদখোর ব্যক্তি জাহান্নামের রক্তের নহরের
মধ্যে হাবুডুবু খাবে এবং বাঁচার জন্য ফিরতে চাইলেও আবার তাকে সেখানে ফেরত
দেওয়া হবে। আবার সুদখোর ব্যক্তি কেয়ামতের দিন পাগলের মত আল্লাহর সামনে উঠবে যেন তাকে
শয়তান ভর করেছে।
সুদ এর প্রকারভেদ
সুদের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে যেগুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনায় আনছি। সুদ মূলত দুই
প্রকার। যার একটি হচ্ছে বিলম্বে সুদ আর অপরটি হচ্ছে অতিরিক্ত সুদ। যেগুলো আরবিতে
বলা হয় রিবা আর নাসিয়া আর রিবা আল ফজল। রিবা আল নাসিয়া মানে বিলম্বে সুদ মানে
একজনকে ১০০ টাকা দেওয়া হলে এক মাস বিলম্বে বা দেরিতে তাকে ১১০ টাকা ফেরত দিতে
হবে এরকম।
রিবা আল ফজল মানে হচ্ছে এমন সুদ যেটা এক মাস পরে একরকম এক বছর পরে আরেকরকম।
অর্থাৎ দিন যত যাবে, মাস যত যাবে, বছর যত যাবে বাড়তে থাকবে অর্থাৎ অনেকটা
চক্রবৃদ্ধির মত। চক্রবৃদ্ধি মানে হচ্ছে মূলধন যা সেটার একমাস পরে যে সুদ দুই মাস,
তিন মাস এবং এক বছর পর মূলধন এবং সুদেরও সুদ বের হয়ে যায় এরকম।
যদিও আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তালা সুদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন।
কিন্তু এই অজ্ঞ জাহিল মূর্খ মানুষ বুঝেনা যে সুদের মাঝে কি ভয়াবহ জিনিস রয়েছে।
ব্যবসার মধ্যে কি বরকত কি লাভ কি শান্তি রয়েছে। সুদ খেলে আল্লাহ তাআলা এটাকে
ধ্বংস করে দেন আর ব্যবসা করলে আল্লাহ তাআলা এটাকে অনেক বৃদ্ধি করেন।
এমনকি যে মানুষকে ধার দেয় যেটাকে কর্জে হাসানা বলা হয় এটা দিলে এবং যেখানে কোন
স্বার্থ থাকে না একমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টি এবং মানুষের কল্যাণ কামনা অর্জনের
জন্য। কর্জে হাসানা যে দিবে আল্লাহ তাআলা তাকে এবং তার সম্পদকে বহু গুণে বাড়িয়ে
দেন যেটা কল্পনাও করা যায় না কতটা বাড়াবেন আল্লাহ। তাই সুদের একমাত্র সমাধান
হচ্ছে কর্জে হাসানা যেটি আমাদের সমাজে চালু করা অত্যন্ত দরকার।
এক্ষেত্রে অভাবী মানুষেরা উপকৃত হবে এবং লাভবান হবে আর যারা কর্জে হাসানা দিবে
যারা উপকৃত হবে আর এই উপকারটা অন্তরের দিক থেকে সে শান্তি পাবে তৃপ্তি পাবে আর
অন্তর শান্তি বা তৃপ্তি থাকা এটা শরীর সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত দরকারই একটা
জিনিস। আর আখেরাতে তো আল্লার কাছে অনেক সুফল অপেক্ষা করছি।
সুদের ইতিহাস
সুদের ইতিহাস বিষয়টা খুবই ভয়ানক। সুদী লেনদেন বা অর্থ ব্যবস্থার কারণে এক সময়
গোটা ইউরোপ এবং আমেরিকা দেউলিয়া এবং ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বর্বরতার যুগে
সুদি কারবার মারাত্মকভাবে জারি ছিল যেটি আল কোরআনের রিবা বা সুদ বলা হয়েছে।
সুদ বর্তমান জামানার মহা বিপর্যয় এবং ফিতনার নাম। সুদ সৃষ্টি
হয়েছে সর্বপ্রথম বাছুর সংক্রান্ত বিষয় শোধ পরিশোধের ক্ষেত্রে।
এই সুদ আবিষ্কার হয়েছে কার্ল মেঞ্জার এবং সুইডেনের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ
এর মাধ্যমে। সুদের নানাবিধক ক্ষতির কারণে আল কোরআনে আরাম ঘোষণায়
এসেছে। সর্বপ্রথম আল কোরআনে সজাগ এবং সতর্ক করা হয়েছে। এরপরে সুদের
ক্ষতিকর দিকগুলো বলা হয়েছে। এরপরে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে সুদকে
সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে।
সুদকে যে কোন ক্ষেত্রে মানব সভ্যতার কল্যাণের জন্য না বলতে হবে। কোনক্রমেই
সুদকে হ্যা বলার অবকাশ নেই। সুদের বিভিন্ন প্রকরণ রয়েছে যেমন সরল বা সাধারণ
সুদ, অর্জিত সুদ এবং চক্রবৃদ্ধি সুদ। এই সব সুদ গুলো বর্তমান আধুনিক
সময়ে ধীরে ধীরে আরো বিস্তার লাভ করতে। সুদের কারবার কেউ বলছেন যে ১৯০০ শতাব্দীর
দিকে কেউ বলছেন বিংশ শতাব্দীর দিকে খুব ভালোভাবে দুনিয়ায় ছেয়ে
যায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ কোনোক্রমে বৈধ বলার অবকাশ নেই সম্পূর্ণরূপে
নিষিদ্ধ। কেউ তো আবার বর্তমানে হালাল সুদ এবং হারাম সুদ নামে দুইটা জিনিস
বের করেছে। সুদের আবার হালাল হয় নাকি সুদ তো সুদই। যেমন বিভিন্ন ইসলাম বা
মুসলিমের নামে যে ব্যাংকগুলো এই ব্যাংকগুলো বিভিন্নভাবে সুদকে হালাল বানানোর
চেষ্টা করতেছে যেটা সম্পূর্ণরুপে অপচেষ্টা এটা আদৌ সঠিক নয়।
সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান
সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি হবে বিষয়টি ইতিমধ্যেই আলোকপাত করেছি আবারো এখানে
আরো সুস্পষ্ট করার চেষ্টা করছি। সুদ মূলত ইসলামে জঘন্যতম নিকৃষ্ট কাবিরা বা
বড় গুনাহ। এই সুদ বিষয়টি ইমাম আয যহাবী রহমাতুল্লাহি আলাই তার কাবিরা
গুনাহের গ্রন্থের মধ্যে ১১ নম্বর এ এনেছে। সুদের ৭০ বা ৭৩টি গুনাহ বা পাপ
হয়েছে যেটা আমরা বলেছি।
আর এই বিষয়টি হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। আর এই ৭০ বা
৭৩টি গুনাহের মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ হচ্ছে নিজের মায়ের সাথে যেনা
করা। আবার ৩৬ বার কোন মহিলার সাথে ব্যভিচার করা। সর্বোচ্চ পাপ হচ্ছে
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধে অবতরণ হওয়া বা যুদ্ধ ঘোষণা করা বা যুদ্ধে
লিপ্ত হওয়া।
আর এই ব্যাপারটি অনেক বড় এবং বৃহত্তম একটি বিষয়। সুদ সম্পর্কে হাদিসে
স্পষ্ট উল্লেখ হয়েছে যে সুদের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটা ব্যক্তি অর্থাৎ এর দাতা
গ্রহীতা, লেখক, সাক্ষীদ্বয় সবাই অভিশপ্ত। সুদের যারা কারবার করে
এরা সবাই কিয়ামত পর্যন্ত জাহান্নামের মধ্যে রক্তের নহরে হাবুডুবু
খাবে। বাঁচার জন্য সেখান থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করবে কিন্তু তাকে আঘাত করে
আবারও সেই জায়গায় ফেরত দেওয়া হবে।
সুদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি কাল কিয়ামতে আল্লাহর সামনে পাগলের মত উঠবে অর্থাৎ
তার অবস্থা ঠিক থাকবে না একজন পাগল যেমন রাস্তায় হাঁটতেই চলতে ফিরতে হেলে দুলে
চলে তেমনি কেয়ামতে যেন তাকে শয়তানে ধরেছে বা জিন শয়তান তার উপর ভর করেছে
এমন ভাবে উঠবে। এমনকি আল্লাহতালা তাকে ধ্বংস করে দিবেন এটাও ওয়াদা
করেছেন।
সুদের বৈশিষ্ট্য
সুদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এখন বলছি যদিও বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রতিভাত
হয়েছে। কোরআন এবং হাদিস এর মধ্যে সুদ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি
সে বিষয়গুলোতে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে সুদের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরোপুরি উঠে
আসবে। এরপরেও সম্মানিত পাঠক আপনাদের সুবিধার্থে এই জায়গায় ক্রমান্বয়ে
সুদের বৈশিষ্ট্য গুলো লেখার চেষ্টা করছি।
- সুদ মানুষের জীবনকে বর্তমান সময়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
- সুদের মাধ্যমে ধনীরা ধনী হচ্ছে গরিবরা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
- সুদের মাধ্যমে মানুষের লোভ লালসা বহুগুনে বেড়ে যাচ্ছে।
- সুদ হচ্ছে জাহেলিয়াতের বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের বর্বর এক প্রথার নাম।
- সুদ মানুষের কাজ করার শক্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
- সুদের কারণে মানুষ বাস্তুভিটে হারাচ্ছে।
- সুদের কারণে মানুষ জীবন দিয়ে দিচ্ছে।
- সুদের কারণে ধনী রাষ্ট্র আরো ধ্বনিতে রূপান্তর হচ্ছে।
- সুদের কারণে মানুষের ঋণ আরো বেড়ে যাচ্ছে
- সুদ হচ্ছে মানুষের প্রতি এক অভিশপ্ত জুলুদের নাম।
সুদ কিভাবে হয়?
সুদ যেভাবে হয় বিষয়টি আলোকপাত করছি। সুদ হয়ে থাকে সাধারণত সমজাতীয়
জিনিসের বদলে ক্ষমতাতীয় জিনিস দিয়ে নেওয়ার সময় একটু বেশি করে
নেওয়া। যেমন গমের বদলে গম, যবের বদলে যব, কিসমিসের বদলে কিসমিস,
ধানের বদল ধান, চালের বদল চাল, টাকার বদল
টাকা ইত্যাদি একই জিনিস দিয়ে একই জিনিস নেওয়া কিন্তু নেওয়ার সময়
যতটুকু দেওয়া হয় তার থেকে বেশি নেওয়া।
আরো পড়ুনঃ কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত - কুরবানী সম্পর্কে হাদিস সুস্পষ্টরুপে জানুন
যেমন এক কেজি চাল দিয়ে সোয়া এক কেজি চাল নেওয়া। ১ মন ধান দিয়ে এক মন ৫ সের
বা ১০ সের বেশি নেওয়া। বা ১০০ টাকা দিয়ে ১১০ টাকা নেওয়া অথবা, এক হাজার
টাকা দিয়ে এক হাজার একশ টাকা নেওয়া। সুদ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে যেমন ১০০
টাকা দিয়ে ১১০ টাকা নেওয়া এটা এক ধরনের সুদ।
আবার ১০০ টাকা দিয়ে পরের মাসে ১১০ টাকা দিতে না পারলে তার পরের মাসে ১২০ টাকা
নেওয়া তার পরের মাসে ১২০ টাকা দিতে না পারলে তার পরের মাসে ১৩০ টাকা নেওয়া
এইভাবে বাড়তে থাকে।আবার মূল যে ধন একশ টাকা এই ১০০ টাকার পরের মাসে ১১০
টাকা তার পরের মাসে যদি টাকা দিতে না পারে মূলধনের এক সুর আবার ১০ টাকা যে সুদ
বের হয়েছিল ওই সুদের আরেক সুদ বের হয়ে যায়।
অর্থাৎ সুদের সুদ এইভাবে পরের দুইটাকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বলা
হয়। এই সুদের সমাধান হচ্ছে করযে হাসানাহ মানে মানুষকে ধার দিব তার
কল্যাণের জন্য। সে আমার মুসলিম ভাই এখন তার অভাব অনটন চলছে তাই তাকে
ধার দিয়ে সহযোগিতা করবে। আর এর পূণ্যের আশা আমরা আল্লাহর কাছে
করবো। দুনিয়াতেও একটা শান্তি পাবো যে একজনকে ধার দিলে মনে অনেক তৃপ্তি
এবং প্রশান্তি পাওয়া যায় যেটা শরীর সুস্থ থাকার অনেক বড় একটা
মাধ্যম। যে এই সুদকে না বলি এবং কর্জে হাসানাকে হ্যা বলি।
লেখকের শেষ মন্তব্য
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ সংশ্লিষ্ট বিষয় সহকারে ব্লগ দিতে আলোচনা করার চেষ্টা
করেছি। আশা করছি আপনি উক্ত আর্টিকেল বা ব্লগটি মন দিয়ে পড়েছেন এবং সুদ
সংক্রান্ত বিষয় গুলো বুঝার চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা আপনার
বুঝ শক্তিতে বারাকা দান করুন। আরো এরকম নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আপনি
আমাদের সাথেই থাকুন এবং ব্লগ বা আর্টিকেলগুলো উপভোগ করুন। পাশাপাশি সাধারণ
জ্ঞানগুলোকে অসাধারণে পরিণত করুন ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url