সালাতের গুরত্ব ও মাহাত্ম্যনামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি ব্যাপারগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ও সেনসিটিভ।
  একজন মুসলিম হিসেবে সালাতের ১৩ ফরজ না জানলে নামাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাই এটি
  জানতেই হবে। 
  এখানে সালাত বা নামাজের বাহিরের ও ভিতরের ফরজ ও ওয়াজিব বিষয় রয়েছে, অর্থাৎ
  নামাজের ভিতরেরগুলো ফরজ ও নামাজের বাহিরেরগুলো ওয়াজিব। এক সাথে সবগুলো আবশ্যক
  বিধায় তেরটি বিষয়ই ফরজ বলা হয়। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। 
পোস্টের সূচীপত্রঃ নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি জানুন
  নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি
  নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি প্রশ্নের উত্তরগুলো প্রত্যেক মুসলিম,
  আক্বিল-জ্ঞানী এবং বালিগ-প্রাপ্ত বয়স্ক মানে যাদের উপর নামাজ ফরজ তাদের জ্ঞাত
  হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী অর্থাৎ ফরজ বলা চলে। কারণ, নামাজ পড়া যেমন ফরজ নামাজের ১৩টি
  ফরজের সাথে নামাজ পড়া তেমন ফরজ। এগুলোর একটি ছুটে গেলে আমাদের নামাজ নষ্ট হয়ে
  যাবে। 
  তাই শুরুতেই ভূমিকাতেই আমরা বলেছি যে বিষয়টি খুব সেনসিটিভ ও ইম্পোর্ট্যান্ট।
  কিন্ত আমরা কয়জন মুসলিম নামাজের ১৩টা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্যগুলো জানি? তো
  চলুন জেনে নিতে সচেষ্ট হই ইনশাআল্লাহ। (আল্লাহ বুঝে মানার তৌফিক্ব দান করুন!)।
  প্রথমত বলব যে নামাজের ভিতরের বিষয়গুলোকে আরকান বা স্তম্ভ এবং ফরজ ও বলা
  হয়। 
  আরো পড়ুনঃ যাকাতের গুরত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে যত মর্মকথা বিস্তারিত জানুন
  আর নামাজের বাহিরের বিষয়গুলোকে আহকাম, শর্ত, ওয়াজিব ও বলা হয়। আর ওয়াজিব এবং ফরজ
  যেহেতু প্রায় কাছাকাছি তাই এক সাথে দোনোটাকে ফরজ বা আবশ্যকীয় বিষয় বলা হয়।
  নামাজের ভিতরে রয়েছে ৬টি ফরজ আর নামাজের বাহিরে রয়েছে ৭টি ফরজ। নিম্নে ৬+৭ = ১৩
  ফরজ দলীল সহ লিখছি।
  প্রথমত নামাজের ভিতরের ৬ ফরজ নিয়ে আলোচনা করি যেগুলো নামাজের রুকন বা স্তম্ভ বা
  খুঁটি। খঁটি বা পিলার না থাকলে যেমন ঘর নড়বড়ে হয় বা নড়চড় করে তদ্রুপ নামাজের
  ভিতের রুকন বা পিলার সমতুল্য বিষয়গুলো না জেনে নামাজ পড়লে নামাজ নড়বড়ে হয় বা
  মজবুত হয় না, এমনকি নামাজ ফাসেদ বা ভেঙ্গে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। 
  অর্থাৎ এগুলোর একটি ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিয়েও কাজ হবে না বা নামাজ বিশুদ্ধ হবে
  না পূণরায় নামাজ পড়তে হবে। নিম্নে নামাজের আভ্যন্তরীন ৬টি রুকন বা ফরজ এর বর্ণনা
  রইল। নামাজের ভিতরের ৬ ফরজ হলো যথাক্রমে ১. তাকবীরে তাহরীমা বলা ২. ক্বিয়াম করা
  ৩. সূরা ফাতিহা পড়া ৪. রুকু' করা ৫. সিজদা বা সাজদাহ করা এবং ৬. শেষ বৈঠকে বসা।
  এখন বিস্তারিত। 
  ১। তাকবীরে তাহরীমা বা শুরুর তাকবীরঃ তাকবীরে তাহরীমা মানে নামাজ শুরু করতে গিয়ে
  যে তাকবীর দেওয়া হয় সেটি এবং এ তাকবীর বলার সাথে সাথে দুনিয়াবী সকল কাজ হারাম হয়ে
  যায় বা বন্ধ দিতে হয় এবং আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়ে যেতে হয়। 
  আর এই জন্য এই তাকবীরের নাম তাহরীমা বা নিষিদ্ধকারী তাকবীর বা বড়ত্ব ঘোষণা। দলীলঃ
  সূরা মুদ্দাসসিরে রয়েছে "ওয়া রব্বাকা ফা কাব্বির" মানে তুমি তোমার প্রভুর শানে
  বড়ত্ব ঘোষণা কর। 
  ২। ক্বিয়াম করাঃ ক্বিয়াম একটি আরবী শব্দ যার অর্থ দাঁড়ানো, অর্থাৎ দাঁড়াতে সক্ষম
  ব্যক্তিদের জন্য দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ফরজ। যারা পারবে না তারা বসে পড়বে, বসে না
  পারলে শুয়ে পড়বে, শুয়ে প্রয়োজনে ইশারা ইঙ্গিতে পড়বে, তথাপিও হুশ থাকা পর্যন্ত
  নামাজের কোনো ছাড় নেই। 
  কারণ নামাজ নামক ইবাদত কবুল না হলে অন্য কোনো ইবাদত কবুল হবে হবে না। দলীলঃ সূরা
  বাক্বারাহ এর ২৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে "হা-ফিযূ আলাস স্বলাওয়াতি ওয়াস স্বলাতিল
  উস্ত্বা ওয়া কূমূ লিল্লাহি ক্ব-নিতীন" মানে তোমরা নামাজ সমূহের প্রতি যত্নবান হও,
  বিশেষ করে মধ্যবর্তী আসরের স্বলাত বা নামাজের প্রতি এবং তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে
  নামাজ পড়। 
  উল্লেখ্য যে, আর আসরের নামাজের গুরুত্ব এই জন্য যে এটি দিন ও রাতের মাঝের নামাজ,
  এটি ঠিকঠাক আদায় করলে যেন বাকী ৪ ওয়াক্ত নামাজ সহজে আদায়যোগ্য হয়ে যায়। 
  ৩। সূরা ফাতিহা পড়াঃ নামাজের তয় ফরজ হলো সূরা ফাতিহার সাথে নামাজ পড়া। নামাজ যদি
  দুই, তিন এবং চার রাকাত যাই হোক না কেন প্রথম দু রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়তেই হবে।
  না হলে নামাজ হবে না। সূরা মুযযাম্মিলে আল্লাহ বলেছেন, "ফাক্বরউ মা তায়াসসারা
  মিনাল কুরআন" অর্থাৎ তোমরা যতটুকু সহজসাধ্য হয় ততটুকু পড়। 
  আর হাদিসে নাবীজী বলেছে, "লা স্বলাতা লি মান লাম ইয়াক্বরা' বি ফাতিহাতিল কিতাব"
  অর্থাৎ যে ব্যক্তি ফাতিহাতিল কিতাব বা সূরা ফাতিহা পড়বে না তার নামাজ নেই মানে
  কবুল হবে না। তবে ইমাম নামাজ পড়ানোকালীন কেউ যদি মাসজিদে নামাজে আসে এবং সূরা
  ফাতিহা পড়ার মত টাইম না পাই তাহলে শুধু রুকু পাইলে নামাজ বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
  মুয়াত্ত্বা মালিকের হাদীস থেকে হাদিস বিশারদ বিদ্বানগণ ব্যাখ্যা করেছেন।
  ৪। রুকু করাঃ রুকু' মানে মাথা নত করা, অর্থাৎ দাঁড়ানো থেকে মাথা ঝুঁকিয়ে কোমর
  বরাবর মাথাটা সামনে কিবলার দিকে ঝুঁকাতে হয়। এটি করা নামাজে ৪র্থ ফরজ বা আবশ্যকীয়
  বিষয়। এক্ষেত্রে, সূরা হজ্জ্ব এ আল্লাহ বলেন, "ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আ'মানুর কাউ'
  ওয়াস জুদূ ওয়া' বুদূ রব্বাকুম ওয়াফ আলুল খয়রা লায়াল্লাকুম তুফলিহুন" 
  অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ তোমরা রুকু' কর, সিজদা কর, তোমাদের প্রভুর ইবাদত কর এবং
  তোমরা ভালো কাজগুল কর, তাহলে সম্ভবত (নিশ্চয় এর অর্থে) তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
  আর সূরা বাক্বারাহতে রয়েছে যে, তোমরা সালাত ক্বায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং
  রুকু' কারীদের সঙ্গে রুকু' কর। 
  ৫। সিজদা করাঃ সিজদা মানে মাটিতে মাথা ঠেকানো, অর্থাৎ রুকু' করার পর সোজা হয়ে
  দাড়িয়ে স্থির হয়ে মাটিতে মাথা, কপাল, নাক ঠেকানোকে সিজদা বা সাজদা বলে। এটি করা
  ফরজ, না হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। সূরা হজ্জ্ব ও ১৭ নং পারার শেষ পৃষ্ঠায় রয়েছে
  যে, তোমরা রুক' কর এবং সিজদা কর... তাহলে নিশ্চয় সফলকাম হবে।
  সিজদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, ইবলিস প্রথমে আল্লাহর একজন আবেদ ছিল,
  কিন্ত আল্লাহর হুকুমের একটি সিজদা আদম করতে অস্বীকার করায় সে ইবলিস, শয়তান ও
  কাফির এবং যালিম হয়ে গেছে। তাহলে দিনে রাতে আমরা কতগুলো সিজদা দিইনা হিসেব করেছি?
  তো আমাদের নাম কি হবে? একজন মু'মিন ও কাফির এবং মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে
  নামাজ পড়া আর না পড়া।
  ৬। শেষ বৈঠকে বসাঃ নামাজের শেষে দুই রাকাত হয় তাহলে বৈঠক একটা হয় এবং ৩ ও ৪ রাকাত
  হলে বৈঠক দুইটা হয়, তো নামাজে শেষ করতে গিয়ে সালাম ফিরানোর আগে বৈঠকে বসা ফরজ বা
  আবশ্যক।  কতিপয় বিদ্বান বলছেন যে যদি নামাজে দুই বৈঠক থাকে তাহলে ২ বৈঠকে
  বসাই ফরজ।  নামাজে শেষ বৈঠকে বসতে হবে এর দলীল হাদীসে রয়েছে। 
  এখন নামাজে বাহিরে ৭ ফরজ নিয়ে আলোচনা করব। এই ৭ ফরজ কে ওয়াজিব, শর্ত ও বলা হয়।
  কারণ নামাজের বাইরের এই ৭টি শর্ত সাপেক্ষেই নামাজ বিশুদ্ধ হবে নচেৎ হবে না। তাই
  এগুলোকে শর্ত বা আশরাত্ব বলা হয়। ৭টি শর্ত বা ফরজ হচ্ছে যথাক্রমে ১. শরীর পবিত্র
  হওয়া ২. কাপড় পবিত্র হওয়া ৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া ৪. সতর ঢাঁকা ৫.
  কিবলামুখী হওয়া ৬. ওয়াক্তমত নামাজ পড় এবং ৭. নামাজের নিয়্যাত করা। এখন বিস্তারিত।
  ১। শরীর পবিত্র হওয়াঃ নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো দেহ বা শরীর
  পবিত্র হতে হবে। কারণ, আল্লাহ পবিত্র আর যেই আল্লাহর জন্য প্রার্থনা করবেন তা
  পবিত্র শরীরে করতে হবে এটিই যুক্তিযুক্ত। আল্লাহ সূরা মুদ্দাছছিরে বলছেন যে, হে
  বান্দা, তুমি অপবিত্রতা ত্যাগ কর" মানে এখানে দৈহিকভাবে পবিত্রতা গ্রহণ করে নামাজ
  পড়তে বলা হয়েছে।
  ২। কাপড় পবিত্র হওয়াঃ নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আরো একটি শর্ত ও ফরজ বিধান হলো যে
  কাপড়ে নামাজ পড়ছেন সেই কাপড়টি পবিত্র হতে হবে। কাপড় পবিত্র না হলে নামাজ বিশুদ্ধ
  হবে না, আল্লাহ সূরা মুদ্দাছছিরেই বলছেন যে "অছিয়াবাকা ফাত্বহহির" মানে তুমি
  তোমার কাপড়গুলোকে পবিত্র কর এবং পবিত্র কাপড়ে নামাজ পড়। 
  ৩। নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়াঃ নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আরও একটি শর্ত এবং ফরজ
  কাজ হলো যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনি নামাজ পড়বেন সেটি যেন পবিত্র
  হয়। হাদিসে বলা হয়েছে পুরো পৃথিবীর সব জায়গায় নামাজ পড়া যাবে তবে
  প্রস্রাব-পায়খানা, উট বাধার জায়গা সহ অনুরুপ ময়লা আবর্জনা ও অপরিষ্কার এবং বিশেষ
  করে অপবিত্র জায়গাগুলোতে নামাজ হবে না। 
  ৪। সতর ঢাঁকাঃ নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আরো একটি ফরজ ও শর্ত হলো সতর মানে পুরুষ
  ও মহিলার বিশেষত যার যতটুকু সতর ততটুকু ঢেঁকে নামাজ পড়া। নয়লে নামাজ হবে না।
  পুরুষের সতর সোজা শুধ ঘাড় থেকে নাভি সহ হাঁটু পর্যন্ত ঢাঁকা, আর মহিলার সতর হলো
  মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুরোটা ঢেঁকে তার পর নামাজ পড়া। 
  ৫। কিবলামুখী হওয়াঃ নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আরও একটি শর্ত ও ফরজ বিধান হল
  কিবলামুখী অর্থাৎ বায়তুল্লাহ বা কা'বার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া আর না হলে নামাজ
  বিশুদ্ধ হবে না। দলীল হল তোমরা যেখানেই থাক আল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ
  পড়। 
  তবে কারো যদি কিবলা চিনতে অসুবিধা হয় তাতে যেদিকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে
  সে দিকে মুখ করে নিয়ে নামাজ পড়লে কোন সমস্যা নাই যেহেতু সে জানেই না। আল্লাহ
  নাজানা ব্যক্তিদের শাস্তি দিবে না। তবে জানার সব মাধ্যমে থাকা স্বত্ত্বেও জানার
  চেষ্টা না করলে আল্লাহ পাকড়াও করবেন।
  ৬। ওয়াক্তমত নামাজ পড়াঃ নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আরও একটি শর্ত ও বাহ্যিক
  ফরজ বিধান হল ওয়াক্তমত বা সময়মতো নামাজ পড়া। তবে নামাজের দুইটি টাইম বা
  ওয়াক্ত বা সময় রয়েছে, একটি আউয়াল ওয়াক্ত আর দ্বিতীয়টি শেষ ওয়াক্ত বা
  সময়, এক্ষেত্রে আওয়াল বা প্রথম ওয়াক্তে নামাজ পড়া উত্তম, আর দ্বিতীয়
  ওয়াক্তে নামাজ পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে কোন অসুবিধা হবে না। 
  দলীল হলো যে সূরায় নিছায় রয়েছে, "নিশ্চয় মু'মিনদের উপর ওয়াক্তমত নামাজ পড়া
  ফরজ" যখন তোমরা নামাজ শেষ করবে সেটি যেকোনো সময়ে তখন তোমরা দাঁড়িয়ে বসে
  অথবা শুয়ে আল্লাহর জিকির করো। তবে নামাজ টাইমলি আদায় করা ফরজ। তবে কোনো
  গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে সেটি ভিন্ন কথা। 
  ৭। নামাজে নিয়্যাত করাঃ নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আরও একটি গ্রহণযোগ্য শর্ত
  ও ফরজ বিষয় হলো নিয়ত করা। নিয়্যাত এটি আরবী শব্দ যার অর্থ সংকল্প বা ইচ্ছা
  করা। আপনি যে নামাজটা বা যে ওয়াক্তের নামাজটা পড়বেন সেটি পড়ার নিয়ত বা
  সংকল্প করবেন, এটি করা ফরজ আর না হলে নামাজ হবে না। দলীল হলো নবী (সা) এর
  বাণী, "প্রত্যেক আমলই নিয়তের উপর নির্ভরশীল।" (ছহীহ বুখারীর প্রথম হাদীস)।
  কাজেই উল্লেখিত নামাজের বাহিরের ফরজ শর্তগুলো সাপেক্ষে এবং নামাজের ভিতরের ফরজ
  রুকনগুলো মোতাবেক পড়ুন তাহলে এই নামাজই কাল কিয়ামতে আপনার একটি বিশুদ্ধ আমল
  হিসাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে হিসেব দিতে সহজ হবে। নামাজের হিসেব সঠিক তো সব
  হিসেব ঠিকমত দেওয়া যাবে আর না হলে সব বেঠিক হয়ে যাবে। তাই সজাগের সাথে ১৩ ফরজ ঠিক
  রেখে নামাজ পড়ুন।
  নামাজের ১৩ ফরজ কি কি
  নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি ব্যাপারগুলো ইতিমধ্যেই আমরা লিখে ফেলেছি। তবে
  এখানে ৭টি বাহ্যিক ফরজ এবং ৬টি আভ্যন্তরীন ফরজ সহ মোট নামাজের ১৩ ফরজ কি কি লিস্ট
  আকারে ক্রমান্বয়ে লিখছি। 
  
  
    - শরীর পাক
- কাপড় পাক
- নামাজের জায়গা পাক
- সতর ঢাঁকা
- কিবলামুখী হওয়া
- ওয়াক্তমত নামাজ পড়া
- নামাজের নিয়্যাত করা
- তাকবীরে তাহরীমা বলা
- ক্বিয়াম করা 
- সূরা ফাতিহা পড়া
- রুকু' করা
- সিজদা করা
- উভয় বৈঠকে বসা।
 
  নামাজের ভিতরে ফরজ কয়টি ও কি কি
  নামাজের ভিতরে ফরজ কয়টি ও কি কি ইতিমধ্যেই আলোচনার দ্বারা প্রকাশ
  পেয়েছে। তবে এখানে পয়েন্ট আকারে পর্যায়ক্রমে আবারো স্বরণার্থে লিখছি। নামাজের
  ভিতরে ফরজ হলো ৬টি যা নিম্নরুপ। 
  
    - শুরুতে আল্লাহু আকবর বলে নামাজ শুরু করা
- দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া
- সূরা ফাতিহা পড়া
- রুকু করা
- সাজদা করা
- শেষ বৈঠকে বসা
 
  নামাজের ভিতরে ৬ ফরজ কি কি
  নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি আমরা ইতিমধ্যেই লিখেছি। তবে এখানে নিচে আবারো
  সুন্দর করে লিখার চেষ্টা করছি।
  
    
      | ক্র. | ৬টি ফরজ | 
  
  
    
      | ০১ | তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাজ শুরু করা। | 
    
      | ০২ | ক্বিয়াম বা দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। | 
    
      | ০৩ | উম্মুল কিতাব বা সূরা ফাতিহা পড়া। | 
    
      | ০৪ | রুকু' করা বা মাথা নোয়ানো | 
    
      | ০৫ | সিজদা কিংবা সাজদা করা বা কপাল নাকসহ মাটিতে ঠেকানো | 
    
      | ০৬ | শেষ মাক্বয়াদ বা বৈঠকে বসা | 
  
  নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ কি কি
  নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি বিষয়টির দ্বারাতো নামাজের ভিতরে ৬ ফরজ
  সুষ্টপষ্ট হয়ে গেছে। আবারো নিম্নে টেবিলে লিখছি।
  
    
      | ক্র. | নামাজের শর্ত বা ওয়াজিব বা বাহিরের ফরজগুলো | 
  
  
    
      | ০১ | শরীর পাক হওয়া। | 
    
      | ০২ | কাপড় পাক-পবিত্র হওয়া। | 
    
      | ০৩ | নামাজের জায়গা পূত পবিত্র হওয়া। | 
    
      | ০৪ | সতর ঢাঁকা বা আবরণে আবৃত করা। | 
    
      | ০৫ | কিবলামুখী হওয়া বা আমাদের পশ্চিম দিকে মুখ করে নামাজ পড়া। | 
    
      | ০৬ | ওয়াক্ত বা টাইমলি নামাজ পড়া। | 
    
      | ০৭ | নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত বা ইচ্ছা করা। | 
  
  নামাজের বাহিরে কয় ফরজ ও কি কি
  নামাজের বাহিরে কয় ফরজ ও কি কি এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিধান। নিম্নে
  আবারো সহজ করে লিখছি। নামাজের বাহিরে ৭ ফরজ যেগুলো নিম্নে প্রকাশ করছি।
  
    - শরীর পূত পবিত্র করা।
- যে কাপড়ে নামাজ পড়বেন তা পবিত্র করা।
- যে স্থানে নামাজ পড়ছেন তা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হওয়া।
- পুরুষ ও মহিলার যে সতর তা আবৃত বা ঢেঁকে নামাজ পড়া।
- যে সময়ে নামাজ পড়বেন তা যথাযথ সময়ে হওয়া।
- যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়বেন তা হতে হবে কিবলার দিকে হওয়া।
- যে নামাজ টা পড়বেন তার জন্য মনে মনে সংকল্প বা ইরাদাহ করা।
 
  নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি
  নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এক্ষণে লিপিবদ্ধ করছি। আবারো হৃদয়াঙ্গম করার
  খাতিরে এই প্রশ্নে আলোকে এখানে নামাজের ফরজ কয়টি সেটি এবং ওয়াজিব কয়টি সেটি
  লিখছি। 
  নামাজের ফরজ ৬টি সেগুলো হলো যেমন তাকবীরে তাহরীমা, ক্বিয়াম, সূরা ফাতিহা, রুক,
  সিজদা এবং লাস্টের বৈঠক করা। 
  আরো পড়ুনঃ হজ্জের নিয়ম সম্পর্কে যত বিষয় আছে বিস্তারিত জানুন
  আর ওয়াজিব হলো ১৪টি আর সেগুলো যথাক্রমে সূরা ফাতিহা পড়া, সূরা ফাতিহার সাথে অন্য
  কোনো সূরা পড়া, জেহরী নামাজ বা ফরজ, ইশা ও মাগরিবে ১ম দু'রাতকাতে কিরাত সশব্দে
  পড়া, সূরা ফাতিহা আগে পড়া এরপর অন্য সূরা মিলানো, নামাজ তা'দীলে আরকান বা ধীর
  স্থিরতার সাথে পড়া, 
  ৩ বা ৪ রাকাত যুক্ত নামাজে দুই রাকাতে বসা, দ্বিতীয় রাকাত পড়ে আত্বাহিয়্যাতু পড়া,
  ফরজ ও ওয়াজিবের ক্রম বিন্যাস ঠিক রাখা, ফরজ ও ওয়াজিব বিষয়গুলো সুন্দরভাবে আদায়
  করা, বিতের সালাতে এক রাকাত বা তিন রাকাত নামাজে শেষ রাকা'আতে রুকুতে যাওয়ার আগে
  বা পরে বিতর এর দোয়া পড়া, 
  দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ৬ বা ১২ তাকবীর বলা, জেহরী নামাজগুলোর প্রথম দু'রাকাতে
  জোরে ক্বিরাত পড়া এবং সিররী নামাজে আস্তে ক্বিরাত পড়া, এবং সালাম ফিরিয়ে নামাজ
  শেষ করা। 
  সালাতের ভিতরে ফরজ গুলোকে কি বলে
  নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি এ শিরোনামের আলোচনার দ্বারা বিষয়টি ইতিমধ্যেই
  মোটামোটা সুষ্টপষ্ট হয়ে গেছে। তো আরো রওশন করছি এখানে বিষয়টি। সালাতের ভিতরে
  ফরজগুলোকে রুকন বা আরকান বা পিলার বা স্তম্ব বা খুঁটি বলে। যেগুলোর উপর পুরো
  নামাজের ভিত দাঁড়িয়ে থাকে। তাই ভিত ঠি রাখতে সালাতের ভিতরের ৬টি ফরজ ঠিক রাখুন।
  নামাজের ওয়াজিব ১৪টি কি কি
  নামাজের ওয়াজিব ১৪টি কি কি আমরা একবার উপরে আলোচনা করেছি। আবারো এখানে ক্রমান্বয়ে
  লিখছি।
  
  
    - সূরা ফাতিহা পড়া।
- সূরা ফাতিহার পরে এর সাথে অন্য সূরা মিলানো।
- কুরআন থেকে যতটুকু সহজ হয় ততটুকু ক্বিরাত নির্ধারণ করা।
- 
      সূরা বা ক্বেরাত পড়া এবং রুকু ও সাজদার ব্যাপারগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
    
- রুকু' থেকে স্ট্রেইট দাঁড়ানো।
- দুই সাজদার মাঝে স্থির ও সোজা হয়ে উপবেশন করা।
- 
      রুকু ও সাজদাহ ও দাঁড়ানো বিষয়গুলোতে ৩ তাসবীহ সমপরিমাণ বা মিনিমাম ১ তাসবীহ
      পরিমাণ স্থির হওয়া।
    
- ৩ ও ৪ রাকা'আত নামাজে দুই রাকাত নামাজে বেলায় বৈঠক করা।
- ১ম ও লাস্ট বসায় আত্বাহিয়্যাতু পড়া।
- 
      জোহর, আসর ফরয নামাজে ক্বিরাত আস্তে পড়া এবং মাগরিব, ইশা এবং ফজরে ক্বিরাত
      জোরে পড়া।
    
- বিতরের নামাজ দোয়া কুনূত পড়া।
- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া বাড়তি ৬/১২ তাকবীর বলা।
- প্রত্যেক রাকা'য়াতের তরতীব বা সিরিয়াল ঠিক রাখা। 
- এবং নামাজ সালাম দিয়ে শেষ করা।
 
  লেখকের শেষ মন্তব্য
  নামাজের ভিতরে বাহিরে ১৩ ফরজ কি কি বিষয়টি এখানে বিস্তারিত ও সুষ্পষ্ট করে লিখতে
  সচেষ্ট হয়েছি। প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত সালাত বা নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব বিষয়গুলো আশা
  করি বুঝতে পেরেছেন। নামাজ পড়ুন এবং ফরজগুলো সামনে রেখে পড়ুন তাহলে এই নামাজ শুদ্ধ
  হবে নচেৎ হবেনা। আরো এরকম আর্টিকেল পেতে আমাদের
  ওয়েবসাইটটির সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।
অধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ FAQ
ফরজ ইবাদত কয়টি ও কি কি?
  ফরজ ইবাদত মোট ৫টি যথা ১। আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত মা'বূদ নেই এ সাক্ষ্য দেওয়া ও
  মুহাম্মাদ (সা) আল্লার বান্দা ও রাসূল, ২। সালাত ক্বায়েম করা, ৩। নিসাব পরিমাণ
  সম্পদ হলে যাকাত প্রদান করা, ৪। রমাযানের ১ মাস সিয়াম পালন করা, এবং ৫। সামর্থ্য
  হলে বায়তুল্লাহ্ হজ্জ্ব করার সং কল্প করা।
নামাজের ১৪টি ফরজ কি কি?
  নামাজের ১৪টি ফরজ যথাক্রমে শরীর পাক, কাপড় পাক, নামাজের জায়গা পাক, সতর ঢাঁকা,
  কিবলামুখী হওয়া, ওয়াক্তমত নামাজ পড়া, নামাজের নিয়ত করা এবং তাকবীরে তাহরীমা বলা,
  দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া, সূরা ফাতিহা পড়া, রুকু' করা, সিজদা করা, এবং শেষে বৈঠক করা আর
  বিষয়গুলোকে ধারাবাহিকভাবে করা।
সর্ব মোট ফরজ কতটি?
  সর্ব মোট ফরজ এর ব্যাখ্যা হল ইসলামের ফরজ হচ্ছে ৫টি, ঈমানের ফরজ ৬টি এবং নামাজের
  ভিতরে ও বাহিরের ফরজ ১৩টি।
 
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url