হিজামার উপকারিতা ও অপকারিতা: ইসলামিক এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
শিশুর নানা অসুখে শিশুকে যে ফল খাওয়াতে হবেবর্তমান সময়ে চিকিৎসা পদ্ধতির বহুমুখীকরণ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে হিজামা থেরাপি বা কাপিং থেরাপি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এটি শুধুমাত্র মুসলিম সমাজে প্রচলিত একটি সুন্নাতি চিকিৎসা নয়, বরং এখন পুরো বিশ্বেই বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
বিশেষ করে এমন অনেক রোগ বা শারীরিক অস্বস্তি রয়েছে যা দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনেও আরাম পাওয়া যায় না, সেখানে হিজামা কার্যকরভাবে কাজ করে থাকে। এ পদ্ধতিতে শরীর থেকে অশুদ্ধ রক্ত বের করে দেওয়ার মাধ্যমে শারীরিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
ইসলাম ধর্মে হিজামার গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিস শরীফে বহুবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিজামা করার উপদেশ দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও নিয়মিত হিজামা করাতেন। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে হিজামার উপকারিতা খুঁজে পেয়েছে। তবে এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষ করে যদি অদক্ষ কারিগরের মাধ্যমে বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এটি করা হয়।
এই ব্লগে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করব – হিজামা কী, এর ইসলামী ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, উপকারিতা, অপকারিতা, আধুনিক চিকিৎসায় এর ভূমিকা এবং সচেতনতার দিক। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সুন্নাহ নয়, বরং একটি কার্যকর, বিজ্ঞানসম্মত ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা যথাযথভাবে গ্রহণ করলে অনেক রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
পোস্টের সূচীপত্রঃ
🩸 হিজামা কী?
হিজামা (Hijama) একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি যা আরবি শব্দ “حجامة” থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো “চুষে নেওয়া” বা “রক্ত বের করে দেওয়া”। এটি এক ধরনের বিকল্প ও প্রাকৃতিক থেরাপি, যাতে শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টে কাপ বসিয়ে ভ্যাকুয়াম তৈরি করা হয় এবং সেই স্থানে ক্ষুদ্র কাটা দিয়ে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় রক্ত বের করে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ সুস্থ থাকতে পাতিলেবুর ব্যবহার ও উপকার এর জুড়ি মেলা ভার
এই পদ্ধতিকে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় Wet Cupping Therapy বলা হয়। এটি মূলত শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা, টক্সিন দূর করা, ব্যথা কমানো এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগের উপশমে ব্যবহৃত হয়।
হিজামার দুটি ধরন:
✅ Dry Cupping (শুষ্ক কাপিং): রক্ত ছাড়াই শুধু কাপ বসিয়ে টান সৃষ্টি করা হয়।
✅ Wet Cupping (ভেজা কাপিং / হিজামা): প্রথমে ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি করে পরে ক্ষুদ্র কাটার মাধ্যমে রক্ত বের করা হয়।
হিজামার কার্যকরীতা শুধু রক্তচাপ, ব্যথা ও মাথাব্যথা নয়; বরং এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
🕌 হিজামা: ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি
হিজামা শুধু একটি চিকিৎসা নয়; বরং এটি সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে হিজামা করেছেন, সাহাবাদেরকে উৎসাহিত করেছেন এবং হিজামাকে কল্যাণকর চিকিৎসা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
🔸 হাদিসের আলোকে হিজামার গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“তোমরা যদি কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিতে কল্যাণ চাও, তবে তা হলো হিজামা।”
📚 (সহিহ বোখারী, হাদিস: ৫৩৫৭)
তিনি আরও বলেন:
“রাতের বেলায় কেউ হিজামা করলে তা শরীরকে আরও চাঙা করে দেয়।”
📚 (মুসনাদে আহমদ)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত:
“নবী করীম ﷺ বলেন, আমি আমার জীবনের অনেক অংশ হিজামা করেছি এবং আমার উম্মতদের জন্য তা উত্তম।”
📚 (সুনানে ইবনে মাজাহ)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে হিজামা একটি সুন্নাতি চিকিৎসা পদ্ধতি, এবং শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য তা গ্রহণযোগ্য।
✨ হিজামার ইসলামিক উপকারিতা
- ✅ সওয়াবের নিয়তে করলে ইবাদতের সওয়াব অর্জন হয়
- ✅ নবী করীম ﷺ এর সুন্নাহ অনুসরণ করা হয়
- ✅ বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়
- ✅ দৈহিক ও আত্মিক শান্তি পাওয়া যায়
- ✅ সঠিক নিয়তে করলে দোয়া কবুলের উপযুক্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়
📅 হিজামার সুন্নাতি সময়
হাদিসে উল্লেখ আছে যে চন্দ্র মাসের নির্দিষ্ট তারিখে হিজামা করলে তা আরও উপকারী হয়।
হাদিস:
“যে ব্যক্তি হিজামা করবে ১৭, ১৯ বা ২১ তারিখে, সে রোগ থেকে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ।”
📚 (সুনানে আবু দাউদ)
🔹 সুন্নাতি তারিখ: আরবি মাসের ১৭, ১৯ ও ২১
🔹 সুন্নাতি দিন: সোমবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার
📌 ইসলামিক ফতোয়া ও পরামর্শ
মজলিসে উলামা ও বিভিন্ন দারুল উলুম হিজামাকে শরিয়তসম্মত ও হালাল চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করে। তবে এটি করার ক্ষেত্রে শরিয়াহ মোতাবেক পর্দা রক্ষা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা জরুরি।
বিশ্বখ্যাত ইসলামিক ওয়েবসাইটে হিজামা সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন:
🔗 IslamQA.info – Hijama in Islam
🔍 উপসংহার (এই অংশের)
হিজামা ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবীদেরও উৎসাহিত করেছেন। ধর্মীয়ভাবে এটি সওয়াব অর্জনের মাধ্যম, আবার চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি কার্যকর, নিরাপদ ও স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে হিজামা করার আগে অবশ্যই দক্ষ ব্যক্তির কাছ থেকে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে করানো উচিত।
📜 হিজামার ইতিহাস
🏺 প্রাচীন ইতিহাসে হিজামা
হিজামা (Hijama) বা কাপিং থেরাপির ইতিহাস হাজার হাজার বছর পুরোনো। এটি শুধু ইসলামিক সভ্যতায় নয়, বরং প্রাচীন চীন, মিশর, পারস্য, গ্রিক এবং ভারতীয় সভ্যতার চিকিৎসা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
🧱 ১. মিসরীয় সভ্যতায় হিজামা:
প্রাচীন মিসরের চিকিৎসাবিদরা হিজামা থেরাপিকে রক্ত বিশুদ্ধকরণ ও দেহের ভারসাম্য রক্ষার একটি কার্যকর উপায় মনে করতেন। বিখ্যাত মিসরীয় প্যাপিরাস "Ebers Papyrus" (প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ অব্দে রচিত) -এ হিজামা বা রক্তচোষণ প্রক্রিয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে শরীর থেকে অপবিত্র রক্ত বের করে দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং জীবন দীর্ঘায়িত হয়।
🧧 ২. চীনা সভ্যতায়:
প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি "Traditional Chinese Medicine (TCM)"-এ হিজামার মতো থেরাপিকে “বায়ু ও শক্তির (Qi) ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার উপায়” হিসেবে ধরা হতো। তারা বিশ্বাস করতেন, দেহের বিভিন্ন মেরিডিয়ান (meridian) বা চ্যানেলে রক্তের সঠিক প্রবাহ থাকলে রোগ হ্রাস পায়।
🏛️ ৩. গ্রিক ও রোমান চিকিৎসায়:
বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটিস (Hippocrates) হিজামার মতো চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন, “দেহ থেকে বিষাক্ত রক্ত বের করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।” রোমান সেনাবাহিনীর মধ্যেও রক্তচোষণ পদ্ধতি ছিল প্রচলিত।
🕌 ইসলামী যুগে হিজামার প্রসার
ইসলামের আগমনের পূর্বে আরব উপদ্বীপেও হিজামা প্রচলিত ছিল। কিন্তু ইসলামের প্রবর্তনের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন এই পদ্ধতি নিজে গ্রহণ করলেন এবং এর উপকারিতা হাদিসে বর্ণনা করলেন, তখন এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা নয়, বরং একটি সুন্নাহ হিসেবে পরিগণিত হতে শুরু করে।
✨ নবী করীম ﷺ এর সময়ে হিজামার গুরুত্ব:
নবী করীম ﷺ বিভিন্ন হাদিসে হিজামার উপকারিতা বলেছেন এবং নিজেও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করতেন। যেমন:
“নবী করীম ﷺ হিজামা করাতেন এবং বলতেন, এটি তোমাদের চিকিৎসার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।”
📚 (সহিহ বোখারী)
হিজামার আধুনিকরূপ শুরু হয় ইসলামী স্বর্ণযুগে, যখন মুসলিম চিকিৎসাবিদরা একে আরো উন্নত করেন এবং তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা দেন।
🧠 মুসলিম চিকিৎসাবিদদের অবদান
ইসলামের স্বর্ণযুগে (৮ম থেকে ১৪শ শতাব্দী), মুসলিম চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরা হিজামা নিয়ে গবেষণা করে চিকিৎসা বইয়ে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। যেমন:
📚 ইবনে সিনা (Avicenna):
তিনি তার বিখ্যাত বই “The Canon of Medicine (আল-কানুন ফি তিব্ব)”-এ হিজামার উপকারিতা, সময়, প্রয়োগ পদ্ধতি এবং নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন,
“হিজামা শরীরের ভেতরের আবর্জনা বের করে দেয় এবং রক্ত সঞ্চালনকে গতিশীল করে।”
📚 আল-রাজি (Rhazes):
তিনি হিজামাকে উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা এবং মেলানকোলিয়া (depression)-এর জন্য ব্যবহারের কথা বলেছেন।
🌍 আধুনিক যুগে হিজামার ফিরে আসা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে হিজামা বা কাপিং থেরাপি নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে। বিশেষ করে:
ইউরোপ ও আমেরিকার “Alternative Therapy Clinics”-এ
খেলোয়াড়দের “recovery therapy” হিসেবে
ইসলামি দেশগুলোতে সুন্নাহর অংশ হিসেবে
বিশ্বখ্যাত অ্যাথলেট মাইকেল ফেলপস ও নোভাক জোকোভিচ এর মতো খেলোয়াড়রাও হিজামা ব্যবহার করেছেন তাদের শারীরিক ফিটনেসের জন্য।
🔗 BBC Report – Cupping in Olympic Games
📌 সারাংশ
হিজামা কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। এটি হাজার বছরের পুরনো এক বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি, যার ভিত্তি রয়েছে মিসরীয়, চীনা, গ্রিক এবং ইসলামিক ঐতিহ্যে। এটি শুধু শরীরিক সুস্থতার উপায় নয়, বরং মুসলিমদের জন্য এটি একটি ইবাদতের অংশ। সময়ের পরিবর্তনে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও হিজামার কার্যকারিতা স্বীকার করছে, এবং বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এর গঠনমূলক প্রভাব।
✅ হিজামার উপকারিতা (বিজ্ঞানভিত্তিক ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ)
হিজামা একটি অলৌকিক নয়, বরং বাস্তবসম্মত ও শরীরঘনিষ্ঠ চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি শুধু রোগ উপশমে নয়, বরং রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি কল্যাণকর সুন্নাহ, আর আধুনিক চিকিৎসা গবেষণাগুলোতে একে "সাপ্লিমেন্টারি থেরাপি" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
🕌 ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিজামার উপকারিতা
ইসলামে হিজামা শুধুমাত্র একটি চিকিৎসা পদ্ধতি নয়; বরং এটি একটি মোবারক সুন্নাহ। বহু হাদিসে হিজামার ফজিলত ও উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে।
📌 গুরুত্বপূর্ণ হাদিসসমূহ:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যদি তোমরা কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিতে কল্যাণ খুঁজো, তবে তা হলো হিজামায়।”
📚 (সহিহ বোখারী: ৫৩৫৭)
“আমি ফেরেশতাদের কেউকেটা দলকে দেখেছি যারা বলছিল, 'হে মুহাম্মদ, আপনার উম্মতদেরকে হিজামা করার আদেশ দিন।’”
📚 (তিরমিযী, হাদিস: ২০৫১)
✨ ইসলামিক দৃষ্টিতে উপকারিতাগুলো:
- ✅ সওয়াব অর্জনের সুযোগ – সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়।
- ✅ রুহানিয়াত বৃদ্ধি পায় – আত্মা ও শরীর উভয়ই হালকা অনুভব করে।
- ✅ সুস্থ জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
- ✅ নিয়মিত হিজামায় নফস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
- ✅ সুন্নাহভিত্তিক লাইফস্টাইলের অনুশীলন হয়।
🧬 চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে হিজামার উপকারিতা
হিজামা বর্তমানে আধুনিক মেডিকেল স্টাডিতে ব্যাপক গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে শরীরকে পরিশুদ্ধ করে তোলে।
🔬 বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে উপকারিতা:
✅ গবেষণা সূত্র:
“The Effects of Wet Cupping Therapy: A Systematic Review”
– National Library of Medicine (NCBI)
🩺 শারীরিক উপকারিতা (Medical Benefits)
১. 🧠 মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা উপশমে কার্যকর
হিজামা মাথার পেছনের নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করলে, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথা উপশম হয়। মাইগ্রেন রোগীদের জন্য এটি একটি নিরাপদ বিকল্প।
২. 💪 ঘাড়, পিঠ ও জয়েন্ট ব্যথা হ্রাসে সহায়ক
মাংসপেশির ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার ও অস্টিওআর্থ্রাইটিসে হিজামা কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি টেনশন রিলিফ দেয়।
৩. ❤️ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
হিজামার মাধ্যমে ব্লাড সার্কুলেশন উন্নত হয়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও হৃদযন্ত্রে চাপ কমে।
৪. ⚖️ ডিটক্সিফিকেশন বা টক্সিন দূরীকরণ
হিজামা শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ও দূষিত রক্ত অপসারণ করে। এতে শরীর হালকা ও পরিষ্কার থাকে।
৫. 🦠 ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
রক্ত পরিষ্কার হলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অনেক ক্ষেত্রে সর্দি-কাশি ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৬. 👩🦰 চুল পড়া রোধ ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
হিজামা স্ক্যাল্প ও ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে চুল পড়া রোধ করে এবং ত্বককে সজীব রাখে।
৭. 💡 মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা হ্রাস
হিজামা করলে শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
৮. 🔥 ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ হ্রাস
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগে উপশম দিতে পারে।
৯. 🩸 রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক (ডায়াবেটিস)
বিশেষজ্ঞদের মতে, হিজামা ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায় এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে।
🔟 🩺 হরমোন ভারসাম্য রক্ষা
বিশেষ করে নারীদের পিসিওডি (PCOS), অনিয়মিত মাসিক, হরমোনাল সমস্যা ইত্যাদিতে হিজামা সহায়ক।
🌿 সম্পূরক থেরাপি হিসেবে হিজামা
বিভিন্ন দেশে হিজামাকে এক্সারসাইজ, মেডিটেশন এবং ফিজিওথেরাপির সাথে মিলিয়ে বিকল্প ও সমন্বিত চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে হিজামা ও আকুপাংচার একসাথে প্রয়োগ করা হয়।
📖 Source: British Cupping Society
🧾 হিজামা চিকিৎসকদের অভিমত
অনেক রেজিস্টার্ড প্রাকৃতিক থেরাপিস্ট ও হিজামা বিশেষজ্ঞরা জানান, নিয়মিত হিজামা করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর ও মন দুটোই চাঙা থাকে। তবে একে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এবং নিরাপদ পরিবেশে করানো উচিত।
🔍 উপসংহার (এই অংশের)
হিজামা ইসলামি সুন্নাহ হিসেবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে এটি আজকের আধুনিক চিকিৎসায় এক পরিপূর্ণ ও কার্যকর বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। শরীরের রক্ত বিশুদ্ধকরণ থেকে শুরু করে মানসিক প্রশান্তি, হরমোন ভারসাম্য রক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ—সব দিকেই হিজামা রাখতে পারে দৃঢ় ভূমিকা।
তবে এটি সবার জন্য উপযোগী নয়; বিশেষ কিছু শারীরিক শর্ত থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হিজামা করা উচিৎ নয়।
🏥 শরীরের কোন কোন সমস্যায় হিজামা উপকারী
হিজামা থেরাপি মূলত শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ত রক্ত অপসারণের মাধ্যমে শরীরকে ভারসাম্যপূর্ণ করে। বিভিন্ন গবেষণায় ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট রোগ বা সমস্যা রয়েছে যেখানে হিজামা অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
নীচে হিজামা-উপযোগী কিছু সাধারণ ও জটিল রোগের তালিকা ও ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. 🧠 মাইগ্রেন ও নিয়মিত মাথাব্যথা
হিজামা মাথার পিছনের নির্দিষ্ট স্থানে (যাকে বলা হয় "অকসিপিটাল পয়েন্ট") প্রয়োগ করলে মাথাব্যথা দ্রুত হ্রাস পায়।
✅ কারণ: হিজামা রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং মাথায় সৃষ্ট চাপ কমায়।
🔬 গবেষণা সূত্র:
Hijama improves cerebral blood flow and reduces chronic tension-type headache.
২. 💪 ঘাড় ও পিঠ ব্যথা (Cervical Pain, Lower Back Pain)
দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে ঘাড় ও কোমরের ব্যথা এখন খুবই সাধারণ সমস্যা। হিজামা এসব জায়গায় রক্তচলাচল স্বাভাবিক করে, ব্যথা উপশম করে।
✅ উপকার:
- Cervical Spondylosis
- Frozen Shoulder
- Sciatica
- Lumbar Pain
৩. 🦵 জয়েন্ট ব্যথা ও আর্থ্রাইটিস
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট ও ওস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগে হিজামা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
✅ উপকারের কারণ:
- প্রদাহ (inflammation) হ্রাস
- রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি
- ব্যথার অনুভূতি কমানো
৪. 🩺 উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
হিজামা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে যেসব রোগীর রক্তচাপ ওষুধে কমে না, তাদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক সহায়ক পদ্ধতি।
✅ উপকার:
টেনশন কমায়
হৃদপিণ্ডের চাপ হ্রাস করে
৫. 🩸 ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন ভারসাম্য
যদিও হিজামা ডায়াবেটিসের সরাসরি প্রতিকার নয়, তবে এটি রক্ত পরিষ্কারের মাধ্যমে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে পারে।
✅ উপকার:
- Pancreas এর কার্যকারিতা উন্নত হতে পারে
- Peripheral Circulation উন্নত হয়
📌 সতর্কতা: ইনসুলিন ব্যবহারকারী বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভোগা রোগীদের জন্য চিকিৎসকের অনুমতি আবশ্যক।
৬. 👩🦰 চুল পড়া ও স্ক্যাল্প সমস্যা
চুল পড়া রোধে মাথার নির্দিষ্ট স্থানে হিজামা করলে স্ক্যাল্পে রক্তপ্রবাহ বাড়ে এবং Hair Follicle সক্রিয় হয়।
✅ উপকার:
- Alopecia
- Dandruff
- Hair Regrowth Stimulation
৭. 🧬 হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
নারীদের পিসিওডি (PCOS), মাসিক অনিয়ম, এবং হরমোনাল ইমব্যালেন্স সমস্যায় হিজামা উপকার করে। এটি থাইরয়েড সমস্যা এবং স্ট্রেস সংক্রান্ত হরমোন ভারসাম্যেও সহায়ক।
✅ উপকার:
- Estrogen/Progesterone ভারসাম্য
- পিরিয়ড নিয়মিতকরণ
- মুড ও মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ
৮. 💨 অ্যাজমা ও এলার্জি সমস্যা
বুকে ও ফুসফুসের পেছনের অংশে হিজামা করলে শ্বাসনালী খুলে যায় এবং শ্বাসকষ্ট কমে।
✅ উপকার:
- Bronchial asthma
- Seasonal allergies
- Chest congestion
৯. 🧠 মানসিক চাপ ও ঘুমের সমস্যা
হিজামা করতে গেলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ডিপ্রেশন ও স্ট্রেস হ্রাসে সহায়ক।
✅ উপকার:
- Anxiety
- Depression
- Insomnia
১০. 🧪 ত্বকের রোগ
ত্বকের রক্তচলাচল বৃদ্ধি করে হিজামা সোরিয়াসিস, একজিমা, অ্যাকনে ইত্যাদিতে আরাম দিতে পারে।
✅ উপকার:
- বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়
- স্কিন টোন উন্নত হয়
- ত্বক পরিষ্কার থাকে
📍 অন্যান্য উপকারিতার ক্ষেত্রে যেখানে হিজামা কার্যকর:
সময় | উপকার |
---|---|
হজমের সমস্যা | লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় |
কিডনি সমস্যা | ফিল্টারিং প্রক্রিয়া সক্রিয় করে |
অনিদ্রা | স্তিষ্ককে রিল্যাক্স করে |
মাংসপেশির টান | রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ব্যথা কমায় |
ভ্রমণের ক্লান্তি | শরীর পুনরুজ্জীবিত করে |
🔍 উপসংহার (এই অংশের)
হিজামা এমন একটি বহুমাত্রিক থেরাপি, যার উপকারিতা শারীরিক, মানসিক ও হরমোনাল স্তরজুড়ে বিস্তৃত। তবে রোগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে হিজামা করতে হয়, যা শুধুমাত্র অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিজামা কারিগরের মাধ্যমেই করা উচিত।
🕰️ হিজামা করার সঠিক সময় ও নিয়মাবলী
হিজামা থেরাপির কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে সময় ও পদ্ধতির উপর। ইসলামিক হাদিস, চিকিৎসা গবেষণা এবং অভিজ্ঞ হিজামা বিশেষজ্ঞদের মতে – নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম মেনে হিজামা করলে এর উপকারিতা বহুগুণে বেড়ে যায়।
ভুল সময়ে বা অনুপযুক্তভাবে করলে কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, এমনকি ক্ষতিও হতে পারে।
🕌 ইসলামিক দৃষ্টিতে হিজামার সঠিক সময়
রাসূলুল্লাহ ﷺ হিজামা করার নির্দিষ্ট দিন ও চন্দ্র মাসের নির্দিষ্ট তারিখে হিজামা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
📅 আরবি চন্দ্র মাসের উপযুক্ত তারিখ:
❝যে ব্যক্তি হিজামা করবে ১৭, ১৯, ২১ তারিখে, সে রোগ থেকে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ।❞
📚 (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৬১)
✅ তাই ইসলামী দৃষ্টিকোণে সবচেয়ে উপকারী দিন:
- আরবি মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখ
- সোমবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার দিনে
🔺 শুক্রবার, শনিবার ও রবিবারে হিজামা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
🕓 দিনের কোন সময়ে হিজামা করা উত্তম?
আধুনিক চিকিৎসা ও হিজামা বিশেষজ্ঞদের মতে:
- সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা (শরীর তখন সবচেয়ে প্রস্তুত অবস্থায় থাকে)
- খালি পেটে হিজামা করলে রক্তের শুদ্ধতা ও কার্যকারিতা বেশি হয়
- খাওয়ার পর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে হিজামা করা উত্তম
📝 হিজামা করার নিয়মাবলী
হিজামা একটি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল পদ্ধতি, তাই এটি করতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ধাপে ধাপে নিয়মাবলী দেওয়া হলো:
১. ✅ প্রস্তুতির ধাপ (Before Hijama)
🔹 পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে আসা
🔹 কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা আগে থেকে ধূমপান, চা-কফি, চর্বিযুক্ত খাবার বন্ধ রাখা
🔹 খালি পেটে অথবা হালকা খাবার খেয়ে আসা
🔹 যথাসম্ভব ওজু অবস্থায় আসা (সুন্নাহ হিসেবে)
২. ✅ কাপিং প্রক্রিয়া (During Hijama)
- সাবান ও অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে হিজামা স্থানের ত্বক পরিষ্কার করা হয়
- Sterile কাপ দিয়ে ভ্যাকুয়াম তৈরি করা হয়
- প্রথমে Dry Cupping করে পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়
- তারপর ১-২ মিলিমিটার সূক্ষ্ম কাটার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ছিদ্র তৈরি করা হয়
- Wet Cupping এর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় রক্ত বের করা হয়
- প্রক্রিয়া শেষে জায়গাগুলো স্যানিটাইজ করে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়
🩺 সতর্কতা: ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অবশ্যই স্টেরাইল ও একবার ব্যবহারের উপযোগী (Disposable) হতে হবে।
৩. ✅ হিজামার পরে করণীয় (After Hijama)
🔹 অন্তত ১২ ঘণ্টা স্নান/গোসল থেকে বিরত থাকতে হবে
🔹 ২৪ ঘণ্টা চর্বিযুক্ত খাবার, দুধ, মাছ, ডিম ও টকজাতীয় খাবার খাওয়া এড়ানো
🔹 পর্যাপ্ত পানি পান করা ও বিশ্রাম নেওয়া
🔹 প্রয়োজনে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে
🔐 হিজামা থেরাপির জন্য নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
⚠️সতর্কতা | বিস্তারিত |
---|---|
✔️ প্রশিক্ষিত হিজামা কারিগরের কাছ থেকে হিজামা করানো উচিত | লরক্তনালীর গভীরতা,পয়েন্ট নির্ধারণে ভুল হলে বিপদ হতে পারে |
✔️ হিজামার স্থান পরিবর্তন না করে সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে হিজামা করা | যেমন: আকদাহ, কাহিল, স্ক্যাপুলা ইত্যাদি |
✔️ ব্লেড ও কাপ একবারের বেশি ব্যবহার নিষেধ | সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় |
❌ উচ্চ রক্তশূন্যতা বা অত্যন্ত দুর্বল শরীরের ক্ষেত্রে হিজামা করা উচিত নয় | চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যক |
📍 বিশেষভাবে যারা হিজামা না করানোই ভালো
- 👶 ১২ বছরের কম বয়সী শিশু
- 🤰 গর্ভবতী নারীরা (বিশেষ করে প্রথম ৩ মাসে)
- 🩸 রক্তশূন্যতা বা হিমোগ্লোবিন ৯-এর নিচে হলে
- 💊 ব্লাড থিনার ওষুধ সেবনকারীরা
- 🧓 দুর্বল ও বৃদ্ধরা যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল
- 📌 তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা পেলে ব্যতিক্রম হতে পারে।
🔍 উপসংহার (এই অংশের)
হিজামার উপকারিতা সর্বোচ্চ উপভোগ করতে চাইলে সঠিক সময় ও নিরাপদ নিয়মাবলী মেনে তা করতে হবে। এটি ধর্মীয়ভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও একটি স্পর্শকাতর পদ্ধতি। এজন্য প্রশিক্ষিত ব্যক্তি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও শরীরের প্রস্তুত অবস্থায় হিজামা করানো অপরিহার্য।
❌ হিজামা করার ঝুঁকি ও অপকারিতা
হিজামা একদিকে যেমন উপকারী, অন্যদিকে এটি একটি আঘাত-ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি হওয়ায় কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থেকে যায়—বিশেষ করে যদি এটি অদক্ষ ব্যক্তি দ্বারা, অনিয়মিত পদ্ধতিতে বা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে করা হয়।
নিচে হিজামার কিছু সাধারণ ও গুরুতর অপকারিতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভিত্তিতে ঝুঁকিগুলো তুলে ধরা হলো:
⚠️ ১. সংক্রমণের ঝুঁকি (Infection Risk)
হিজামার সময় চামড়ায় ক্ষুদ্র ক্ষত তৈরি হয়। যদি ব্লেড, কাপ বা যন্ত্রপাতি ঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না হয়, তবে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
🔬 CDC – Center for Disease Control অনুযায়ী, ক্ষতযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্টেরাইল ব্যবস্থা না রাখলে staphylococcus, MRSA, hepatitis B/C-র মত সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
🩸 ২. অতিরিক্ত রক্তপাত ও রক্তশূন্যতা
অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বা বেশি সময় ধরে হিজামা করলে শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায়, ফলে হালকা মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, এমনকি রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
💡 বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হিমোগ্লোবিন কম বা যকৃৎ সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
🧠 ৩. মাথা ঘোরা ও জ্ঞান হারানো
হিজামার পরে অনেকেই অসুস্থ বোধ, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বা অজ্ঞান হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা পান। এটি বিশেষ করে খালি পেটে হিজামা করলে বা শরীরের পানি কম থাকলে ঘটে।
✔️ এজন্য হিজামার আগে ও পরে পর্যাপ্ত পানি পান এবং বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।
🩹 ৪. চর্মরোগ বা ত্বকের জ্বালা
হিজামা করার স্থানে অনেক সময় লালচে ফোলা ভাব, জ্বালা, চুলকানি বা ত্বকের সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। এটি হয় –
- অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে
- অ্যালার্জি থাকলে
- অশুচি যন্ত্রপাতির কারণে
🚫 ৫. ভুল পয়েন্টে হিজামা করার ঝুঁকি
হিজামা করার সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট রয়েছে, যেমন: কাহিল, আকদাহ, কাঁধের পেছন ইত্যাদি। যদি অজানা বা ভুল স্থানে করা হয়, তবে:
- নার্ভ ড্যামেজ হতে পারে
- পেশির ব্যথা বেড়ে যেতে পারে
- চিকিৎসার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে
📚 জার্নাল অব অল্টারনেটিভ মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে, ভুল পয়েন্টে হিজামা করলে সেটি কার্যকর না হয়ে বরং ক্ষতিকরও হতে পারে।
🤕 ৬. স্থায়ী দাগ বা দাগ বসে যাওয়া
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিজামার দাগ ৭-১০ দিনের মধ্যে মিলিয়ে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে স্থায়ী চিহ্ন বা কালো দাগ বসে যায়—বিশেষ করে যদি একজন ব্যক্তি বারবার একই স্থানে হিজামা করান।
❗ ৭. কিছু রোগে হিজামা সম্পূর্ণ বারণ
নিচের শারীরিক অবস্থায় হিজামা সম্পূর্ণ নিষেধ:
- হিমোফিলিয়া (রক্ত জমাট বাঁধতে না পারা)
- রক্তচাপ অতিরিক্ত কম থাকলে
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করলে (warfarin, aspirin ইত্যাদি)
- গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে
- খুব দুর্বল বা সংবেদনশীল রোগীদের ক্ষেত্রে
📍 সংক্ষেপে – হিজামার অপকারিতা ও সাবধানতা
⚠️ সমস্যা | 🛡️ প্রতিকার / প্রতিরোধ |
---|---|
সংক্রমণ | একবার ব্যবহৃত ডিসপোজেবল যন্ত্র ব্যবহার করুন |
রক্তশূন্যতা | প্রয়োজন হলে আগে রক্ত পরীক্ষা করুন |
অজ্ঞান হওয়া | হালকা খাবার খেয়ে হিজামা করা |
ভুল পয়েন্ট | অভিজ্ঞ হিজামা কারিগরের কাছে যান |
স্থায়ী দাগ | একই স্থানে বারবার হিজামা না করা |
📌 উপসংহার (এই অংশের)
হিজামা একটি অত্যন্ত উপকারী সুন্নাহভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলেও এর কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যা যথাযথ সতর্কতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়। যেমনটি রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও বলেছেন—
❝যে ব্যক্তি ভালোভাবে হিজামা জানে না, সে যেন তা না করে।❞
📚 (মুসনাদে আহমদ)
🧬 কাদের জন্য হিজামা উপকারী এবং কাদের জন্য এটি এড়িয়ে চলা উচিত?
হিজামা থেরাপি অনেক রোগে উপকারী হলেও এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা ও ব্যক্তির জন্য এটি অধিক কার্যকর আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। নিচে দুইটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
✅ যাঁদের জন্য হিজামা বিশেষভাবে উপকারী
১. মাইগ্রেন ও দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথায় আক্রান্তরা
হিজামা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং স্নায়ু প্রশমনে সাহায্য করে। NIH-এর একটি গবেষণা অনুসারে, কাপিং থেরাপি মাইগ্রেনের তীব্রতা ও ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে কার্যকর।
২. আর্থ্রাইটিস ও জয়েন্ট পেইন ভোগা ব্যক্তি
হিজামা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ব্যাকপেইন ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য এটি দারুণ উপকারী।
৩. ডায়াবেটিস রোগী (সতর্কতার সাথে)
বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক নিয়মে ও সময়মতো হিজামা করলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নত হতে পারে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে হিজামার আগে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে
সঠিক স্থানে হিজামা করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কারণ এটি শরীরের ব্লকড ব্লাড ফ্লো অপসারণ করে।
৫. চুলপড়া ও স্কিন প্রবলেমে (একনে, সোরিয়াসিস)
চুলপড়ার পেছনে ব্লাড সার্কুলেশন দুর্বলতা ও টক্সিন জমার ভূমিকা থাকে। স্ক্যাল্প হিজামা করলে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং উপকার পাওয়া যায়।
৬. অনিদ্রা ও মানসিক চাপজনিত সমস্যা
হিজামার মাধ্যমে শারীরিক প্রশান্তি আসে এবং ন্যাচারাল হরমোন রিলিজ হয়—যা ঘুম ও মানসিক স্বস্তি বাড়াতে সহায়ক।
❌ যাঁদের জন্য হিজামা এড়িয়ে চলা উচিত
🚫 ব্যক্তির অবস্থা | ❗ হিজামা না করার কারণ |
---|---|
গর্ভবতী নারী (প্রথম ৩ মাসে) | গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে |
অত্যন্ত দুর্বল বা রক্তস্বল্পতায় ভোগা | আরও দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকি |
রক্তপাতজনিত রোগ (Hemophilia) | রক্ত বন্ধ না হওয়ার সম্ভাবনা |
রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাওয়া ব্যক্তি | অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে |
জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাস ইনফেকশন চলাকালীন | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে |
স্কিন ইনফেকশন বা ফুসকুড়ি থাকলে | সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা |
📢 কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হিজামা খুব কম বয়সে না করানোই ভালো। ১০ বছর বয়সের পর শুধুমাত্র প্রয়োজন ও অনুমতিসাপেক্ষে করা যেতে পারে।
- বয়স্ক ব্যক্তি ও হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া হিজামা করানো উচিত নয়।
- অ্যাজমা, কিডনি সমস্যা ও লিভার ডিজঅর্ডারে হিজামা করার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
📌 সারসংক্ষেপে:
হিজামা সবার জন্য নয়। উপকার পেতে হলে সঠিক ব্যক্তি, সঠিক রোগ, এবং অভিজ্ঞ হিজামা থেরাপিস্ট নির্বাচন করতে হবে। যাঁদের শরীর দুর্বল, রক্তস্বল্পতা আছে বা রক্তজট সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, তাঁদের হিজামা না করাই উত্তম।
🕰️ হিজামা করার সঠিক নিয়ম ও সময়
হিজামা থেরাপি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করলে এর উপকারিতা যেমন কমে যায়, তেমনি ক্ষতির আশঙ্কাও বেড়ে যায়। ইসলামিক সূত্র এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভিত্তিতে হিজামা করার সময় ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো।
🕋 ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে হিজামা করার শ্রেষ্ঠ সময়
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসে উল্লেখ রয়েছে:
📜 "যদি তোমরা হিজামা করো, তাহলে তা করো চন্দ্র মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখে।"
— (সহীহ সুনান ইবনে মাজাহ 3487)
🗓️ চন্দ্র মাসে হিজামার জন্য উত্তম দিন:
- ১৭ তারিখ
- ১৯ তারিখ
- ২১ তারিখ
✅ এই দিনগুলোতে রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য ও টক্সিন রিলিজের মাত্রা অধিক হয় বলে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে তা কার্যকর বলে গণ্য করা হয়।
🌞 দিনের কোন সময়ে হিজামা করা ভালো?
- সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে (খালি পেটে বা হালকা নাশতার পরে) হিজামা সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
- রাতে হিজামা করা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তখন শরীর বিশ্রাম চায় এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
🧼 হিজামা করার নিয়ম (ধাপে ধাপে)
ধাপ | বিস্তারিত |
---|---|
✅ ১. রোগী মূল্যায়ন | রোগীর শারীরিক অবস্থা ও প্রয়োজন যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় |
🧴 ২. জীবাণুমুক্ত প্রস্তুতি | হিজামার কাপ, ব্লেড ও চামড়া জীবাণুমুক্ত করতে হয় |
📍 ৩. নির্দিষ্ট পয়েন্ট নির্বাচন | স্তিষ্ককে রিল্যাক্স করে |
🔥 ৪. কাপ বসানো | নেগেটিভ প্রেসার তৈরি করে কাপ বসিয়ে রাখা হয় ৩-৫ মিনিট |
ভ্রমণের ক্লান্তি | রোগ অনুযায়ী পিঠ, ঘাড়, কাঁধ, হাঁটু বা মাথা নির্বাচন করা হয় |
✂️ ৫. হালকা কাট দেয়া (Dry Needling) | খুব হালকা করে চামড়ায় সূক্ষ্ম কাট দেয়া হয় |
💉 ৬. রক্ত বের করে ফেলা | টক্সিক ব্লাড বের করে কাপ সরিয়ে ফেলা হয় |
🧴 ৭. এন্টিসেপ্টিক ও ব্যান্ডেজ | এলাকা জীবাণুমুক্ত করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয় |
⌛ ৮. বিশ্রাম ও হালকা খাবার | হিজামার পরপর বিশ্রাম ও পানীয় (যেমন খেজুর পানি) খাওয়া জরুরি |
⚠️ হিজামা করার আগে-পরে করণীয় ও বর্জনীয়
❗ হিজামার আগে:
- খালি পেটে থাকুন বা কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা কিছু খাবেন না
- ধূমপান ও কফি এড়িয়ে চলুন
- মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
✅ হিজামার পরে:
- ২৪ ঘণ্টা গোসল এড়িয়ে চলুন
- ১২ ঘণ্টা ভারি কাজ, ব্যায়াম বা যাত্রা এড়িয়ে চলুন
- হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খান
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন
🏥 আধুনিক চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে সতর্কতা
- হিজামার জন্য অবশ্যই লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ হিজামা থেরাপিস্ট নির্বাচন করুন
- একবার ব্যবহৃত কাপ ও ব্লেড পুনরায় ব্যবহার করবেন না (HIV, হেপাটাইটিসের ঝুঁকি থাকে)
- রক্ত পরীক্ষা ছাড়া ব্লাইন্ডলি হিজামা না করানো উচিত নয়
📌 সংক্ষেপে বলা যায়:
হিজামার উপকারিতা পেতে হলে ইসলামিক নিয়ম, সময়, এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিরাপদ পদ্ধতি মেনে তা করা অত্যন্ত জরুরি।
“হিজামার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অপকারিতা”
⚠️ হিজামার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও অপকারিতা
যেমনটি আগেই আলোচনা হয়েছে, হিজামা একটি প্রাচীন এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। বিশেষ করে যদি সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করা হয় বা অপ্রশিক্ষিত কারিগর দ্বারা হিজামা করা হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো:
১. ত্বকের লালচে দাগ ও ছোপ
হিজামার স্থানগুলোতে প্রায়ই লালচে দাগ বা ছোপ দেখা যায়, যা সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কমে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দাগ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
২. সংক্রমণের আশঙ্কা
অশুচি পরিবেশে বা স্টেরিল যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করলে সংক্রমণ হতে পারে, যা কখনো মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
৩. অতিরিক্ত রক্তপাত
হিজামায় কিছু পরিমাণ রক্ত বের হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু অনেক বেশি রক্তপাত হলে দুর্বলতা বা রক্তশূন্যতার সমস্যা হতে পারে।
৪. মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি
বিশেষ করে খালি পেটে হিজামা করলে মাথা ঘোরা, অবসাদ ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
৫. ত্বকে সংবেদনশীলতা ও জ্বালা
হিজামার স্থানগুলোতে অস্বস্তি, চুলকানি বা জ্বালা অনুভূত হতে পারে।
⚠️ সুরক্ষার জন্য করণীয়
- অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত হিজামা বিশেষজ্ঞের কাছেই হিজামা করানো উচিত।
- স্টেরাইল ও ডিসপোজেবল যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
- হিজামার আগে ও পরে ভালো বিশ্রাম ও সঠিক যত্ন নেওয়া উচিত।
- কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হিজামার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হিজামা সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি অপ্রশিক্ষিত বা অভিজ্ঞতা বিহীন কারিগরের মাধ্যমে করা হয়। হিজামার পর ত্বকে লালচে দাগ বা ছোপ দেখা যায়, যা বেশিরভাগ সময় স্বাভাবিক এবং কয়েক দিনের মধ্যে মুছে যায়। তবে কখনো কখনো ত্বকে জ্বালা, চুলকানি বা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকতে পারে যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঠিকমতো বজায় না রাখা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত রক্তপাত হলে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, যা বিশেষ করে খালি পেটে হিজামা করলে বেশি দেখা যায়।
তাই হিজামা করানোর সময় অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টের কাছে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার ব্যবহৃত ব্লেড ও কাপ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং হাইজিনের প্রতি যত্নবান হতে হবে। যারা রক্তস্বল্পতা, গর্ভাবস্থা বা গুরুতর রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে হিজামা করানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক নিয়ম ও সতর্কতা অবলম্বন করলে হিজামার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
মাথায় হিজামা করার উপকারিতা
মাথায় হিজামা করার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই উন্নত করে। প্রথমত, মাথায় হিজামা করলে স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। এটি নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়াও, মাথায় হিজামা করলে মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাইগ্রেন ও টেনশন হেডেক কমাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা পাওয়া যায়।
মাথায় হিজামা করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো মানসিক চাপ ও অবসাদ কমানো। হিজামার মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, যা মস্তিষ্ককে শান্ত ও ফোকাস রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে, যার ফলে অনিদ্রা ও স্ট্রেসজনিত সমস্যায় উপশম পাওয়া যায়। ফলে মাথায় হিজামা শরীর ও মনের জন্য একসাথে উপকারী একটি প্রাকৃতিক থেরাপি হিসেবে বিবেচিত হয়।
হিজামা কেন করা হয়
হিজামা মূলত শরীর থেকে বিষাক্ত রক্ত ও টক্সিন অপসারণের জন্য করা হয়, যাতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শরীরের নানা ব্যথা, প্রদাহ ও বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। ইসলামি চিকিৎসায় রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও হিজামা করাতেন এবং এটি সুন্নাহ হিসেবে অত্যন্ত প্রাধান্য পেয়েছে।
আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, হিজামা রক্তে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করে, স্নায়ু ও পেশীর চাপ কমায় এবং রক্তচাপ ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ফলে মাথাব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, জয়েন্ট পেইন, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেনসহ নানা শারীরিক অসুবিধা হ্রাস পায়। তাই শরীর সুস্থ রাখতে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে হিজামা করানো হয়।
হিজামা খরচ
হিজামার খরচ নির্ভর করে কোথায়, কোন ক্লিনিকে বা কারিগরের কাছে করাচ্ছেন, হিজামার ধরন (ড্রাই কাপে বা ওয়েট কাপে) এবং সেবার পরিমাণের উপর। সাধারণত বাংলাদেশে হিজামার খরচ সেশন প্রতি ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বড় শহরগুলোতে বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ক্লিনিকে খরচ তুলনামূলক বেশি হয়, যেখানে গ্রাম বা ছোট শহরে এটি কিছুটা কম হতে পারে। এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা ইসলামী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেও হিজামার খরচ ভিন্ন হতে পারে।
খরচের সাথে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা এবং কারিগরের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেওয়া উচিত, কারণ সস্তা হলেও অপ্রশিক্ষিত বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হিজামা করানো বিপজ্জনক হতে পারে। তাই ভালো সেবা নিতে একটু বেশি খরচ করা বাঞ্ছনীয়।
হিজামার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
হিজামার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মূলত এর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন ও শরীরের টক্সিন অপসারণের প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে। হিজামায় স্কিনের ওপর বিশেষ ধরনের কাপ বা গ্লাস বসিয়ে ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি করা হয়, যার ফলে ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোতে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায় এবং স্থানীয় রক্তসঞ্চালন উন্নত হয়। এই প্রক্রিয়ায় শরীরের নষ্ট বা বিষাক্ত রক্ত বাহির হয়, যা প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ শিশুদের আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবে জানতে হবে
অতিরিক্তভাবে, হিজামা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কারণ এটি লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে, যা ইমিউন সেলের উৎপাদন ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হিজামা করলে এন্ডোরফিন মুক্তি হয় যা ব্যথা উপশমে সহায়ক। এছাড়াও, রক্তের ঘনত্ব কমে যাওয়ার কারণে রক্ত সঞ্চালন মসৃণ হয়, যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যায় উপকারি।
সুতরাং, হিজামা শরীরের স্বাভাবিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন জটিলতার চিকিৎসায় বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কার্যকর একটি প্রাকৃতিক থেরাপি হিসেবে বিবেচিত হয়।
কতদিন পর পর হিজামা করা যায়
সাধারণত স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে হিজামা করার সময়কাল ভিন্ন হতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, সাধারণত ২ থেকে ৩ মাস অন্তর একবার হিজামা করানো ভালো। এটি শরীরকে পর্যাপ্ত সময় দেয় রক্তের ভারসাম্য পুনঃস্থাপন এবং শরীরের প্রাকৃতিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য।
যদি কেউ কোনো নির্দিষ্ট রোগ বা সমস্যা (যেমন মাইগ্রেন, জয়েন্ট পেইন ইত্যাদি) নিয়ে হিজামা করান, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সময়ের ব্যবধান কম বা বেশি হতে পারে। খুব বেশি ঘন ঘন হিজামা করানো ঠিক নয়, কারণ অতিরিক্ত রক্তপাত শরীর দুর্বল করতে পারে।
সুতরাং, হিজামা করার সময়কাল নির্ধারণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা হিজামা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর।
হিজামা থেরাপি কি
হিজামা থেরাপি হলো একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট অংশে বিশেষ কাপ বা গ্লাস বসিয়ে ভ্যাকুয়াম (নেগেটিভ প্রেসার) তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে ত্বকের নিচের রক্তনালীগুলোতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত রক্ত ও টক্সিন বের করে ফেলা হয়। এটি শরীরের প্রদাহ কমাতে, পেশী শিথিল করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ইসলামিক চিকিৎসা ও প্রাচীন বহু সংস্কৃতিতে হিজামাকে সুন্নাহ হিসেবে মানা হয়, কারণ এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অন্যতম প্রিয় থেরাপি ছিল। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও হিজামার কার্যকারিতা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষ করে ব্যথা উপশম, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে। তাই হিজামা থেরাপি এক ধরনের নিরাপদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়।
উপসংহার
হিজামা একটি প্রাচীন সুন্নাহভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা সঠিক নিয়মে ও সময়মতো করলে অসাধারণ উপকার দিতে পারে। তবে এর সাথে কিছু ঝুঁকিও জড়িত। সুতরাং নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হিজামা করানোই শ্রেয়।
FAQ (প্রশ্ন-উত্তর)
প্রশ্ন ১: হিজামা কত ঘনঘন করা উচিত?
উত্তর: সাধারণত ২ থেকে ৩ মাস অন্তর একবার হিজামা করানো ভালো। তবে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।
প্রশ্ন ২: হিজামা করলে কি রোগ আবার হতে পারে?
উত্তর: হিজামা রোগ নিরাময়ে সহায়ক, তবে রোগের ধরন ও জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে পুনরায় হতে পারে।
প্রশ্ন ৩: হিজামা কি সব বয়সীর জন্য নিরাপদ?
উত্তর: শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও কিছু নির্দিষ্ট রোগীর জন্য সতর্কতা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৪: হিজামার জন্য কি রক্ত পরীক্ষা দরকার?
উত্তর: হ্যাঁ, হিজামা করার আগে রক্তস্বল্পতা ও অন্যান্য রোগ থাকলে তা জানা জরুরি।
৫. শিংগা লাগানোর কি কি উপকারিতা রয়েছে?
শিংগা বা হিজামা করার মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত রক্ত বের হয়, রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং পেশী শিথিল হয়। এটি মাথাব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতেও উপকারি।
৬. হিজামা করলে কি অনিদ্রা দূর হয়?
হ্যাঁ, হিজামা করলে শরীর ও মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, যা মানসিক চাপ ও স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এর ফলে ঘুমের মান উন্নত হয় এবং অনিদ্রার সমস্যায় উপশম পাওয়া যায়।
৭. হিজামা করলে কি রক্ত পরিশুদ্ধ হয়?
হিজামার মাধ্যমে শরীর থেকে পুরানো ও বিষাক্ত রক্ত বের হয়, যা রক্তের গুণগত মান বাড়ায় এবং শরীরকে পরিষ্কার ও সুস্থ রাখে। তাই বলা যায়, হিজামা রক্ত পরিশুদ্ধ করার একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
৮. কাপিং থেরাপির উপকারিতা কি কি?
কাপিং থেরাপি (হিজামা) ব্যথা উপশম, প্রদাহ কমানো, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি, মানসিক চাপ ও অনিদ্রা দূরীকরণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি বিভিন্ন পেশী ও জয়েন্টের সমস্যা ও ত্বকের রোগে উপকারী।
৯. শিঙ্গা লাগানো কি জায়েজ?
হ্যাঁ, ইসলামের সুন্নাহ অনুসারে শিঙ্গা বা হিজামা করা জায়েজ এবং এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অন্যতম প্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রেখে করা উচিত।
১০. রক্তমোক্ষণ কি?
রক্তমোক্ষণ হলো শরীর থেকে খারাপ বা বিষাক্ত রক্ত বের করার চিকিৎসা পদ্ধতি। হিজামাও একটি রক্তমোক্ষণ পদ্ধতি, যেখানে বিশেষভাবে ক্ষুদ্র কাট দিয়ে রক্ত ঝরানো হয় শরীর সুস্থ রাখার জন্য।
১১. শিঙ্গা শব্দের অর্থ কী?
‘শিঙ্গা’ শব্দের অর্থ হলো ‘ছিদ্র করা’ বা ‘কাটা’। এটি শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে ছোট ছোট ছিদ্র করে রক্ত বের করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা হিজামার অংশ।
১২. হিজামা কাপের দাম কত?
বাংলাদেশে হিজামা কাপের দাম সাধারণত ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকে, যা কাপের ধরন ও মানের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
১৩. হিজমা করা কি সুন্নত?
হ্যাঁ, হিজামা করা ইসলামে সুন্নত এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও নিয়মিত হিজামা করাতেন। এটি সুস্থ থাকার জন্য একটি প্রাকৃতিক ও বরকতময় চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।
১৪. হিজামা কিভাবে কাজ করে?
হিজামা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে কাপ বসিয়ে ভ্যাকুয়াম তৈরি করে ক্ষতিকর বা বিষাক্ত রক্ত ও টক্সিন বের করে শরীরকে পরিশুদ্ধ করে। এই ভ্যাকুয়ামের ফলে রক্তনালী প্রসারিত হয়, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং পেশী ও স্নায়ু শিথিল হয়। হালকা ছিদ্রের মাধ্যমে শরীর থেকে পুরানো রক্ত বের করে প্রদাহ ও ব্যথা কমানো হয়, পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
১৫. Cupping কি?
Cupping হলো হিজামার ইংরেজি নাম, যা একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। এতে শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় গ্লাস বা কাপ বসিয়ে ভ্যাকুয়াম তৈরি করা হয়, যাতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত রক্ত ও টক্সিন বের হয়। এটি ব্যথা উপশম, প্রদাহ কমানো ও শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
Tags:
#হিজামা #Hijama #CuppingTherapy #IslamicMedicine #AlternativeTherapy #HealthTips #HijamaBenefits #HijamaRisks
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url