রচনা: আত্মনির্ভরশীলতা - দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে

রচনাঃ সময়ের মূল্য - সময়ের সদ্ব্যবহারআত্মনির্ভরশীলতা বা দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে ব্যাপারে আজকে একটি রচনা লিখতে চলেছি। আত্মনির্ভর্শীলতা বা স্বনির্ভরতা গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্য একটি বিষয়। মূলত নিজে নির্ভশীল বা সুখী মানুষ হতে গেলে দুঃখ বা কষ্ট করার বিনিময়ে এটি অর্জন করতে হবে। 
আত্মনির্ভরশীলতা-বা-দুঃখ-বিনা-সুখ-লাভ-হয়-কি-মহীতে-রচনা
প্রিয় পাঠক, আপনি সুখ লাভ করতে চাইলে দুঃখ করবেন না তাহলে চলবে না। পৃথিবীতে যেকেউ সাফল্যের জায়গায় এসেছে পরিশ্রম, ধৈর্য এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে। চলুন নিম্নে আত্মনির্ভরতা সম্পর্কে রচনা অবহিত হই।

পেজ সূচীপত্রঃ

ভূমিকাঃ

আত্মনির্ভরশীলতা মানুষের জীবনে আত্মবিশ্বাস, আত্মশক্তি এবং আত্মমর্যতার পরিচায়ক।ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং জাতীয় উন্নতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের কাজ নিজে সম্পাদন এবং অন্যের উপর নির্ভর না করে জীবনের পথ চলায় আত্মনির্ভরশীলতার মূল মন্ত্র। এটি মানুষকে সাফল্যের সোপানে পৌঁছে দেয় এবং জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। 

আরো পড়ুনঃ সৎ চরিত্র বা চরিত্রই সম্পদ সম্পর্কে রচনা বা প্রবন্ধ

পরনির্ভরশীলতা জীবনে কেবল দুর্বলতা ও ব্যর্থতা এনে দেয়। তাই আত্মনির্ভরশীলতার চর্চার মানুষের ক্রম উন্নতির পথে প্রথম পদক্ষেপ।

আত্মনির্ভরশীলতার প্রয়োজনীয়তা

আত্মনির্ভরশীলতা মানুষের জীবনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট। ্য এর মাধ্যমে মানুষ নিজেকে জীবনের প্রতিকূল অবস্থা সঙ্গে মানিয়ে নিতে। শিখে আত্মনির্ভরশীলতা না থাকলে জীবন প্রতি পদে বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নতি এবং সফলতার জন্য নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতির ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য, কারণ এটি মানুষকে স্বাধীনভাবে কাজ করার শক্তি ও সাহস যোগায়। 

আত্মনির্ভরশীলতার উপায়

আত্মনির্ভরশীল হতে হলে মানুষকে শরীরের সবথেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার চর্চা করতে হয়। ছাত্র জীবনে নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস করে তোলার পাশাপাশি দৃঢ় মনোবল, আগ্রহ, অধ্যাবসায় এবং উদ্যমী হওয়া প্রয়োজন। হাত গুটিয়ে বসে থেকে কিছু পাওয়ার আশা করলে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায় না এবং এক প্রকারের অসম্ভবই বটে। আত্মবিশ্বাস ও নিজ চেষ্টার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতার পথেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা অর্জন সম্ভব।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আত্মনির্ভরশীলতা অনন্য উদাহরণ

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আত্মনির্ভরশীলতার উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি নিজ হাতে সাংসারিক কাজ ও রান্না করে সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা জানাতেন এবং সব সময় পরীক্ষায় প্রথম হতেন। বৃত্তি দিয়ে জীবিকা ও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে তিনি কখনো কারো কাছে সাহায্য চান নাই, বরং দু হাতে দান করতেন। তার জীবন প্রমাণ করে, আত্মনির্ভরশীলতা মানুষকে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। 

আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের প্রক্রিয়া

আত্মনির্ভরশীল হতে হলে, এটি মানুষকে শিশুকাল হতেই সঠিক শিক্ষা গ্রহণ ও নিজেকে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। মুগল সম্রাট আকবরের জীবনের উদাহরণে দেখা যায়, তিনি খুব অল্প বয়সে পিতাকে হারিয়ে, একজনের সহিত মিলে বহু যুদ্ধ পরিচালনা করে অনেক কিছু শিখেছিলেন। এই অভিজ্ঞতায় তাকে এক মহান শাসক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিল। তাই, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য শুধুমাত্র শিক্ষা নয় বাস্তব অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন।

আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা এবং তার সমাধান

আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অলসতা ও জড়তা। অনেকেই আরাম প্রিয় জীবনের পথে হেটে অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা তাদের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। যারা সহজেই আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুদের সাহায্য নেন, তাদের জন্য আত্মনির্ভরশীল হওয়া কঠিন হয়ে পড়া। তবে প্রতিবন্ধকতা গুলো কাটিয়ে উঠতে হলে প্রয়োজন ইচ্ছা শক্তি, আগ্রহ এবং নিষ্ঠা। আর শুধু তখনই মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজের পথ চলা শুরু করতে পারে।

স্বাবলম্বী মনীষীদের অবদান যুগে যুগে আত্মনির্ভরশীলতায় অনুপ্রেরণার উৎস

সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, রাজনীতি এবং চিকিৎসার মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগে যুগে খ্যাতিমান মনীষীরা যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, তা সম্ভব হয়েছে আত্মনির্ভরশীলতা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে। তাদের জীবনে যে কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের গল্প রয়েছে, তা বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। 

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, কবি নজরুল ইসলাম, আইনস্টাইন প্রমুখ মনীষীগণ আত্মনির্ভরশীলতা এবং নিজেদের ওপর আস্থা রাখার মাধ্যমে বিশ্বকে নতুন দিগন্ত দেখিয়ে। তাদের কর্মতৎপরতা এবং আত্মবিশ্বাসী প্রমাণ করে যে, আত্মনির্ভরশীলতা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয় বরং সমাজ ও জাতি কল্যাণের জন্য অত্যন্ত ভূমিকা রাখে।

আত্মনির্ভরশীল হওয়ার রাস্তাঃ আত্মশক্তির বিকাশ

আত্মনির্ভরশীল হওয়া এমন একটি গুণ, যা মানুষকে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে অর্জন করতে হয়। ছোটবেলা থেকেই যদি মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখে, তাহলে ভবিষ্যতে তার আত্মবিশ্বাসের শক্তি বৃদ্ধি পায়। যারা সব সময় অন্যের সাহায্যে আশায় থাকে, তারা কখনোই পূর্ণ মানুষ হতে পারে না। তবে যারা নিজের পরিশ্রম ও চেষ্টায় নিজের পথ তৈরি করে তারা সহজেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে।আত্মনির্ভরশীল মানুষ আত্মবিশ্বাসী এবং সে নিজের শক্তি ও জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে কিছু বড় অর্জন করতে সক্ষম হয়।

পর নির্ভরশীলতার পরিণতিঃ জাতীয় দেশের উন্নতির বিপত্তি

স্বনির্ভরশীলতা দেশের উন্নতির মূল মন্ত্র। একটি দেশ যদি অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে তার প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলো আজ সফলতা অর্জন করেছে কারণ তারা নিজেদের আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়েছে। অপরদিকে এশিয়ার কিছু উন্নয়নশীল দেশ এখনো উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি যার ফলে তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। যে দেশ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে না সে কখনো উন্নতি করতে পারে না। পরনির্ভরশীলতা কেবল ব্যক্তি নয় দেশ এবং জাতির জন্য ও এক গভীর দুঃখের কারণ।

ছাত্র জীবনে আত্মনির্ভরশীলতা সাফল্যের প্রথম স্টেপ

ছাত্র জীবন হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের শক্তিশালী ক্ষেত্র। এই সময়েই একজন ছাত্রের মধ্যে স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় যা তার ভবিষ্যতে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আত্মনির্ভরশীল হওয়া শুধু পাঠ্য বইয়ের পরিসীমা সীমাবদ্ধ নয় এটি জীবনের প্রতিটি দিকেই দক্ষতা এবং মানসিক শক্তির উন্নয়ন ঘটায়। ছাত্র জীবনে যখন নিজের প্রচেষ্টায় কিছু অর্জন করার অনুশীলন করা হয় তখন জীবনের পরবর্তী সময়ে এসে শক্তি আত্মবিশ্বাস এবং সাফল্য নিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

কর্মের শক্তি সৌভাগ্যের উন্মেষ

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সুপ্ত শক্তি সম্ভাবনা থাকে যা তাকে উপযুক্ত পরিবেশে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। যখন মানুষ তার কর্মের প্রতি মনোযোগী হয় তখন তার জীবনের সফলতা, আত্মবিশ্বাস এবং সুখ এসে ভিঁড় জমায়। কর্মের মাধ্যমেই মানুষ তার ভাগ্য বদলে ফেলতে পারে, আর যখন সে কর্ম বিমুখ হয় তখন জীবনের অর্থহীন হয়ে পড়ে। 

আরো পড়ুনঃ স্বদেশ প্রেম রচনা

কর্মই মানুষের প্রকৃত সৌভাগ্যের চাবিকাঠি যা তাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে।

উপসংহার

আত্মনির্ভরশীলতা মানব জীবনের সাফল্যের মূল মানদন্ড। যখন মানুষ নিজের শক্তি এবং দক্ষতার উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলে তখন সে জীবনের সত্যিকারের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করতে সক্ষম হয়। দুঃখ এবং বাধা জীবনের অনিবার্য অংশ হলেও আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সেগুলি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজের পথ নিজে তৈরি করায় জীবনের প্রকৃত সুখের উৎস।

লেখকের শেষ মন্তব্য

আত্মনির্ভরশীলতা বা দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে সম্পর্কে একটি গুছানো বাংলা রচনা লিখেছি। প্রিয় পাঠক, যারা নিজের শক্তি এবং নিজের ভরসার ওপর ভর করে এগিয়ে যায় তারা জীবনে সফলতাকে খুব কাছ থেকে দেখতে পায়। তাই আপনিও সফল হতে চাইলে আত্মনির্ভরশীল হোন এবং দুঃখ ও কষ্টের বিনিময়ে সুখ পাখিকে ধরার চেষ্টা করুন। আরো এমন ব্লগ পেতে সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url