বদর যুদ্ধের ইতিহাস - বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মহররম ও আশুরায় যা করণীয় ও বর্জনীয়বদর যুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য এই আর্টিকেল বা লেখায় ক্লিক করে এসেছেন তাই তো? প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগে ইসলামের ইতিহাস সেরা যুদ্ধ বদর সম্পর্কে লিখব। বদর যুদ্ধ ইসলাম ও অনৈসলামের মাঝে পার্থক্য কারী একটি যুদ্ধ। 

বদর-যুদ্ধের-ইতিহাস

এটি হিজরী ২য়তে সংঘটিত হয়েছিল মদিনার অদূরে থাকা বদর নামক স্থানে। চলুন বদর যুদ্ধকে সংক্ষিতভাবে এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করি। 

পেজ সূচীপত্রঃ বদর যুদ্ধের ইতিহাস সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জানুন

বদর যুদ্ধের ইতিহাস

বদর যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে এখানে লিখছি। প্রিয় পাঠক, বদর মদিনার নিকটবর্তী একটি জায়গা যেখানে এক হৃদয়বিদারক ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। এটি ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ মার্চ মোতাবেক আরবী ২য় হিজরী অনুযায়ী ১৭ রমজানে ঘটেছিল বদর নামক প্রান্তরে। যুদ্ধের পটভূমি ছিল মক্কার কুরায়শরা মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে, তাদের সম্পদ বাণিজ্যের পথে লুন্ঠন করে ফলে প্রতিরোধের শক্ত প্রতিরোধের প্রয়োজন পড়ে স্বয়ং আত্মরক্ষার খাতিরে। নিম্নে বিস্তারিত বলা হলো চলুন জানতে প্রয়াস চালাই।

যুদ্ধের কারণঃ মক্কার মুশরিকেরা একটি বিশাল বাহিনি বাণিজ্য করতে পাঠিয়েছিল। আর এই বাণিজ্যের উদ্দেশ্যের ছিল বিশাল ভাবে বাণিজ্য থেকে লাভ করা এবং সেই লাভের সম্পদ দিয়ে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করার জন্য অস্ত্র ক্রয় করে অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুসলিমদের উপর ঝাপিয়ে পড়া। আরো উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের নাম নিশানা নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাওয়া এবং মুসলিমদের সম্পদকে কেড়ে নেওয়া ইত্যাদি। এ সব বিষয়ের পূর্ব থেকেই আভাস পাওয়ায় মহানবী (স) মুসলিমদের এই বাহিনিকে বাধা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধের একটা আভা শুরু হয়ে গেল।

যুদ্ধের প্রস্তুতিঃ যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য বিশ্ব নবী (স) ৩১৩ জন বা ৩১৪ জন সাহাবী বা তার সহচরবৃন্দ নিয়ে কাজ করলেন। ৩১৩ জন সাহবীদের মধ্যে তেমন কোন অস্ত্র-সস্ত্র ছিলনা, যুদ্ধ সাজ-সরঞ্জাম ছিল অপর্যাপ্ত এবং সাহাবীদের মাঝে যুদ্ধে অভিজ্ঞতা ছিলনা মানে অনভজ্ঞি ছিল।  আর অমুসলিমদের পক্ষে ১০০০ যোদ্ধা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

যুদ্ধের ঘটনাঃ মদিনার নিকটবর্তী বদর নামক প্রান্তরে ১৭ রমজান ২য় হিজরী মোতাবেক ১৩ ই মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধ আরম্ভ হয়। মুসলিমরা বদরের একটি কুপের পাশে অবস্থান নেয়। মুসলিমরা তাদের মজবুত ঈমান, ঐক্য ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কারণে যুদ্ধে জয় হয়। এবং অমুসলিমরা তাদের অহংকার ছিল যে তাদের যোদ্ধার সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে বেশি ছিল, আর এই সংখ্যাটা ছিল ১০০০; আর মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ৩১৩/৩১৪ ছিল বিধেয় তারা যুদ্ধে পরাস্ত হবে না এমন একটা ভাব ছিল ফলে তারা যুদ্ধে পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে নবী মুহাম্মদ (সা) ডাইরেক্ট নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে।

ক্ষয়-ক্ষতিঃ মুসলিমদের যোদ্ধারা শহীদ হয়েছিল মাত্র ১৩/১৪ জন আর অমুসলিমদের ৭০ জন নিহত আর ৭০ জন বন্দী হয়েছিল।  

যুদ্ধের ফলাফলঃ বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে এবং এটি ইসলামের বাণী সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ হতে লাগল এবং ইসলামকে এক অন্য নতুন মোড় দিল এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধ মুসলিমদের ঈমানকে বিশাল রুপে মজবুত করল। এবং মুসলিমদে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি পেল। পাশাপাশি ইসলাম প্রচার এবং প্রসার খুব সহজ হয়ে গেল।

যুদ্ধের শিক্ষাঃ ঈমানের পাওয়ার অপার। ঐক্য ও কাধে কাধে মিলিয়ে যুদ্ধ করা অপ্রতিরোধ্য এ জাতিকে কেউ ঠেকাতে পারেন। সাহসিকতা ও বীর বিক্রমে লড়াই করলে কেউ বিজয় থেকে আটকাতে পারে না। ন্যায়ের পথে লড়াই করা অধিকতম উত্তম ও সওয়াবের কাজ এবং মরলেই শহীদ হওয়া যায়। এক্ষেত্রে শহীদের রক্ত মাটিতে পড়ার সাথে সাথে সব পাপ মোচন হয়ে যায়।

বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বদর যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এখানে বলছি শুনুন। ইতিমধ্যেই বলেছি তথাপিও সংক্ষেপে কয়েক লাইনে এখন লিখছি। হ্যা চলুন! অমুসলিমরা মুসলিমদের উপর বিভিন্নভাবে যুলুম করত। কোরাইশ এক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও ক্ষতির কারণ হবে এমন কাফেলাকে পথে আটকানোয় এক পর্যায় তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মুসলিম ৩১৩ জন আর অমুসলিম ১০০০ জন যোদ্ধা নিয়ে। একটা সময়ে মুসলিমদের শক্ত ঈমানের ফলে তারা জয় লাভ করে আর অমুসলিমরা তাদে অহংকারের কারণে পরাজিত হয়। 

এতে মুসলিমরা ১৩জন আর অমুসলিমদের ৭০ জন নিহত হয়, আর ৭০ জন বন্দী হয়। এর পর থেকে মুসলমানদের আর পিছনে তাকাতে হয়নি। তারা বীর দর্পে ইসলাম প্রচার করেন মুসলিমদের নেতা মুহাম্মাদ (স) এর সাহসিকতা, আল্লাহ ভীরুতা এবং সামনে থেকে পোক্ত নেতৃত্বের কারণেই। আজ মুসলিমগণ এই বদর যুদ্ধের ইতিহাস কে বুকে ধারন করে। 

বদর যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়

বদর যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয় বিষয়টি ইতোমধ্যেই আলোকপাত করেছি। আবারও এখানে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। এটি ইংরেজী সাল খ্রিষ্টাব্দ ৬২৪ অনুযায়ী ১৩ ই মার্চ সংঘটিত হয়েছিল। আর আরবী হিজরী সাল ২য় বছর রমজান মাসের ১৭ তারিখে হয়েছিল। এই তারিখ গুলোর ক্ষেত্রে প্রায় অধিকংশ বিদ্বান ও ঐতিহাসিক সহমত পোষণ করেছে। কাজেই নিসন্দেহে বলা যাবে তারিখ গুলো বিশ্বস্ত।

বদর যুদ্ধে প্রথম শহীদ কে

বদর যুদ্ধে প্রথম শহীদ কে ব্যাপারে বলছি। যিনি শহীদ হয়ে ছিলেন এই যুদ্ধে তিনি হচ্ছেন একজন মুহাজির বা হিজরতকারী অর্থাৎ মক্কা থেকে মদীনায় আগমনকারী একজন সাহাবী। আর তার নাম হচ্ছে মাহমূদ বিন মুসলিমাহ্‌ (রাঃ), তিনি যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে এবং একিবারে প্রথম দিকে কোরাইশ যোদ্ধাদের নিক্ষিপ্ত তীরে বিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়ে ছিলেন।

বদর যুদ্ধে কতজন সাহাবী শহীদ হন

বদর যুদ্ধে কতজন সাহাবী শহীদ হন এ ব্যাপারে হালকা অভিমত রয়েছে। কোনো বর্ণনায় ১৩ জন আর কোনো বর্ণনা মতে ১৪ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তারা হচ্ছেন পর্যায়ক্রমে উমাইর ইবনুল হাম্মাম (রা), মুস'আব ইবনি উমাইর (রা), আব্দুল্লাহ ইবনি জাহশ (রা), সা'য়াদ ইবনি মুয়ায, রাব্বি ইবনি খাফাজ (রা) প্রভৃতি সাহাবী বীর যোদ্ধাগণ। তারা কতইনা ভাগ্যবান ছিলেন।

বদরের যুদ্ধ কেন হয়েছিল

বদরের যুদ্ধ কেন হয়েছিল ব্যাপারটি বলছি। যদিও ব্যাপারটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি আর্টিকেলের শুরুতে। আবারো বলছি কান লাগান। আসলে মুসলিমরা অমুসলিম কোরাইশদের দ্বারা নির্যাতিত হত বিভিন্ন উপায়ে। একটা সময় রাসূল মুহাম্মদ (সা) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে। এক্ষেত্রে নবী (স) সিরিয়া থেকে পথিমধ্যে আসা কোরাইশদের এক বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাধা দেওয়ায় যেই কাফেলা অস্ত্র-সস্ত্র সহ নানা যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে মুসলিমদের ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত হতে চলেছিল। একটা সময় যুদ্ধ বেধে যায় এবং মুসলিমগণ জয়ী হয় এবং অমুসলিম কোরায়শ পরাজয় বরণ করে।

বদর যুদ্ধে মুসলিম সেনাপতি কে ছিলেন

বদর যুদ্ধে মুসলিম সেনাপতি কে ছিলেন ব্যাপারটি ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। সত্যি বলতে মুসলিমদের পক্ষে যিনি একিবারে সামনে সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন তিনি আর কেউ নেই তিনি হচ্ছেন বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। প্রকৃত একজন নেতা ছিলেন নবী মোস্তফা। কেননা ছিলেন আদর্শ, তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত, তিনি ছিলেন রহমাতুল্লিল আলামীন।

বদর যুদ্ধ কোথায় সংঘটিত হয়

বদর যুদ্ধ কোথায় সংঘটিত হয় ব্যাপারটি আমরা উপরে উল্লেখ করেছি। বদর যুদ্ধের ইতিহাস কথাটার মাঝেই এই প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে। মদীনার অদূরবর্তী স্থান বদর নামক স্থানেই বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আর এই বদর নামক প্রান্তরে যুদ্ধটি ঘটার ফলে বদর শব্দের সাথে মিল রেখে এই যুদ্ধের নাম রাখা হয় বদর যুদ্ধ।

বদর যুদ্ধে মুজাহিদ কতজন ছিল

বদর যুদ্ধে মুজাহিদ কতজন ছিল এ প্রশ্নের উত্তরও পেয়েছেন আমি বিশ্বাস করি। আবারও স্পষ্ট করছি। বদর যুদ্ধে মুজাহিদ বা যোদ্ধা ছিল গ্রহনযোগ্য মতানুসারে ৩১৩। আর কোনো ইতিহাসবেত্তাদের মতে বদের যুদ্ধে মুজাহিদ্দের সংখ্যা ছিল ৩১৪ ছিল।

বদর যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর সংখ্যা কত ছিল

বদর যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর সংখ্যা কত ছিল প্রশ্নের উত্তরও প্রিয় পাঠক আপনার সামনে ব্যক্ত করেছি। পূণরায় বলছি সত্যিকার অর্থে শত্রু বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১০০০ জন। আর এ সংখ্যাটা হচ্ছে গ্রহনযোগ্য মত। কিন্তু তাদের সংখ্যা মুসলিমদের চেয়েও বেশি হওয়া স্বত্বেও তাদের তাকাব্বুরি বা অহমিকার কারণে তারা পরাজিত হয়।

বদর যুদ্ধকে কেন বিশ্বের ইতিহাস নির্ধারক যুদ্ধের একটি মনে করা হয়?

বদর যুদ্ধকে কেন বিশ্বের ইতিহাস নির্ধারক যুদ্ধের একটি মনে করা হয় ব্যাপারটি বলছি। কারণ এই যুদ্ধটি ইসলাম ধর্মের পথকে একদম পানির মত সহজ করে দিয়েছে। এই যুদ্ধটিকে ইসলাম ধর্মে ফুরকান বা সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করে দেয় এমন কিছু বলা হয়। আর এই যুদ্ধের ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ও বৃহত্তম যুদ্ধ যা জয় দিয়ে আরম্ভ হয়ে ছিল। এই যুদ্ধের ফলে মুসলিমদের ঈমান বা বিশ্বাস পাকা পোক্ত হয়, ইসলামের পথ সুগম হয়, রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং ইসলাম স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী হয়। এই সব কারণেই ইতিহাস নির্ধারক বলা হয় বদর যুদ্ধকে।

শেষ কথা

বদর যুদ্ধের ইতিহাস সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আমরা এই আর্টিকেলটির মাঝে। আর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের যোদ্ধাদের বলা হয়েছে তোমরা আজ থেকেই যা ইচ্ছা কর তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। প্রিয় পাঠক, উক্ত ব্লগটি পুরো মনোযোগ দিয়ে পড়লে আমার প্রত্যাশা আপনি বদর যুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। আরো এ রকম নিত্য উপকারী আর্টিকেল পেতে সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url