ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনী জেনে নিন কয়েক সেকেন্ডে

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্বইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে অনেক সময় অনেকরই জানতে আগ্রহী প্রকাশ করে, কারণ ইমাম বুখারী মুসলিম উম্মাহর হাদিস গ্রহণের জন্য কেন্দ্রবিন্দু এবং উৎস। তিনাকে হাদিস শাস্ত্রে ইমাম হিসাবেও খ্যাত এবং ছোট্র বয়সেই কুরআনের হাফিজ হয়ে যান। 

ইমাম-বুখারী-সংক্ষিপ্ত-জীবনী

তিনি অত্যন্ত পরহেযগার একজন ব্যক্তি ছিলেন। তার জন্ম, মৃত্য, মাজার, বিবাহ, বই এবং ছবি নিয়ে আজকে কথা বলব এই ব্লগটিতে।

পেজ সূচীপত্রঃ

ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনী

>ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনী এখানে কয়েকটি লাইনে লিখব পাঠকদের মনে রাখার উদ্দেশ্যে। কারণ, ছোট এবং সংক্ষিপ্ত কথা ও গল্প বেশি মনে থাকবে। আর ইমাম বুখারীর জীবনী ছাত্র-ছাত্রী, ইমাম প্রিয় মানুষেরা এবং শিক্ষকদের ও মনে রাখা সহজ করার জন্যই আমাদের এই লিখা। 

আরো পড়ুনঃ অধ্যাবসায় রচনা - শ্রমের মর্যাদা রচনা সম্পর্কে পড়ুন

তো চলুন ছোট ও সংক্ষিপ্ত পরিসরে কয়েক লাইনে ইমাম বুখারীর বায়োগ্রাফী বা জীবনী বিবরণ দিতে প্রচেষ্ট হই নিম্নালোকে। 

ভূমিকাঃ ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ আলাইহি ছিলেন ইসলামী জ্ঞান ও হাদিস শাস্ত্রে অপ্রতিদ্বন্দী একজন মনীষী। তার স্মৃতিশক্তি জ্ঞানের গভীরতা এবং চারিত্রিক দেবতা তাকে ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোহাদ্দেস হিসেবে লিখে রেখেছে। আল্লার কিতাব কুরআনের পরে তার সংকলিত সহীহুল বুখারী মুসলিম জাতির জন্য সর্বাধিক এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থ বা হাদিস শাস্ত্র।

নাম, জন্ম, বংশ পরিচয় এবং অন্যান্য বিষয়াদী

ইমাম বুখারীর পূর্ণ নামঃ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম ইবনে মুহিরা আল বুখারী আল জু'ফী আল বারদিযবাহ।

জন্মঃ এই মহান মনীষী ১৩ শাওয়াল মোতাবেক ১৯৪ হিজরীতে রাতের বেলায় বুখারা নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

উপাধীঃ তাঁকে আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস বা হাদিস শাস্ত্রের নেতা বলা হয়।

শৈশব ও জ্ঞানার্জন

ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ আলাই তাঁর শৈশবকালেই পিতাকে হারিয়ে এতিম হন এবং তার মা তাকে বড় করেন বা প্রতিপালন করেন।

  • তিনি ১০ বছর বয়সে হাদিস শাস্ত্রের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখান।
  • ১৬ বছর বয়সে তিনি হাদিসের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পড়া শেষ করেন।
  • তার স্মৃতিশক্তি এত প্রখর ছিল যে তিনি কোন বইয়ের বিষয়বস্তু একবার দেখলেই তা মুখস্থ করে ফেলতে পারতেন।
হাদিস সংগ্রহ ও ভ্রমণ

তিনি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে অনেক দেশ ভ্রমন করেন যেমনঃ
  • মক্কা, -মদিনা, ইরাক, হিজাজ, সিরিয়া এবং মিশর।
  • ১৮ বছর বয়সে হজ্জে গিয়ে হাদিস সংকলন বা সংগ্রহ করা শুরু করেন।
  • এক হাজারের অধিক মুহাদ্দিস এর কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেন।
সহীহ বুখারী সংকলনের কারণ

ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি প্রথমবারের মতো শুধু সহি হাদিস নিয়ে একটি সংকলন তৈরি করেন।
  1. এই কাজের অনুপ্রেরণা পান তার প্রিয় ওস্তাদ ইসহাক ইবনে রাহাওয়াই এর কাছ থেকে।
  2. তিনি ১৬ বছর পরিশ্রম করে প্রায় ছয় লক্ষ হাদিস থেকে ৭,২৭৫ টি হাদিস নির্বাচন করেন।
  3. এই গ্রন্থের বিশেষত্ব হলো প্রতিটি হাদিস সনদসহ উপস্থাপন করা হয়েছে।
স্মৃতিশক্তি ও হাদিস চর্চার প্রখরতা

ইমাম বুখারী স্মৃতিশক্তি ছিল অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর।
  • তিনি নিজেই বলেছেন আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদিস এবং দুই লক্ষ যয়ীফ হাদিস মুখস্থ রয়েছে।
  • বাগদাদ শহরে তার স্মৃতিশক্তি পরীক্ষা করে তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
উস্তাদ এবং ছাত্রগণ

তার ওস্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন,
  • ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইসহাক ইবনে রাহাওয়াই প্রভৃতি।
ছাত্রদের মধ্যে স্বনামধন্য এবং অন্যতম ছিলেন,
  • ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজি এবং ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম।
তিনি একবারে ৭০ হাজার ছাত্রকে সহীহ বুখারী পাঠ করিয়েছেন বলে জানা যায়।

উপসংহারঃ প্রিয় পাঠক, ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ আলাই ছিলেন ইসলামের এমন একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার জ্ঞানের আলো এবং মহিমা ও কেয়ামত অবধি মুসলিম উম্মাহ কে বলে রাস্তা প্রদর্শন করবে।হাদিসের একটি সংকলনই নয় বরং এটি একটি জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের জ্ঞান চর্চায় তার অবদান অনন্য, অতুলনীয় এবং অনস্বীকার্য। আমরা সবাই তাঁর জন্য দুয়া করে নিজে লাভবান হই, কারণ একজন মুসলিমের জন্য দুয়া করলে প্রথমে আল্লাহ দুয়াকারীকে কবুল করে।

ইমাম বুখারীর জন্ম মৃত্য

আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ঈসমাঈল ইবনে ইব্রাহীম ইবনে মুগীরা আল বুখারীর জন্ম আমরা প্রথমে বলেছি, আর তা হলো ১৯৪ হিজরীর ১৩ শাওয়ালের রজনীতে এ ধরায় তাঁর শুভাগমন ঘটে। আর এই মহান আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদিস বা তথা হাদিস শাস্ত্রে সেনাপতির মৃত্য হয়েছে ২৫৬ হিজরীর ১লা শাওয়াল, ঈদের দিন রাতে।

ইমাম বুখারীর জন্ম কত হিজরীতে

ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ আলাইহি .১৯৪ হিজরির ১৩ শাওয়াল, শুক্রবার বা জুমার দিনে  উজবিকিস্তানের বুখারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ছিল মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম। তিনি কুরআন ও হাদিস শিক্ষার প্রতি অল্প বয়স থেকেই মনোযোগী ছিলেন। পরে তিনি ইসলামের ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ হাদিস সংকলক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

ইমাম বুখারীর জীবনী

ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনীতে আমরা ইতিমধ্যে উপরে কয়েক লাইনে সংক্ষিপ্তভাবে ব্যক্ত করেছি। আবারও একিবারে কয়েক্টি পয়েন্টে লিখছি।
  • তাঁর মূল নামঃ মুহাম্মাদ
  • পিতার নামঃ ইসমাঈল
  • দাদার নামঃ ইব্রাহীম
  • কুনিয়াত বা উপনামঃ আবু আব্দিল্লাহ
  • উপাধীঃ আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস বা হাদিস শাস্ত্রের সেনাপতি
  • কুরআনের হাফেজঃ ১০ বছর বয়সে
  • প্রায় সব হাদিসের সমাপনঃ ১৬ বছর বয়সে।
  • জন্মঃ ১৩ শাওয়াল, ১৯৪ হিজরীতে।
  • মৃত্যঃ ১ লা শাওয়াল ২৫৬ হিজরীতে।

ইমাম বুখারীর জীবনী বই

ইমাম বুখারীর জীবনী বই হলো এমন কিছু বই যেগুলোতে তাঁর জীবনী সুন্দর ও স্পষ্টভাষায় লিখা রয়েছে। এমনি কয়েক্টি বইয়ের নাম নিম্নে পয়েন্ট আউট করছি।  
  1. ইমাম খাতিবে বাগদাদী খ্যাত তার লিখা তারিখে বাগদাদ
  2. ইমাম আয যাহাবীর লিখা সিয়ারু আলামিন নুবালা
  3. ইমাম আল মিজির লিখা তাহযীব আল কামাল
  4. ইমাম আয যাহাবীর লিখা আরেকটি বই আল ইবার
  5. ইমাম হাজার আল আসক্বলানীর লিখা তাহযীব আত তাহযীব ইত্যাদি।

ইমাম বুখারীর বিবাহ

ইমাম বুখারীর বিবাহ সম্পর্কে এখানে হালকা টাচ করছি। প্রিয় পাঠক, ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ আলাইহি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলেমদের মধ্যে তার ব্যাপারে তার বিবাহ নিয়ে বিভিন্ন মতামত বা দ্বিমত রয়েছে। অধিকাংশ সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি জীবনে কখনো বিয়েই করেননি। তার পূর্ণ সময় ও মনোযোগ জ্ঞানের অন্বেষণ, সংগ্রহ, সংকলন এবং সংরক্ষণে নিবেদন করেছিলেন। এটি তার বৈবাহিক জীবনের অভাব সত্ত্বেও ইসলামী জ্ঞান চর্চায় অসাধারণ অবদানের প্রতিফলন ও বটে।

ইমাম বুখারীর ছবি

ইমাম বুখারীর ছবি সম্পর্কে এখানে লিখছি। তার কোন ছবি বা ফটোগ্রাফি বা চিত্র নেই। কারণ ইসলাম ধর্মে মানুষের ছবি আঁকাকে নির উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষভাবে প্রথম যুগের মুসলিমদের মধ্যে একটি কঠোরভাবে নিষেধ করা হতো। তাই, ইমাম বুখারীর আসল চেহারা কেমন ছিল তা নিয়ে কোন প্রমাণ বা ছবি পাওয়া যায় না। তবে অনেক জায়গায় কল্পনা নির্ভর প্রতিকী কিছু ছবি তৈরি করা হয়েছে, যা ঐতিহাসিকভাবে সঠিক নয় এবং ঠিক ও নয়।

ইমাম বুখারীর মাজার

ইমাম বুখারীর মাজার কোথায় অবস্থিত বিষয়টি এই জায়গায় আলোকপাত করছি। ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ আলাই এর মাজার বর্তমান উজবিকিস্তানের সমরকন্দের কাছে খার্তাঙ্ক নামক স্থানে অবস্থিত। এটি মুসলিম বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য এটি একটি মহব্বের জায়গা। 

আরো পড়ুনঃ কে এই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ - মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জীবন বৃত্তান্ত

মাজারটি একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে এবং বর্তমানে এটি একটি সুন্দর মসজিদ ও কমপ্লেক্সের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ এর মাজার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসেন।

ইমাম বুখারীর জীবনী ও হাদিস শাস্ত্রে তার অবদান

ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহ আলাইহির জীবনী ও হাদিস ছাত্রের তার অবদান আমরা ইতিমধ্যেকার লিখনীর মধ্যে ব্যক্ত করতে সচেষ্ট হয়েছি। আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি ইসলামে অবিশ্বাস্ত্রে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। বিশেষ করে তার সংকলিত গ্রন্থ সহীহ আল বুখারী হাদিস সাহিত্যের সর্বোত্তম সংকলন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছে মুসলিম উম্মাহর কাছে। 

তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় হাদিস সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই এবং সংরক্ষণে ব্যয় করেছেন। তিনি প্রায় ৬ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই করে ৭,২৭৫টি হাদিস সংকলন করেছেন। তার জীবনীতে দেখা যায় যে, তার সততা, নিষ্ঠা এবং গভীর জ্ঞানের জন্য তিনি মুসলিম জাতির কাছে এক আলোকিত ব্যক্তিত্ব হয়ে রয়েছেন। হাদিস শাস্ত্রের গবেষণায় তিনি এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্বের নাম।

লেখকের শেষ মন্তব্য

ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে এই ব্লগ বা আর্টিকেলে লিখতে প্রচেষ্টা করেছি। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহ আলাইহি ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি হাদিস শাস্ত্রকে সুসংগঠিত ও বিশ্বস্ত রূপে কায়েম করেছেন। তার অমর কীর্তি সহীহ আল বুখারী কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। 

তাঁর জীবন ও কর্ম আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন, আমীন। আরো এরকম ব্লগ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন, ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url